somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই

২৪ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার শহর,
শৈশবের শহর,
ঠিক যেন শহর নয়, আবার গ্রামও নয়,
স্নেহ করে লোকেরা একে মফস্বলও ডাকে,
আমি সেই যে প্রাইমারির পর ছেড়ে চলে এসেছিলাম, ফিরেছি উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যাকে মনের টানে শৈশবের সূত্রে নিজের বলে দাবি করি, পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে নয় কভু।
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যেখানে এখনও পল্লী বিদ্যুতের দপ্তরটি নিজ অবস্থানে অনড় আছে, 
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যেখানে একটা অংশে ক্ষুদ্র পরিসরে ফসলি জমিও ছিলো, বর্তমানে সেই পরিসর গৃহয়ান প্রকল্পের নিমিত্তে বিলুপ্ত, 
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যেখানে একটা ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও মাটির ঘর ছিলো, 
দুপুরে সেখান থেকে লাকড়ি পোড়া গন্ধ আর মাছ তরকারির গন্ধ ভেসে আসতো,
এতো বছর পর গিয়ে দেখি, কোথায় বা সেই মাটির ঘর, কোথায় সেই লাকড়ি,
দালান উঠেছে সেথায়, দালানের দেয়ালের এক কোনায় ঝোলানো শীততাপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র, জানিনা এর পিছে আছে কোন মন্ত্র! 
শৈশবের শহর থেকে মুহুর্তের জন্য ফিরে যাই এক ঘটনায়, 
একদা এক মসজিদ, দেখেছিলাম, আগাগোড়া মাটিতে তৈরী, মাস তিনেক পর দেখি, কই গেলো সেই মাটির ঘর! দালান উঠেছে চারিপাশে, একটা শীততাপনিয়ন্ত্রক যন্ত্রও সযত্নে ঝুলছে দেয়ালে, 
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যেখানে বর্তমান বিলুপ্ত ফসলের জমি, আমাদের খেলার মাঠ ছিলো ফসলের মৌসুম না হলে, 
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যেখানে প্রতিদিন রাশেদ মামার দোকানে ৫ টাকার বনরুটি অমৃত লাগতো,
মোল্লার হোটেলের পুরি আর শুকুর মিয়ার চায়ের দোকানের চিনি দেওয়া দুধের মালাই,
ইশতিয়াকের দোকানের নানরুটি,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যেখানে একট ঈদগাহ ছিলো যাকে ঘিরে স্থানীয় বাজার ছিলো, 
মোশতাকের দোকানে গ্রোসারি কিনতে গেলেই আমার হাতে চকোলেট ধরাইয়া দিতো,
একদা আব্বুর পকেটে ৩০০ টাকাই ছিলো সিলেট যাওয়ার খরচ হিসেবে, মোশতাক মামা চকোলেটটা আমার হাতে দিয়ে টাকা নেন নি, আব্বুর হাতটা খালি শক্ত করে ধরেছিলো,
সেই বাকি চকোলেটের মূল্য কি আব্বু পরিশোধ করেছিলো! হয়তো, 
এখন নিজের টাকায় যেই চকোলেট পছন্দ, সেটা কিনতে পারি, কিন্ত, মোশতাক মামার জোর করে দেওয়া চকোলেট, সে তো আলাদা,
রাশেদ মামার সেই দোকানে এখন রাউটার বিক্রি হয়, মোল্লা মারা গেছে, ইশতিয়াকের দোকানের জায়গাটায় বিল্ডিং উঠেছে, 
শুকুর মিয়ার চায়ের জায়গায় বসেছে ফলের দোকান, মোশতাক মামা দোকান বেচে দিয়ে কই যে গেছে কোনও ইয়ত্তা নেই,
ঈদগাহটা জায়গা মতোই আছে, আছে বাজারটাও, দোকানের সংখ্যাটা একটু বেড়েছে, বহুবার যাতায়াত করা বন্ধন লাইব্রেরি নামের স্টেশনারি দোকানটি এখনো আছে,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
এসে দেখি এখানে সেখানে দোকান আর দোকান, 
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যে বাসায় আমরা থাকতাম, তার ছাদে ঢালাই দিয়ে রেলিং করা হয়েছে, অপুর্বের মা যেদিন আত্মহত্যা করে সেদিনের পর থেকে আমার আর ছাদে যাওয়া হয় নি, 
প্রতিবেশী বান্ধু সাহেবের বাসাটা একই রকম আছে, কয়েকটা শীততাপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্র খালি যুক্ত হয়েছে,
রহমান সাহেবের বাসাটা একতলা থেকে চারতলা হয়েছে, 
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
এলাকার একতলা টাইলস মসজিদ তিনতলা হয়েছে, 
ইমাম সাহেবের জুলফিতে পাক ধরেছে, 
মসজিদের সামনে ভদ্র পোশাক পড়া এক লোক হাসিমুখে টাকা চাইতো, আমরা সুখি মানুষ ডাকতাম, তাকে মনে মনে খুজে পাইনি, পাওয়ার কথাও নয় অবশ্যই, 
শৈশবে টাকা না থাকায় আমি জুমার নামাজের পর ভিক্ষুকদের জিলিপির ভাগ দিতাম, আচ্ছা! মসজিদে কি এখনো জিলিপি দেয়? 
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই, 
আমার বাসায় সাব্লেট থাকা পরিবারের পিচ্চি মেয়েটি আজ অনেম বড় হয়ে গেছে,  বিয়ে হলো বলে শুনলাম, 
ও হো, সেই পিচ্চিকালের ভালোলাগার প্রিয়দর্শিনী আয়েশার কথা! তার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম, শুনি তারও বিয়ে হয়ে গেছে,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
আমার স্কুলটি ঠিক জায়গামতোই আছে, খালি শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের চুলগুলো হয়েছে পাতলা ধূসর,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
কিন্তু কোথায় সেই শহর, কোথায় আমার সেই মফস্বল, কোথায় আমার সেই ছেলেবেলা!  
সবই আমার স্মৃতিতে, আমার কল্পনায়, আমার নস্টালজিয়ায়, 
শহরেরা ভাঙে, গড়ে, আবার গড়ে, কিন্তু শহরের ভিন্ন রূপ গুলো অমর হয়ে থাকে নস্টালজিয়ায়। 



ছবি: ইনটারনেট


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:৫৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আসেন জুলাই/ আগস্টের মিনি পোস্ট মোর্টেম করি।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২৪





গল্প শুনেন বলি-

আমরা পড়ালেখা গুছগাছ কইরে চাকরীতে ঢুকছি।হঠাৎ বন্ধু গো ইমেইলের গ্রুপে মেসেজ (নাম ধরেন রফিক), রফিক যে পাড়ায় (রেড লাইট এরিয়া) যাইতো সেখানের একজন সার্ভিস প্রোভাইডাররে বিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলন পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:১৬

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলনের পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লালবদর নীলা ইস্রাফিল এখন বলছেন ও স্বীকার করছেন যে—
জুলাইয়ের সবকিছুই ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন।
মুগ্ধের হত্যাও সেই ডিজাইনের অংশ।

অভিনন্দন।
এই বোধোদয় পেতে দেড় বছর লাগলো?

আমরা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×