somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ তুমি সাবধান হও; ভূমিকম্প আসছে!

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল সকালে যখন আমি প্রথম কাঁপনটা দিলাম; প্রথমেই মনে হলো ইহা কি ভূমিকম্প নাকি আমার মাথার কম্প- যা হাই প্রেশারের কারণে হয়? ভাবলাম, একটু আগেই না ঔষধটা খেয়েছি? এক্ষেত্রে আমি প্রথমেই যেটা করি তা হলো, জলের দিকে তাকাই।

গতকাল তাকিয়েছিলাম আমার ডেস্কের নীচে রাখা ‘Mountain Due’ –এর বোতলটার দিকে। দেখলাম, উহাতে রাখা জল নড়ছে! দেখামাত্র আমার বোঝা সারা; ইহা কোন কম্প? মাথা তুলতেই দেখি- আমার কলিগ’রা এদিক ওদিক তাকাতাকি করছে! দেখেই বললাম, আর তাকাতাকি করার দরকার নাই ভায়েরা, শিগগীর দৌড় দেন। শুনেই যে যার মত করে উঠে পড়লো চেয়ার ছেড়ে; লগে আমিও! বরঞ্চ একটু দেরী করলাম। কারণ আমার হিসাব সোজা, আমাদের দোতলা অফিস বিল্ডিংটা ভেঙ্গে পড়লে এতক্ষণে আমরা কেলিয়ে থাকতাম নীচে।

ছোট্ট গেটটা দিয়ে একযোগে বের হতে হতে দেখি সবাই আমার মতই চিন্তা করছে; আর সমানে হাসছে! ভূমিকম্পতেও যে মানুষেরা এত হাসে; জীবনে এই প্রথম দেখলাম। অবশ্য চেয়ার থেকে ওঠার আগে আমিও ভেবেছিলাম, ফেবুতে ‘ভূমিকম্প’ স্ট্যাটাসখানা দিয়েই যাই! বেশী লাইক পামুনি! বাইরে বের হয়ে রাস্তায় এসে দেখি এবারো সবাই আমার মতই চিন্তা করেছে; সমানে ছবি তুলছে আর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে! We are enjoying ভূমিকম্প! দারুণ অনুভূতি! চলছে লাইক, কমেন্টের ছড়াছড়ি; শেয়ারিংও।

ভূমিকম্প শেষ হওয়া মাত্র মনে হলো, আরে আমার বউ বাচ্চা না বাসায়? তাড়াতাড়ি ফোন দিয়ে নিশ্চিত হলাম, ওরা ওকে, তবে ৪ তলায় থাকার কারণে কেঁপেছে আমাদের চেয়ে অনেক বেশী; ভয়ও পেয়েছে! তারপর শুরু করলাম বাড়ী-শশুড় বাড়ীর খোঁজ খবর নেওয়া! যখন জানলাম, “They are all Safe” তখনই শুরু হয়ে গেল আমাদের জল্পনা আর কল্পনা মিশ্রণ; হয়ে উঠলাম এক একজন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ! কলিগ ফাহিমকে বললাম, ডেফেন্টলি এই ভূমিকম্পের উৎস ইন্দোনেশিয়া।

এবার শুরু হয়ে গেল ২০০৪ সালের সুনামি নিয়ে আলোচনা আর অভিজ্ঞতার বর্ণন। এর মধ্যেই নেটের খবর দেখে ফাহিম বললো, দাদা, এবারেরটা হয়েছে নেপালে আর এর মাত্রা ছিল ৭.৫। শুনেই এবার সত্যিকারের ভয়টা পেলাম। অনেক আশঙ্কার একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল মনে। পরে জানলাম এটা ছিল; ৭.৯; যার মানে হলো ভয়াবহ ভূমিকম্প ছিল এটা এবং হয়েছে আমাদের বাড়ীর কাছেই।

এবার আমার চিন্তা শুরু হলো আমাদের নেপালিজ বায়ারদের নিয়ে। কয়েকবারের চেষ্টায় কাঠমুন্ডুতেই ধর্মেন্দ্রকে ফোনে পেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, কি খবর ধর্মেন্দ্র? ও বলল, “সুকান্ত ব্রো, অনেক বড় ভূমিকম্প হয়েছে; আমরা সবাই বের হয়ে গেছি বাড়ি থেকে; জানিনা কার কি হয়েছে, এখনো খবর নিতে পারি নাই। আমরা এখন একটা মাঠে দাঁড়িয়ে আছি। তবে অনেক ক্ষতি হয়েছে মনে হয়? অনেক বড় ঝাঁকুনি দিয়েছে; অনেক সময় ধরে”।

তারপর বারে বারে ফোন দিয়ে ওদের অবস্থা জানতে থাকলাম। আস্তে আস্তে ধ্বংসের, মানুষ মারা যাওয়ার খবর জানতে পাড়লাম ওর কাছ থেকে। জানতে পাড়লাম নেট থেকেও। আজ সকালে আবারও ফোন দিয়ে জানলাম, গতরাতে ওরা সবাই মাঠে ছিল; ওদের বাড়ির বিল্ডিংটা ফেটে গেছে কিন্তু পড়ে যায়নি; তাই পরিবারের কেউ মারা যায়নি। ওদের বাড়ীর সামনের একটা নতুন ওঠা ৭ তলা এপার্টমেন্ট বিল্ডিংটা ভেঙ্গে পড়েছে; ভেঙ্গে পড়েছে আরও একটা ৯ তলা হাইরাইজিং। ওর ভাষ্য মতে, “বেআইনিভাবে গড়ে ওঠা অনেক নতুন এপার্টমেন্ট বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়েছে। মানুষ মারা গেছে বহু; ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে; ছুটির দিন হওয়ায় সবাই বাড়িতেই ছিল!”

এবার আসি নিজেদের দিকে, গত ১০-১১ বছর ধরে আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া আর জাপানের আশেপাশে বড় বড় ভূমিকম্প হচ্ছিল। এবার হলো আমাদের উত্তর পাশে অর্থাৎ নেপালে একেবারে মাথার উপরে বলতে পারেন।

তাই আমি এখন বলতেই পারি, বাংলাদেশ তুমি সাবধান হও; হেসো না! ভূমিকম্প আসছে! ৫-৬ আর না; এবার ৭-৮ মাত্রার জন্য রেডি থাকো!

লেট করলে দেরী হয়ে যাবানি >>>

নতুন তথ্যঃ আমাদের দেখা ও জানা নেপালের অনেক টুরিস্ট স্পট ধ্বংস হয়ে গেছে। কাঠমুন্ডুর সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত স্পট ‘ভক্তপুর’ও ধ্বংস হয়ে গেছে।

শোকবার্তাঃ ২৫ এপ্রিল ২০১৫ সালে, নেপালে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে সেদেশের অনেক ক্ষতি হওয়ায় এবং অনেক মানুষ নিহত ও আহত হওয়ায় আমি শোক প্রকাশ করছি; সহমর্মিতা জানাচ্ছি।

২৬/০৪/২০১৫ সকালঃ ১১.৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×