আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ আছে যারা প্রয়োজনের সময় তাদের হাতটি বাড়িয়ে দেন, তাদের কায়িক শ্রম দিয়ে আমাদেরকে অনেক উপকার করেন। অথচ এই মানুষগুলোকে আমরা নূন্যতম সম্মান দিই না, তাদের কাজকে স্বীকৃতি দিই না। তাদেরকে ছোট করে ট্রিট করাতেই আমাদের যত আনন্দ। এই যে আপনি আমি রিকশায় চড়ি। একেবারে ভর দুপুরে রাস্তায় বের হলাম। চারদিকে কোনো যানবাহন নেই। অথচ আমাকে যাওয়াই লাগবে। চারদিকে তাকাচ্ছি হঠাৎ এক রিকশাওয়ালা এসে হাজির। এই মানুষটি সেই প্রয়োজেনর মুহুর্তে আমার পাশে দেবদূতের মতো হাজির হলেন। ভর দুপুরে মানুষটি ঘর্মাক্ত শরীরে আমাকে নিয়ে টেনে চলেছেন। একটু ধীরে রিকশা চালালে আমি ধমক দিয়ে উঠি এই মামা এত ধীরে চালান কেন? দ্রুত চালাতে পারেন না? হয়তো মানুষটি অভুক্ত তখনো তার পেটে দানপানি পড়েনি, তার শরীর আর সাড়া দিচ্ছে না। তারপরও রিকশার চাকা ঘোরাতে হবে কারণ রিকশার চাকা না ঘুরলে তার সংসারের চাকাটাও ঘুরবে না। হয়তো ঘরে বউটা অসুস্থ্য, ছেলেটি কেমন বখাটে হয়ে গেছে, কথা শোনে না, নেশা করে। বাবার কাছে সবসময় টাকা চায়, দিতে না পারলে ঝগড়াঝাটি করে। বিবাহযোগ্য মেয়েটি ঘরে পড়ে আছে। যৌতুকের টাকা যোগাড় করা যাচ্ছে না বলে বিয়ে দিতে পারছেন না। তাই শরীর না কুলালেও সাধ্যের বাইরে গিয়ে রিকশার প্যাডেল ঘোরাতে থাকে। এভাবে ভর দুপুরে আমাকে কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছে দেয়ার পর আমার কাছে ১৫ টাকার জায়গায় ২০ টাকা চাইলে আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে মানুষটাকে যাচ্ছেতাই ভাবে গালাগালি শুরু করি। এরপর সে যদি প্রতিউত্তর দেয় তখন আমার সব শক্তি নিয়ে মানুষটাকে মারতে উদ্যত হই। পারলে বুড়ো মানুষটার গালে একটা চড় ও বসিয়ে দিই। অথচ এই আমি সকালে হয়তো কোনো অফিসে গিয়ে বড় কর্তাকে কয়েক হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে আমার কাজ উদ্ধার করে এসেছি। শপিং মলে গিয়ে ব্রান্ডের শার্ট কিনে বিদেশী কোম্পানিকে আরো বড় হওয়ার রসদ যুগিয়ে এসেছি। বাসার রান্না বাদ দিয়ে কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে চাইনিজ খেয়ে একটা বড় অংকের টাকা খরচ করে এসেছি। অথবা কোনো দোকানে কেনাকাটা করতে গিয়ে দরদাম করে জিনিস কিনেও পাঁচশত টাকা ঠকে এসেছি। এই আর্থিক ক্ষতিগুলো আমাদেরকে ততটা কষ্ট দেয় না কারণ যারা সুকৌশলে আমার পকেট কেটেছে ঐ মানুষগুলো ছেড়া জামা পরিহিত না। ওরা ভদ্রলোক তাই ওরা পকেট কাটলেও আমার রাগ চড়ে না। আমার রাগ চড়ে তখনই যখন একজন রিকশাওয়ালা ১৫ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা চান্। এই মানুষটি আমাকে প্রয়োজনের সময় যে সেবা দিচ্ছেন তার জন্য তাকে আমরা নূন্যতম একটা ধন্যবাদও দিই না অথচ সেই মুহুর্তে ঐ মানুষটি না থাকলে আমার কষ্টের সীমা থাকত না।আমি নিজে গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে দোকানে যেতে পারতাম না, বাজার করে জিনিসগুলো নিয়ে সহজে বাসায় ফিরতে পরতাম না ইত্যাদি ইত্যাদি। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘ একটা মানুষকে চেনার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সেই মানুষটি তার নিচের স্তরের মানুষের সাথে কেমন আচরণ করে।’ আমরা স্যুটেড-বুটেড হয়ে রাস্তায় বরে হয়ে কুলি, রিকশাওয়ালা, অটোওয়ালা কিংবা দারোয়ানের সাথে যে ব্যবহার করি তাতেই বোঝা যায় আমরা মানুষ হিসেবে কেমন।
ঐ মানুষগুলোকে অপমান করেই আমাদের যত তৃপ্তি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ
গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।
... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…
১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট
মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন