somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবদুহু এবং গৌরাঙ্গ

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরবি শব্দ আবদুহু'র ব্যুৎপত্তিগত বিশ্লেষণ খুঁজতে গিয়ে এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি। ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থ কুরআন আরবি ভাষায় লিখিত বিধায় ইসলামিক পরিভাষার তাৎপর্য বোঝার জন্য আরবি ভাষা সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরী। বাঙলাভাষী আলেম সম্প্রদায় আরবি শব্দ সমূহের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ না জেনে শুধু শাব্দিক অপভ্রংশের উপর নির্ভর করে যে ভাব সম্প্রসারন করেন তা প্রায়শই ইসলামের প্রকৃত ভাব হতে দূরে সরে গিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে । বান্দা বা দাসকে আরবিতে 'আবদ' আর আল্লাহর দাসকে 'আবদুল্লাহ' বলা হয় অথচ অথর্ব আলেমরা আবদুহু'র অর্থ করতে গিয়ে বিশেষ দাস/বান্দা বলে খালাস হয়ে গিয়েছেন। এই 'বিশেষ দাস' এর মত অস্পষ্ট এবং সাংঘর্ষিক শব্দ পুরো কুরআনুল হাকিমে আর একটিও নেই অতএব আব্দ হতে আবদুহু হয়েছে এই তথ্য বেশ বিভ্রান্তিকর।
আরবিতে সাদা, সফেদ বা গৌড়কে আবিয়াদ বলা হয়; কৃষ্ঞ, কালো বা তমঃ কে বলা বলা হয় আসওয়াদ। ইসলামিক আধ্যাত্মবাদ বা তাসাউফে আসওয়াদ এবং আবিয়াদ দুটি শব্দই অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল ব্যবহৃত। যদি আবিয়াদ কে আবদুহুর শব্দমূল ধরি তবে আবদুহুর অর্থ বিশাল এক ব্যাপ্তি লাভ করে, অবশ্য কুরআনুল হাকিম অনুসারে 'আবদুহু' আদতেই ব্যাপক তাৎপর্য বহন করে।
যা আমরা বুঝতে পারি কুরআনে মুসা নবীকে আবদুহুর কাছ থেকে পাঠ নেয়ার আদেশ করার বিষয়টি অনুধাবন করার মাধ্যমে।
গৌরাঙ্গ শব্দটি সংস্কৃত হতে উদ্ভব, পনেরশ শতকের বাঙালী সাধক শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর কল্যানে এই গৌড়াঙ্গ ভজন পদ্ধতী সাধকদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া মহকুমা অন্ঞ্চলে জন্ম গ্রহন করেছিলেন। ভগবৎ গীতা এবং বেদের অগ্নি পুরাণে আমরা গৌড়াঙ্গ এবং তৎসংশ্লিষ্ট পদ্ধতির উল্লেখ দেখতে পাই।

