জনতা পার্টির সাবেক সভাপতি, বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা সুব্রামাণিয়ম স্বামী বাংলাদেশের কাছে এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড দাবি করেছেন!
তার বক্তব্য হলো, ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছিল ভারত ভূখণ্ড। তাই বাংলাদেশ থেকে এদেশে যেসব মুসলমান অনুপ্রবেশ করেছে তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে বাংলাদেশকে। অন্যথায় এদের সংস্থাপনের জন্য খুলনা থেকে সিলেট অবধি সমান্তরাল রেখা টেনে এই জমি ভারতের হাতে ফেরত দিক বাংলাদেশ।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাজনের কারণে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ভারত থেকে পাকিস্তানে (পূর্ব ও পশ্চিম) এবং পাকিস্তান (পূর্ব ও পশ্চিম) থেকে ভারতে অভিবাসিত হয়। পাঞ্জাব ও বঙ্গ প্রদেশ দুটি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হওয়ায় এই দুই প্রদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ অভিবাসিত হয়। হিন্দু ও শিখরা ভারতে আর মুসলমানরা পাকিস্তানে (পূর্ব ও পশ্চিম) অভিবাসিত হয়। অভিবাসন উভয় দেশ থেকে হওয়ায় ঐসব অভিবাসীদের এক দেশ থেকে আরেক দেশে ফিরিয়ে নেয়ার কোনো প্রশ্ন উঠে নি।
ভারতীয় অভিবাসী পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। এর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ। পৃথিবীর এমন অনেক দেশ আছে যেখানে যুগে যুগে ভারতীয়রা একচেটিয়া অভিবাসিত হয়েছে কিন্তু সেসব দেশের মানুষ ভারতে অভিবাসিত হয় নি। সেসব দেশ কিন্তু এমন দাবি করে না। স্বামীর মত তারাও যদি ভারতীয় অভিবাসীদের ফিরিয়ে নিতে বলে অন্যথায় ভারতকে ভূখন্ড ছেড়ে দিতে বলে তবে বিপত্তি ভারতেরই।
স্বামীর এই দাবি ইতিহাস সিদ্দ নয় বরং সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কারণ রাজনীতিবিদ-অর্থনীতিবিদ সুব্রামাণিয়ম স্বামী আদর্শিকভাবে একনিষ্ঠ হিন্দুত্ববাদী। তার এই দাবি তার ভৌগলিক জ্ঞানকেও প্রশ্নবিদ্দ করে কারণ খুলনা থেকে সিলেট অবধি সমান্তরাল রেখায় বাংলাদেশের ভূখণ্ড এক-তৃতীয়াংশ নয়, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।
সুব্রামাণিয়ম স্বামীর এ দাবি অবান্তর, অমূলক ও ভিত্তিহীন। বাংলাদেশ তার কথামত ভূমি দিয়ে দিবে না। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর চরম আঘাত এটি। অথচ সরকার প্রতিবাদ করার কোনো চেষ্টাও করেনি। বিষয়টি অত্যন্ত হতাশাজনক।
এসব দৃষ্টতার প্রতিবাদ না করলে সামনে যে এর চেয়েও জঘন্য কিছু ঘটবেনা তার কি গ্যারান্টি আছে?