টিভিতে দেখলাম এক হালি ইলিশ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হলো। আরেক মাছ ব্যবসায়ী জোরে জোরে বলছে, তাজা ইলিশ, ফুরফুরা ইলিশ, এক হালি মাত্র ৫০ হাজার টাকা, কিনে নিন, বাড়ি নিয়ে যান বাড়িতে তাজা ইলিশে সেই বৈশাখি উৎসব হবে। আমাদের কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা হাজার বছর ধরে চলে আসছে। আমাদের পূর্ব প্রজন্মের সবাই কম-বেশি কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশরা আসার পর নতুন শিক্ষা পদ্ধতি চালু হওয়ার পর সমাজে অনেক ধরণের পেশার উদ্ভব হয়। আর এর ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষা বিস্তারের সাথে সাথে এখন দেশে একটা বড় অংশের শিক্ষিত মানুষ চাকরিজীবী। মজার ব্যাপার হলো এই চাকরিজীবীদের সবারই আগের প্রজন্ম কিংবা তার আগের প্রজন্ম কৃষক ছিলেন। এখন কৃষক পরিচয় দিলে কিংবা বাপ-দাদা কৃষক ছিলেন এটা ভাবতেই অনেকের শরীরে ঘাম চলে আসে। আর তাই বাপ-দাদার কৃষকের উত্তরসূরী তকমা ঝেড়ে ফেলতে ঢাকার অভিজাত শ্রেনির কিছু লোক গ্রামের কৃষকদের মশকরা করে চালু করলেন পান্তা-ইলিশ উৎসব। আরে গ্রামের কৃষক কি সাধে পান্তা খেত? ভোরবেলা উঠে মাঠে যাওয়া লাগে, মাঠ থেকে আবার বাড়িতে খেতে আসলে অনেক সময় নষ্ট হয়। আর পান্তা খাওয়া মানুষগুলো ছিলেন কৃষি শ্রমিক। মালিকের হাতে অত সময় নেই যে একজন কৃষি শ্রমিককে বাড়িতে সকালের নাস্তা খেতে যাওয়ার জন্য সময় দিবে। তাই অগত্যা মানুষগুলো ভোরে পান্তার সাতে পেয়াজ, কাঁচা মরিচ আর আলুভর্তা দিয়ে উদরপূর্তি সেরে চলে যেতেন মাঠে শ্রম দিতে। ইলিশ ছিল তাদের কাছে এক দূরের বস্তু। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তারা আবার সকালে সাধ করে ইলিশের সাথে খাবে পান্তা! আর এই অভিজাত শ্রেণির গা ঝাড়া দিয়ে কৃষক পরিরচয় মুছে ফেলতে সাথে যোগ হলো বেনিয়া মোবাইল কোম্পানি আর মিডিয়াগুলো। ব্যাস মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের অন্তরে গ্রোথিত হয়ে গেল, পহেলা বৈশাখ মানে পান্তা ইলিশ। এটাই আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