যদিও শ্রী চৈতন্য পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া অঞ্চলে নিজস্ব পরিচিতি লাভ করেন কিন্তু ওনার জন্ম হয়েছিল তৎকালীন শ্রীহট্র বা বর্তমানের সিলেট অঞ্চলে। পিতা জগন্নাথ মিশ্র আর মাতা শাচী দেবীর সন্তান বিশ্বাম্বর মিত্র নিম গাছ তলায় জন্মে ছিলেন, তাই তাঁকে নিমাই বলেও সম্বোধন করা হতো।লালন সাঁইজি গানে এবং দর্শনে এই নিমাই নামটি অসংখ্য বার ব্যাবহার করেছেন। শ্রী চৈতন্য পিতার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী দেহভষ্ম গঙ্গায় অর্পনের উদ্দেশ্যে ভারতের গয়া অঞ্চলে যান এবং সেখানে ওনার পরিচয় হয় শ্রী ইশ্বর পুরী মহারাজের সাথে , পরবর্তীতে শ্রী চৈতন্য ওনার শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। শ্রী ঈশ্বর পুরীর গুরু ছিলেন চৌদ্দশ শতকের বেদ বিশারদ শ্রী মাধবেন্দ্র পুরী, ইনি কর্ণাটকের বিখ্যাত সাধক মাধব আচার্যের শিষ্য। মাধব আচার্য্য বেদান্ত দ্বৈত মতবাদ বা বৈষ্ঞব মতবাদের প্রচলন করার কারণে বিপুল পরিচিতি লাভ করেন এবং মাধব সম্প্রদায়ের ভিত্তি স্হাপন করেন। রাধা কৃষ্ঞ বা স্রষ্টা আর সৃষ্টির সম্মুখ মিলনের সাধনাই বৈন্ষ্ঞবদের মূল উদ্দেশ্য। কৃষ্ঞকে বীষ্ঞুর পুনঃজনম মানা হয় , তাই কৃষ্ঞের আরাধনা করলেও সম্প্রদায়টিকে বৈষ্ঞব বলা হয়ে থাকে। শ্রী চৈতন্য এই মতবাদ কে ভেদ, অভেদ, অচিন্ত এই ত্রিতত্ত্বে উন্নীত করেন এবং গৌড়িয় বৈষ্ঞব মতবাদের গোড়া পত্তন করেন। তিনি হরে কৃষ্ঞ নাম মন্ত্র ধারন করার জীবনধারাকে গুরুমুখী সামাজিক আন্দোলনে রূপদান করেন।এই মতবাদের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে হরে কৃষ্ঞ আন্দোলন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। উনিশশো পন্ঞ্চাশ থেকে শুরু ষাট পর্যন্ত হরে কৃষ্ঞ একটি ক্রেজ সৃষ্টি করেছিল।বিখ্যাত পপ ব্যান্ড বিটলস হরে কৃষ্ঞ আন্দোলনকে আমেরিকায় বিপুল পরিচিতি এনে দেয়, এই সময়েই ইস্কন প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু এই বিশ্বব্যাপী উত্থানের মূল নায়ক। শ্রী রামকৃষ্ঞ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, মনমোহন দত্ত সকলেই শ্রী মহাপ্রভু চৈতন্যের রাধা-কৃষ্ঞ বা গুরু-শিষ্য সাধন পদ্ধতির অনুসরন করেছেন।

এইরূপ পদ্ধতি বা জীবনধারাকে গৌরাঙ্গ হবার সাধনা বলা যেতে পারে।
কিন্তু গৌরাঙ্গ শব্দটির প্রচলন আরো অনেক প্রাচীন কাল হতেই চলে আসছে। বিভিন্ন সময় পুরাকির্তী খননকালে আমরা নানা যুগের শিলালিপির সন্ধান পেয়েছি। গৌরাঙ্গ শব্দটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় দেবনগরী লিপিতে, প্রথম শতাব্দী হতে দশম শতাব্দী পর্যন্ত দেবনগরী লিপি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মায়ানমার, শ্রীলংকা আর ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রধান ভাষা ছিল।পরবর্তীতে দেবনগরী লিপি হতে নন্দীনগরি লিপির উৎপত্তি হয়, বেদের অধিকাংশ পুরাণ নন্দীনগরী লিপিতে লিখিত। দেবনগরী লিপির উৎপত্তি স্হল দেবনগরের কোনো সন্ধান দীর্ঘদিন পাওয়া যায়নি তবে কিছুদিন পূর্বে ভারত মহাসাগরের নীচে একটি উন্নত নগর সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে। বিশেষজ্ঞগন এই শহরকে 'দ্বারক্বা' নামকরণ করেছেন এবং এই শহরকে ভগবান শ্রী কৃষ্ঞের শাসন করা শহর বা দেব নগরী হিসেবে নিশ্চিত করেছেন। অর্থাৎ গৌরাঙ্গ ভজন আজ অবধি প্রাপ্ত লিখিত মানব সভ্যতার প্রথম শতক হতেই গুরুত্ব প্রাপ্ত এবং বহুল পরিচিত মতবাদ।

