গতবছর আজকের দিনে একজনের লাশ এসেছিল, চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে। আমার বন্ধুর লাশ। কেউ জানে না তার কথা, তার নাম "তন্ময় দে দ্বীপ" হ্যাঁ সে আমার বন্ধু।
আমরা একসাথে বড় হয়েছি, একই স্কুলে লেখাপড়া করেছি। অনেক ভালো ছাত্র সে, দুর্দান্ত রেজাল্ট করত। S.S.C-তে অসম্ভব ভালো রেজাল্ট করেছিল, হ্যাঁ A+। কিন্তু যত সমস্যা H.S.C-তে,
আমার এখনো মনে আছে, রেজাল্টের আগের দিন তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। চিন্তায় যখন হাতের আঙুল সব খেয়ে সাফ করছিলাম তখন সে এসে বলেছিল, "চিন্তার কিছু নেই, দেখিস রেজাল্ট ভালো হবে।" কিন্তু রেজাল্টের পর তাকে পাওয়া গেল চট্টগ্রাম মেডিকেলে। বিষ খেয়েছে, ফেল করেছে তাই। তাকে আর ফেরত আনা যায়নি। তার শেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস ছিল, “ অনেক দূরে যাচ্ছি, ক্ষমা করো। “
তার বাবা-মা মানুষকে মুখ কিভাবে দেখাবে সে ভয়েই ছেলেটা চলে গেছে। আত্মহত্যা করার আগে ছেলেটা একবার ভেবেও দেখেনি। যে ছেলে A+ পাওয়ার জন্যে এতটা Desparate সে ছেলে কি কখনো অ-মেধাবী হতে পারে? অসম্ভব! শেষ পর্যন্ত সে চলেই গেল। হ্যাঁ, সে চলে গেছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। চলে গেছে, তথাকথিত A+ কে উপেক্ষা করে। সে চলে গেছে A+ না পাওয়ার গ্লানি মাথায় নিয়ে। সে চলে গেছে…
কিন্তু আমরা পারি না, তার মতো সাহস নেই তো! আমরা বেঁচে আছি, এই শিক্ষা ব্যবস্থায়। বেঁচে আছি A+ পাওয়ার আশায়। মা বাবা বলে দিয়েছেন, রেজাল্ট খারাপ করলে আমাকে আর মুখ দেখাবি না। তাই আমরা লেগে আছি, ভালো রেজাল্টের আশায়।
তুই চলে গিয়ে ভালোই করেছিস। তোর চলে যাওয়ায় বন্ধু মহলে একটা আসন শুন্য হয়ে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু তোর আর আমাদের মতো এই A+ এর শহরে থাকতে হবে না। থাকতে হবে না, এই প্রতিযোগীতার পৃথিবীতে। আচ্ছা, সেখানে কি A+ না পেলে পেছনের সারিতে বসিয়ে রাখে? খুব জানতে ইচ্ছে করে রে!
বন্ধু, সামনে আবার সেই H.S.C- ফলাফল, আরো কিছু আশাহত পাখি হয়ত তোর সাথে দেখা করবে;
তুই তাদের খেয়াল রাখিস বন্ধু, খুউব খেয়াল রাখিস..