আজ কবিগুরুর জন্মদিন। মা দিবসের উৎসবের আবহে সোস্যাল মিডিয়াতে কবিগুরুর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। কবিগুরুর জন্মদিনে অর্ঘ্য নিবেদন করতে গিয়ে ভেবে পাচ্ছি না কিভাবে কি লিখব। হঠাৎ মনে হলো কবিগুরুর গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গান আমাদেরকে অনেকটাই ঋদ্ধ করেছে। এমনকি কবির ছিন্নপত্রাবলী পড়লে জীবনটাকে অন্যভাবে উপভোগ করতে ইচ্ছে করে। তবে আজ কবির জন্মদিনে আমার ইচ্ছে করছে ইস কবির মতো যদি জীবনটাকে উপভোগ করতে পারতাম! শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের প্রত্যেকটা মুহুর্তকে অন্যভাবে রাঙিয়ে নিতে পেরেছিলেন বলেই তিনি এতটা সৃষ্টিশীল ছিলেন। সেই কোলকাতার জোড়াসাকোর ঠাকুর বাড়ির ছাদে সন্ধ্যাবেলা কাদম্বরী দেবী রুপোর থালায় নানা পদের খাবার সাজিয়ে নিয়ে অপেক্ষা করতেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিহারী লাল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ শিল্পরসিক মানুষগুলো একত্রে খোলা আকাশের নীচে বসে শিল্প সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতেন। কবি নিজের কবিতায় সুর বসাতেন, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর বাজনা তুলতেন, কাদম্বরী দেবী সমঝদারের মতো মাঝে মাঝে সমালোচনা করতেন। এভাবে কেটে যেত রাতের অনেকটা সময়। এরপর যখন গঙ্গার ধারে মোরান সাহেবের বাড়িতে গিয়ে উঠলেন তখন মাঝে মধ্যেই রবি ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্র নাথ ঠাকুর আর কাদম্বরী দেবী মিলে রাতে নৌকায় করে ভেসে বেড়াতেন মাঝ গঙ্গায়। ওপরে খোলা আকাশে নক্ষত্ররা মিটিমিটি জ্বলছে আর ভরা গঙ্গার মাঝে নৌকায় করে ভেসে চলেছেন তিন অভিযাত্রী। কবি গান গাইছেন, কবিতা আবৃত্তি করছেন। আবার ইচ্ছে হলে দুই ভাই নদীতে নেমে সাঁতার কাটছেন। কি এক অনবদ্য জীবন। কবি যখন পূর্ববঙ্গে আসলেন জমিদারির কাজে, তখন কবি তার বজরায় অনেকটা সময় কাটাতেন। বিশেষত রাতের বেলা বজরায় করে কবি ভেসে চলেছেন পদ্মা নদীতে কিংবা তার শাখা নদীতে। আকাশে ভরা পূর্ণিমার চাঁদ, ফাগুনের ঝিরঝিরে বাতাস, জোনাকির মিটিমিটি জ্বলতে থাকা, ছলাৎ ছলাৎ শব্দে নৌকার এগিয়ে চলা, জলের দিকে তাকিয়ে পূর্ণিমার চাঁদকে অবলোকন করা..সত্যি অপার্থিব..তাই আজ বসে বসে ভাবছি কবির মতো করে জীবনের অন্তত একটা দিন যদি কাটাতে পারতাম তাহলে সত্যি জীবনের নতুন একটা দিক উন্মোচন করতে পারতাম। এই আক্ষেপকে সঙ্গে নিয়ে কবিকে নিবেদন করি জন্মদিনের অর্ঘ্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