ভগবান বিষ্ঞু সত্যযুগের ধর্ম বাহক স্বরূপ শ্রী কৃষ্ঞ রূপে দ্বাপড় যুগে অবতার নিয়ে ছিলেন।ভগবান শ্রী কৃষ্ঞ তার নগরে যে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেটাই সত্যধর্ম্ম রূপে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় টিকে আছে। এই ধর্মের বেশ খানিক বর্ণনা ভগবৎ গীতাতে পাওয়া যায়। তবে এ শিক্ষা গুরু-শিষ্য পরম্পরাতেই বেশি প্রচার হয়েছে কারণ এ ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্যই হলো স্রষ্টা এবং সৃষ্টির সম্মুখ মিলন। একজন মহামানবের পরিপূর্ণ মতবাদের একটি বইয়ের মধ্যে প্রকাশ করা অসম্ভব বিধায় এই ধর্মের শিক্ষা মানুষ হতেই নিতে হয়, বই থেকে নয়।
দেব নগরী দ্বারকাতে সত্যযুগে যে ধর্ম প্রচরিত ছিল তা গুরু শিষ্য পরম্পরার মাধ্যমে 'কর্তাভজা সত্যধর্ম' নামে পরিচিতি লাভ করে। কর্তাভজা সত্যধর্ম পালনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় 'আশ্রম তত্ত্ব"।

আশ্রম তত্ত্ব :

মানবদেহে সত্ত্ব, রজ, তম এই ত্রিগুণের তারতম্য হেতু, মানুষের জীবন চলার পথ বিভিন্ন হয়।তদরূপ ধর্ম বা উপাসনা ক্ষেত্রে মনের অবস্থা-গুণ ভেদে ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠান, বিশ্বাস বিভিন্ন রূপ হয়। এই বিভিন্নতাকে আর্য্য ঋষিরা চার ভাগে ভাগ করেছেন। এ গুলো ব্রহ্মচর্য্য, গার্হস্থ্য,বানপ্রস্থ, সন্ন্যাস।

ব্রহ্মচর্য্যঃ- কৈশোর থেকে যৌবনের প্রারম্ভ কাল পর্যন্ত।

গার্হস্থ্যঃ- যৌবন কাল বিবাহ বন্ধন, সংসার ধর্ম পালন।

বানপ্রস্থঃ- গার্হস্থ্য আশ্রম (সংসার ধর্ম) পালন শেষে পুত্র পরিজনের উপর সব কিছু সমাপনান্তে সংসার ত্যাগ করে ধর্ম পালন করার নাম বানপ্রস্থ।

সন্ন্যাসঃ- সংসার ও বিষয় বৈভবের আশা ত্যাগ করে, ঈশ্বর উপাসনা বা ধর্মপালনকরাই বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস।

ব্রহ্মচর্য্যঃ

(বীর্য্য ধারণম্, ব্রহ্মচর্য্যম, ব্রহ্মচর্য্য প্রতিষ্ঠায়াং বীর্যলাভঃ
-সাধনপাদ পাতজ্ঞল, ৩৮)

বীর্য্য (শুক্র) কে ধারণ করার নামই ব্রহ্মচর্য্য, বীর্য্য ক্ষয় হলে ব্রহ্মচর্য্য সাধন হয় না। এজন্য ব্রহ্মচারীগণ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় না, নারী সঙ্গ হতে দুরে থাকে এমন কি রমনীর স্পর্শ করা দ্রব্য পর্যন্ত গ্রহণ করে না। এ জগৎ সংসার মায়াময় মিথ্যা ভেবে, সংসারে না মজে, কঠোর সাধনার মাধ্যমে ঈশ্বরের উপাসনা করে, এরূপ সাধন কে ব্রহ্মচর্য্য সাধন বলে, ব্রহ্মচর্য্য আশ্রমের মাধ্যমে যারা সাধনায় ব্রতী হয়, তারাই ব্রহ্মচারী।

শুক্রই পরমব্রহ্ম, কারণ, ব্রহ্ম সত্ত্বা, পরমাত্মা শুক্রের মাধ্যমেই মাতৃগর্ভে প্রবেশ করে এবং পঞ্চভৌতিক দেহ ধারণ করতঃ, জীব জগতে বিচরণ করে, তাই শুক্রকে ত্যাগ করা মানেই ব্রহ্মঃ বস্তু ত্যাগ করা, শুক্রক্ষয় হলে আত্মক্ষয় হয়,ব্রহ্মচর্য্য প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির দেহে ব্রহ্মঃজ্যোতি প্রকাশ পায়, অষ্টবিধ মৈথুন বর্জন করে বীর্য্য ধারণ করার নাম-ই ব্রহ্মচর্য্য।

