somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তনু তোমার কাছে ক্ষমা চাইবার অধিকারও আমাদের নেই

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ তনু নামের মেয়েটি তাঁর ফেইসবুক পেইজে লিখেছিল, ‘ ভালো আছি, ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ।’ আচ্ছা তনু কি বুঝতে পেরেছিল যে ওর দিন ঘনিয়ে আসছে..একদল উন্মত্ত মানুষরুপী পশুর নিষ্পেষণের আগাম বার্তা কি তনু অনুধাবন করতে পেরেছিল! একদল নরপশু কি অবলীলায় একটি ফুটফুটে মেয়ের স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার করে দিল, বিদায় নেয়ার আগে কি অসহ্য যন্ত্রণা, কতটা ভয়, কতটা কষ্ট, কতটা ঘৃণার আগুন, কতটা পশুত্ব, কতটা নারকীয়তা, কতটা অব্যক্ত অভিমানকে সাথে পরিচিত হয়ে এই মেয়েটি পৃথিবী ছাড়তে বাধ্য হলো। অথচ কয়েক মাস আগে ও একটা বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গিয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে তখন চলে গেলেই বোধহয় ভালো হতো তনুর জন্য। তাহলে এভাবে পশুত্বের কাছে হার মানতে হতো না তনুকে। তনুর টাইম লাইনে চোখ বোলাতে গিয়ে চোখের জল আটকাতে পারলাম না। কি অসম্ভব রুচিশীল একটা মেয়ে। ও বই পড়তে ভালোবাসত, বেড়াতে ভালোবাসত, রান্না করতে ভালোবাসত। ও সবচেয়ে ভালোবাসত ওর মাকে। কতটা ছেলেমানুষি থাকলে একটা মেয়ে তার মাকে নিয়ে সন্ধ্যায় বেড়াতে বের হয়ে তার মাকে বলতে পারে, ‘ আমার সোনা মা, চল না একটু দোলনায় দোল খেয়ে আসি। আমার দোল খেতে খুব ভালো লাগে।’ মা মেয়েটির ছেলেমানুষি দেখেন হার হাসেন। শেষমেষ ঠিকই দোলনায় দোল খাইয়ে তারপর মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসেন। মেয়েটির গিটার বাজিয়ে গান গাওয়ার খুব শখ। বাবার কাছে আবদার করে, ‘বাবা আমাকে একটা গিটার কিনে দাও না।’ বাবা অনেক কষ্টে গিটার কিনে দেন, তনুর মুখের হাসি দেখে কে! তনু এখন গিটার বাজিয়ে গান গায়, বন্ধুদের চমকে দেয়। তনু এই বয়সে বুঝে যায়, বাবার আর্থিক অনটন আছে। আর তাই সে ছোট ছোট কয়েকটি ছেলে-মেয়েক পড়ায়। অসম্ভব যত্ন করে পড়ায় পিচ্চিগুলোকে। এতটায় কেয়ার করে যে, একেকটা পিচ্চির জন্মদিন আসে আর তনু গিফট নিয়ে হাজির হয়। কেক কাটে, সেলফি তোলে, পিচ্চিগুলোর হাসি দেখে কে? তনু কবিতা পড়তে ভালোবাসে, মাঝে মাঝে কবিতাও লেখে।আজ তনু অনেক খুশি কারণ বাসায় নতুন আরেকটা টিভি এসেছে। তনু এখন থেকে ইচ্ছে মতো চ্যানেল চেঞ্জ করতে পারবে। তনুর কাছে তনুর বাবা হলেন পৃথিবীর বেস্ট বাবা। তনুর মনে হয়তো একটু কাঁচা রং লেগেছিল। তাই তনু শুধু কুমার শানুর এই গানটি শোনে, ‘ ধীরে ধীরে সে মেরি জিন্দেগি মে আনা, ধীরে ধীরে সে মেরি দিলকো চুরা না।’ তনু অসম্ভব ঘর সাজাতে ভালোবাসে। তনুর কল্পনার ঘরটি হবে অন্যরকম। তাই সে নেট থেকে দেখে নেয় বিভিন্ন ধরণের বনসাইয়ের কালেকশন। হায়রে তনু! তোমার ঘর সাজানো আর হলো না্।ঘর সাজানো আর হবে কি করে! ওর ক্ষত-বিক্ষত নিথর দেহটি পড়ে আছে মাঠের পাশে। তনুর দেহের সাথে লেপটে থাকা ছেড়া জামা, অব্যক্ত যন্ত্রনা যেন জোর করে আমাদের কর্ণ কুহরে প্রবেশ করে বলতে চাইছে…হে তরুণ সমাজ, তোমরা জেগে ওঠো, প্রতিবাদ করো, রুখে দাঁড়াও। আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে কিন্তু এই বাংলায় আমার মতো কোটি কোটি তনু আছে..আজ তোমরা না জাগলে এই সমাজটা পশুদের অধিকারে চলে যাবে তখন এই বাংলায় কেউ নিরাপদ থাকবে না। আচ্ছা আমরা যারা বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি তারা কি তনুর জন্য প্রতিবাদ করতে পারি না, হাতে হাত রেখে দ্রোহের আগুন জ্বালার শপথ নিতে পারি না। আমরা কি এই দেশটাকে নারীর জন্য নিরপদ রাখতে আমাদের হাতকে মুষ্টিবদ্ধ করতে পারি না। আজ সময় এসেছে রুখে দাঁড়ানোর। আর আজ আমরা যদি চুপ থাকি তাহলে আরো এরকম হাজারো তনু রাস্তায় পড়ে থাকবে ছিন্ন কাপড়ে, নিথর নিস্পদ দেহ হয়ে। সে হতে পারে আমার আপনার বোন তখন নত মস্তকে টপটপ করে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×