“মা দিবস” -এ মাকে নিয়ে অনেকেই অনেক লেখা লিখেছিলেন, আমি কিছু লিখি নি। কিন্তু আজ কেন জানি লিখতে ইচ্ছে করছে... গল্প না, বাস্তবতা... নিজের মাকে নিয়ে লেখা...
আমি এসএসসি পর্যন্ত বান্দরবান পড়ালেখা করেছি। বাবা সরকারি চাকরি করে, আর পোস্টিং সেখানেই ছিল। এসএসসিতে আল্লাহর রহমতে মোটামোটি ভাল রেজাল্ট করার পর একা কুমিল্লা চলে আসি আর ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হই। কুমিল্লায় পরিচিত তেমন কেউ ছিল না, পড়াশোনা চালানোর জন্যে হোস্টেলে ঢুকতে হয়েছিল।
যায় হোক, কলেজে ভর্তি হবার মাস দুয়েক পর বাড়িতে (বান্দরবান) গিয়েছিলাম। তার আগে কখনো এতদিন পরিবারের বাইরে থাকতে হয় নি। তো সেবার সপ্তাহ খানেকের মত বেড়ানোর পর কুমিল্লায় ফিরে আসার সময় কিছু টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। গাড়ি ভাড়া, হোস্টেল ভাড়া, প্রাইভেট খরচসহ সব মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার টাকার মত দরকার ছিল। এমনিতেই তখন আমাদের আর্থিক অবস্থা কিছুটা খারাপ ছিল, আর আম্মার হাতে সাংসারিক খরচ ছাড়া বাড়তি কিছুই ছিল না। কারো থেকে যে ধার করবেন, সেই মানসিকতাও ছিল না ওনার... আমি নিজেও বুঝতে পারছিলাম না যে টাকা কিভাবে ম্যানেজ হবে!
কিন্তু টাকা ঠিকই ম্যানেজ হয়ে গিয়েছিল। আম্মা নিজের বিয়ের সময়ে পাওয়া কানের দোল জোড়া বিক্রি করে দিয়েছিল। ভাবতেও কেমন লাগে... আমার জন্যে নিজের বিয়ের স্মৃতি, ২৩ বছরের জমিয়ে রাখা স্মৃতি বিক্রি করে দিয়েছিলেন! আর ক্লাশ ফাইভে পড়াকালীন সময় আমার জন্যে বৃত্তি পরীক্ষায় গাইড কিনতে গিয়ে নিজের হাতের আংটিটাও বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
ইনিই আমার মা! যিনি গত ২৩ বছর ধরে আমাদের জন্যে নিজের প্রায় সব শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে আসছেন। জানি, মায়ের ঋন কোনদিন শোধ করতে পারব না, তবে খুব ইচ্ছে আছে, চাকরির পর প্রথম যেদিন বেতন পাব, সেদিন আম্মার জন্যে এক জোড়া কানের দোল আর একটা আংটি কিনে নিব...