পৃথিবীতে বিচরণকারী প্রত্যেক নারী জাতি-ই, তার পূরুষ জাতিকে আকর্ষণ করে রেখেছে, মানুষ সর্ব শ্রেষ্ঠজীব হয়েও সে আকর্ষণ হতে মুক্ত হতে পারছে না। মানুষ কাম-রিপুর তাড়নায়, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সেই ব্রহ্মঃবস্তু কে দুরে ফেলে দিচ্ছে।

বানপ্রস্থঃ

সংসার ধর্ম পালন শেষে, পুত্র, পৌত্রাদি বা প্রিয় জনের হাতে সবকিছু অর্পন করে, সংসার ত্যাগ অন্তে- তীর্থে তীর্থে ভ্রমন, সাধুসঙ্গ ও একান্ত ভাবে ঈশ্বরের উপাসনা করা ও কঠোর সাধনার মাধ্যমে দেহ ত্যাগ করার নাম-বানপ্রস্থ।

সন্ন্যাসঃ

সন্ন্যাস শব্দের অর্থ ত্যাগ। যিনি ত্যাগী তিনি-ই সন্ন্যাসী। সংসার, বিষয় বাসনা, কামনাদি ত্যাগ করে ধর্ম পথ অবলম্বন করাকে সন্ন্যাস বলে। কেহ কেহ প্রিয়জনের দুর্ব্যবহারে, সংসার ছেড়ে সন্ন্যাস হয়, কেহ সংসারের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে সন্ন্যাস হয়, কেহ বিষয় ভোগে বিরক্তি ও বিষয়ে আসক্তি শুন্য হয়ে সংসার ছেড়ে সন্ন্যাস হয়, কেহ সংসারকে মায়া মিথ্যা ভেবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে সন্ন্যাস হয়। সন্ন্যাস গ্রহনের কোন নিদিষ্ট বয়স নাই। যে কোন ব্যক্তি যে কোন সময়ে, সন্ন্যাস গ্রহণ করতে পারে। তবে মন যদি প্রকৃত ত্যাগী না হয়; তাহলে বৃথা বেশভূষা পরে, সংসার ছেড়ে সন্ন্যাসী হওয়া উচিৎ নয়।

গার্হস্থ্য আশ্রমঃ

বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে, সংসার ধর্ম পালনের মাধ্যমে, অহিংসা, দয়া, দান, স্তব-স্তুতি, ভক্তি, সত্য,নিষ্ঠা, ক্ষমা-প্রার্থনা দ্বারা ঈশ্বরের উপাসনা করার নাম গার্হস্থ্য।

কর্তাভজন সত্যধর্মে, গার্হস্থ্য আশ্রম-ই সর্বশ্রেষ্ঠ বা উত্তম কারণ মানব সন্তান গার্হস্থ্য আশ্রমের মাধ্যমে জন্ম গ্রহন ক’রে এই সংসারে লালিত পালিত হয়ে জগতে বিচরণ করে, আবার জীবনের অবসান হলে সংসারী মানবগণ-ই মৃত ব্যক্তির অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাই গার্হস্থ্য আশ্রম-ই উত্তম।

ব্রহ্মচর্য্য ও সন্ন্যাস আশ্রমকে ধর্ম কর্ম পালনের প্রকৃত আশ্রম বলা যায় না কারণ যে গার্হস্থ্য আশ্রমের মাধ্যমে জগতে আসা হয় ব্রহ্মচর্য্য ও সন্ন্যাস আশ্রমের মাধ্যমে সেই গার্হস্থ্য আশ্রমকেই (সংসার ধর্ম) অস্বীকার করা হয়,ব্রহ্মচর্য্য ও সন্ন্যাস আশ্রমে নারী জাতির কোন অধিকার নেই, যে নারী জাতি গর্ভধারণ করত: সন্তান প্রসব ও লালন পালন করে ব্রহ্মচর্য্য ও সন্ন্যাস আশ্রমের বিধান মতে সেই নারী জাতিকে নরকের দ্বার বলা হয়। তাছাড়া ব্রহ্মচারী ও সন্ন্যাসী হয়ে সবাই যদি সংসার ধর্ম না করে তাহলে সংসার বলে আর কিছু থাকে না তাই ব্রহ্মচর্য্য ও সন্ন্যাস আশ্রম ধর্ম কর্ম পালনের প্রকৃত আশ্রম নয়।

