somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি নস্টালজিক, নিয়ন্ত্রিত হ্যালুসিনেশন।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন বাড়ী থেকে সেন্ট্রাল স্কয়ার টি-স্টেশন অব্দি চিরচেনা হাঁটার পথটা হঠাৎই নূতন এক হ্যালুসিনেশন তৈরী করেছিল সৌমিত্রের মাঝে। কল্পনার গা বেয়ে উঠে আসা অনুভূতির আঁচ বোস্টনের বেয়াড়া শীতের সেই কন্‌কনে ঠান্ডার রাতে বেশ উপভোগ করছিলেন তিনি। অনুভূতির রকমটা ছিল চতু্র্মাত্রিক - একই সাথে হাঁটা যাচ্ছিল আট হাজার মাইল ব্যবধানের দুইটি ভিন্ন গন্তব্যে - এক. কেম্ব্রিজের বাড়ী থেকে সেন্ট্রাল স্কয়ার আর দুই. পল্টনের বাসা থেকে সংবাদের মোড়। এখানকার অ্যাপার্টমেন্ট কম্‌প্লেক্সের প্রধান ফটক যেন ওখানকার কলোনির সেই লাল গেট, অ্যাপার্টমেন্টের ফ্রন্ট ডেস্কের মেয়েটি যেন কলোনির দারোয়ান হাশেম, তারপর নোভার্টিসের উঁচু দালান যেন হুজুরের মুদির দোকান, এখানকার আলোকিত ফুটপাথ ঠিক যেন ওখানকার অন্ধকার গলি, এই রাস্তায় জমে থাকা বরফের ছোট ছোট স্তুপ আর ঐ রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গৃহস্হালির আবর্জনা, এখানে বরফগলা কাদা-জল যেন ওখানে বৃষ্টির পরের কাদা-পানি, এই রাস্তায় ব্লকের ইন্টারসেকশন আর ওই রাস্তায় গলির মোড়, এখানে পথের ধারে পুরনো অভিজাত বাড়ী আর ওখানেও পথের পাশে চল্লিশ নম্বর, এখানে মডার্ণ কিছু স্হাপনা আর ওখানেও গলির মোড়ে গজিয়ে ওঠা নব্য অ্যাপার্টমেন্ট, এখানে দেয়ালে আঁকাবুকি ওখানেও দেয়াল লিখন, এখানকার পথের সাদা-কালো-খয়েরী মানুষগুলো যেন ওখানকার পথে দেখা চেনা-মুখচেনা-অচেনা মুখগুলো । হাঁটতে হাঁটতে এখানে সৌমিত্র পৌঁছে যায় ট্রেন স্টেশনে, আর ওখানে ঠিক তখনই চলে আসে সংবাদের মোড়। বাহ্‌ কি অদ্ভুত টাইমিং! এখানে রাস্তা পাড় হয়ে ঢুকতে হবে পাতাল রেলের প্লাটফর্মে, আর ওখানে মোড় ঘুড়লেই শুভ্রা হোটেল। পিচ্ছিল সিঁড়ি দিয়ে পাতালে নামার সময় সিঁড়ির হাতল ধরে সাবধানে পা ফেলে সৌমিত্র, একদম মাথার পিছনে হাত রেখে আয়েশী ভংগীতে হোটেলে ঢোকার মত করে। আরে কি আশ্চর্য - মাটির নীচের প্লাটফর্মের আরামদায়ক উষ্ণতা ঠিক যেন হোটেলের সেই ধোঁয়া-গন্ধ মাখা ভ্যাপসা আরামের পরিবেশ! তারপর এদিকে প্লাটফর্মের পাথরের বেন্চিতে বসে দেয়ালে গা এলিয়ে দেয়া, আর ওদিকে হোটেলের চেয়ারে পাশ ফিরে বসে দেয়ালে ঢেলান দিয়ে পাশের চেয়ারে পা তুলে দেয়া। "মামু কি লাগবো?" জবাবে "চা আর পুরি, লগে ঝোল দিস্‌" বলে অপেক্ষা, আর এখানেও ট্রেনের জন্য বসে থাকা। বসে বসে প্লাটফর্মের মানুষগুলোকে পর্যবেক্ষণ, আর ওখানেও আশেপাশের মানুষগুলোকে দেখা। ট্রেন বা চা আসতে আসতে আবার কল্পনায় ডুবে যাওয়া... প্লাটফর্মে অপেক্ষমাণ সৌমিত্র ভাবছিল এডোবি ইলাস্ট্রেটর সফট্‌ওয়্যারটির কথা। এতক্ষণ সৌমিত্র যা হ্যালুসিনেট করল তা হলো দু'টি সমান্তরাল জীবন - দু'টি আলাদা ইমেজ, দু'টি ভিন্ন লেয়ার; কিন্তু নিশ্চিতভাবে লেয়ার দু'টির কর্ণার পয়েন্টগুলো হুবহু এক। এডোবি দিয়ে লেয়ার দু'টো জোড়া দেয়া যায়, ছবি দু'টোকে বানিয়ে ফেলা যায় সমান্তরাল থেকে সমতল, তৈরী করা যায় তৃতীয় এক ছবি যা ঐ দুইটি ছবির সবকিছুই ধারণ করে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এমনই এক এডোবির অভাব বোধ করে সৌমিত্র, যে এডোবি মানুষের সমান্তরাল উপলব্ধিগুলোকে জোড়া দিতে পারবে - হাজার হাজার মাইল ব্যবধানের দু'টি ভিন্ন জায়গার অভিন্ন জীবনবোধকে একসাথে গেঁথে ফেলতে পারবে! পাতাল রেলের প্লাটফর্মে বসে প্রযুক্তির এই পশ্চাৎপদতা সৌমত্রকে কিছুটা হতাশ করলেও সেই জাদুর এডোবির সন্ধান একদিন না একদিন ঠিকই মিলবে এমনটাই আশা রাখেন তিনি। এই যে পাতাল রেল - একদিন এটাও নিশ্চয় স্বপ্নই ছিল! বর্তমানের প্রেক্ষিতে যা কিছু আজগুবি কল্পনা, সেসবকে বাস্তবে রূপ দেয়ার পিছনে ছুটে চলার যেই বিগ্গান, সেই ঘরাণার একজন মুরীদ এই সৌমিত্র।

হোটোলের ব্য়কে চা আর পুরী নিয়ে আসতে দেখে ঘার বাকিঁয়ে প্লাটফর্ম থেকে দূরের দিকে তাকায় সৌমিত্র। টাইমিং এবারও মিলে গেছে ঠিক ঠিক - যে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা সেটিও হেলতে-দুলতে প্লাটফর্মের দিকেই আসছে। এখুনি উঠে দাড়াঁতে হবে কেম্ব্রিজের সৌমিত্রকে, কিন্তু পল্টনের সৌমিত্র এখন উঠবে না। অতএব, বিদায় হ্যালুসিনেশন। অভিন্ন সত্বার দ্বৈত অস্তিত্তের দু'টি স্তরীভূত দৃশ্যের এখানেই পরিসমাপ্তি ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:০৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×