আমরা বাঙালীরা বসবাস করি স্ট্যাটাস সমাজে। যেখানে নিজের স্ট্যাটাস ধরে রাখার জন্যেই সবকিছু! পাশের বাসার ভাবী আমেরিকা থেকে ফুলদানি আনিয়েছেন তো আমার ইউরোপ থেকে কার্পেট আনা বাধ্যতামূলক। পাশের বাসায় ৩০ ইঞ্চি এলসিডি থাকলে আমার ঘরে ৪০ ইঞ্চি থাকা বাধ্যতামূলক। আমরা বেড়ে উঠছি প্রতিযোগীতার বাজারে। একসময় এমনটা ছিল না।
আমরা বেড়ে উঠেছি ৯০ এর দশকে। তখন জীবনটা অন্যরকম ছিল। ছিল না ফেসবুক, টিভি এসেছে অনেক পরে। বিটিভি দেখেই বড় হয়েছি। কার্টুন, আলিফ লায়লা অন্যরকম বিনোদন ছিল। মীনা কার্টুন দেখে সময় কাটিয়েছি। শুক্রবারে রাজ্জাক-সাবানার সিনেমাই দেখতাম। অনেক ঘর মিলে ফ্রিজ ছিল একটা। ফ্রিজ কিনলে মিষ্টি খাওয়ানো বাধ্যতামূলক ছিল। ১ টাকায় বস্তা আইসক্রিম পাওয়া যেত। খেয়ে ঠোঁটের রঙ পাল্টে ফেলতে পারতাম।
মোবাইল তখনও আসে নি। ল্যান্ডফোনের দিন ছিল। অনেক ঘর মিলে একটা ল্যান্ডফোন। প্রিয়জনের কন্ঠ শোনার জন্যে কত অপেক্ষা।
মাঝে মাঝে প্রতিবেশীরা মিলে পিকনিকের আয়োজন হতো। মজার রান্না।
বাবা দেশের বাইরে থাকেন। এখনো মনে আছে, মা রাত জেগে চিঠি লিখতেন। অনেক মাস পর একটা চিঠি আসতো। সে চিঠিতে অনেক কিছুই লেখা থাকতো কখনো পড়ে দেখার সুযোগ পাইনি। এখন বুঝি, ঐ চিঠিতে ছিল আবেগ ভালোবাসা, পরিবার।
অসাধারণ জীবন ছিল, গর্ব করে বলতে পারি আমার শৈশব দুর্দান্ত কেটেছে।
এখন সবাই কেমন যেন, সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায়। অন্যের দিকে তাকিয়ে দেখার সময় নেই। পাশের বাসার মানুষটার চেহারাও দেখা যায় না দশ বছর পাশাপাশি বাস করেও। সমাজে বাস করেও অসামাজিক হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। আমি এ শতক চাই নি।
আমি চাই ২ টাকার বিরাট সিঙ্গারা, আর ১ টাকায় কোন আইসক্রিম। আমি চাই সুপারম্যান আর শক্তিমানকে আমার বিপদে সাহায্য করার জন্যে। আমি চাই উন্মুক্ত খোলা মাঠ। আমি এই সো কোল্ড সোশ্যালিটি চাইনি;
আমি ফিরে পেতে চাই ল্যান্ডফোনের দিনগুলো...