দেহের রিপু-ইন্দ্রিয়-পঞ্চভূত যদি বশীভূত না হয় তা হলে তীর্থে তীর্থে ভ্রমন করেও কোন ফল হয় না, এতে কিছু প্রাকৃতিক মনোরম সৌন্দর্য্য দর্শন হয় মাত্র, সংসারে থেকেও যদি ভজন পূজনের মাধ্যমে গুরুর কৃপা লাভ হয় তাহলে গার্হস্থ্য আশ্রমের মাধ্যমে-ই ঈশ্বর প্রাপ্তি হওয়া সম্ভব। এমন ঈশ্বর প্রাপ্ত ব্যক্তিগনকেই গৌরাঙ্গ বলা হয়।

এই গার্হস্থ্য আশ্রম তত্ত্বের সথে আমরা যদি তাসাউফ বর্ণিত আবদিয়াতের প্রক্রিয়ার সাথে তুলনা করি তবে দেখতে পাব যে সুফীজমের মূল সাধন প্রক্রিয়াও একই। ব্রহ্মচর্য পালন এর সাথে শরিয়তের নিয়ম কানুন এবং প্রাথমিক মুরাকাবা মুশাহেদার পদ্ধতির বেশ মিল রয়েছে, তাছাড়া আশ্রম তত্ত্বে যে গার্হস্থ্যচর্যের বিধান আছে, তেমনি তাসাউফেও সন্ন্যাস কে সংসার ধর্ম এর একসাথে পালনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কারন, মোহতে না জড়ানো পর্যন্ত মোহকে পরিপূর্ণ ভাবে অনুধাবন করা সম্ভব না, পরিপূর্ণ উপলব্দী ব্যতীত মোহকে পরিত্যাগ করাও সম্ভব না। অতএব সংসারী হওয়া অতঃপর সংসারের মোহ ত্যাগ করা জরুরী। আশ্রম তত্ত্বে জাগতিক মোহ হতে পরিত্রান হওয়াকে বানপ্রস্হ বলে, তাসাউফে তরিকতে দাখিল হবার পর মোহ মুক্ত হবার জন্য হিজরতের আদেশ আছে যা প্রকারান্তরে বানপ্রস্থেরই নামান্তর।আশ্রমতত্ত্বে বানপ্রস্থ হবার পর সন্ন্যাস গ্রহন করা যেতে পারে তবে তা কেবল বেশ ভূষনে হলে হবে না জাগতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন থাকতে হবে। তবে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু নিজের সন্ন্যাস গ্রহন করা ভুল ছিল তা পরবর্তীতে নিজের লিখনীতে স্বীকার করেছেন এবং গার্হস্থ আশ্রমচর্যকে সর্বোত্তম নির্ধারন করেছেন। অনুরূপ সুফীজমও হিজরত বা বানপ্রস্থের পর আবার জাগতিক জীবনে ফিরে এসে মানুষের মাঝে থেকে সত্য ধর্ম প্রচার করাকেই উৎসাহিত করেছে।
অর্থাৎ সর্ব পুরাতন সত্য ধর্মের আশ্রম তত্ত্বে যে পদ্ধতি বলা আছে তা অবলম্বন করে গৌরাঙ্গে পরিণত হওয়া যেতে পারে আবার তুলনামূলক নবীন সুফীজমের বর্ণিত পদ্ধতি অবলম্বন করেও আবদুহু হওয়া যেতে পারে, বস্তুত দুটি পদ্ধতিই প্রায়োগিক দিক থেকে প্রায় একই হওয়ায় উভয়ই খুব কাছাকাছি ফলাফল প্রদান করে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৩:৪৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×