ওয়ালেট খুলেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। অপ্রয়োজনীয় কিছু চিরকুট আর টিকিটের সাথে দশ টাকার একটা নোট ভেতরে লেপ্টে আছে। ঈদের তৃতীয় দিনের সম্বল এটুকুই। এছাড়া আর কোন নোট পাওয়া গেল না। অথচ বারো-তের বছরের ছেড়া গেঞ্জি পড়া ছেলেটা হাত পেতে দিব্যি তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চাইলেই দুইটা ঝারি দিয়ে ছেলেটাকে চোখের সামনে থেকে বিদেয় করা যায়, কিন্তু বুকের ভেতর থেকে কোন দম পাওয়া যাচ্ছে না। অগত্যা সিগেরেট খাবার আশা বাদ দিয়ে দশ টাকার নোটটা ছেলেটার হাতে দিয়ে বললাম, “যাহ, ভাগ এবার।”
.
ভাগল না... বরং আগের মতই দিব্যি দাঁড়িয়ে থেকে ফোকলা দাঁত বের করে মুখে সামান্য হাসির রেখা টেনে কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলল, “আর চল্লিশটা টাকা দিতারবেননি বাই?”
.
আবদার শুনে বিষম খেলাম। বলে কি এই ছেলে? ১০ টাকা দিলাম, এখন আরো চল্লিশ টাকা চায়! এ আবার কোন টাইপের ভিক্ষুক! নেশা-টেশা করে নাকি আবার! খটকা লাগতেই জিজ্ঞেস করলাম,
-চল্লিশ টাকা মানে? এই না দশ টাকা দিলাম?
-হবাই, দিছেন তো। আর চল্লিশটা টাকা লাগব।
-চল্লিশ টাকা দিয়া কি করবি?
-ছোড বইনের লাইগ্যা নোয়া কাপড় কিনুম।
-এখন কি কাপড় কিনবি? ইদ তো দুইদিন আগেই শেষ!
-বইনের কাপড়ের লাইগ্যা রোজা থেইক্যা টাকা জমাইতেছি। টাকা কুলাই নাই দেইক্কা ঈদের সময় কিনতে পারি নাই। এহন বাকি টাকা জমাইয়া কাপড় কিইন্যা বাড়িত নিয়া যামু।
.
ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। মনে হয় সত্য কথায় বলছে। তারপরেও ভাল করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি। অবশ্য আমি সত্য-মিথ্যা ধরে কিইবা করব। এমুহুর্তে আমার কাছে এক টাকাও নাই যে ছেলেটার হাতে দিব। নিজেই আছি কষ্টের ভেতর। মাস শেষ হতে আরো ১২ দিন বাকি। কারো কাছ থেকে ধার না করলে ভিক্ষা করতে হবে। নিজেরই যখন এই অবস্থা, তখন ছেলেটাকে দিব কি! অথচ ছেলেটা বোকার মত পরম আশ্বস্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।