somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুজন কিংবা চারজনের গল্প

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিয়েছে ছোট্ট অমল। তার কান্নায় একরকম বিপদেই পড়ে গেছেন তার বাবা। মুরগি জবাই করতে যাওয়াতেই এই বিপত্তি। হঠাৎ করেই জবাইকৃত মুরগির ছটফটানি অমলের কোমল মনকে নাড়া দিয়েছে। আর তাতেই এই কান্না। তার বাবার নিষ্ঠুরতায় সে বিমূঢ়। তাকে ঠান্ডা করা হলো এই বলে যে বাড়িতে নতুন মুরগি এনে দেয়া হবে তাকে যাতে সে আদর করে পালতে পারে। তার কান্না থামলো।
অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো সে তার দেশের বাড়ি হতে তার দাদী পরের দিনই একটি মুরগি পাঠিয়ে দিলেন। আর এখানেই আমাদের গল্পের শুরু।

******
দীপা আর দীপক দুই ভাই বোন। একেবারে পিঠাপিঠি। সব কিছুতেই তাদের প্রতিযোগিতা। আবার বাপ মাকে তাগিদ দিতে দুজনই একজোট।
তা তাদের আদরের ছোট কাজিন অমলের বাড়ি এসে তারা যখন গৃহপালিত মুরগি নামক নতুন জিনিসের সন্ধান পেল মেতে উঠল দুজনেই।
সারাদিন তারা পড়ে থাকত কিংবা বলা যায় সুযোগ পেলেই ছুটে যেত অমলদের বাসায়।তাদের অতি আদরেই হোক কিংবা আসল মালিক অমলের ঘোর কেটে যাওয়া অযত্নেই হোক সেই মুরগিটা একদিন পালিয়ে গেল।পালিয়ে গেল অমলদের বাড়ি ছেড়ে চিরতরে। অমলের এ নিয়ে বোধ করি তেমন মাথা ব্যাথা ছিল না কিন্তু দীপা আর দীপকের বুকে শেল হয়ে বাজতে থাকে মুরগিকে হারানোর ব্যথা। এবং ফলাফল অবশ্যম্ভাবী এক সপ্তাহের মাঝে তাদের বাসায় দুটি মুরগি চলে এলো দুজনের জন্য।
******
অদ্ভুত আনন্দে মজে গেল দুই কিশোর কিশোরী।তাদের আনন্দের উৎস তাদের সদ্য প্রাপ্ত জীবন্ত খেলনাগুলো। দীপার মুরগিটাকে দীপা ধলি বলে ডাকে। মাঝে মাঝে তার কাছে ধলিকে মনে হয় যেন খুব কাছের একেবারে নিজের। সেই ছোট্ট কিশোরীর মনে মাতৃত্ব জাগিয়ে তুলে ধলি।
ধলি যেন তার সন্তান। তার নিজের কাছে রেখে তাকে খাওয়ায় ঘহুম পাড়ায়
দেখাশুনা করে তার সন্তানের। সে অবাক হয়ে দেখতে থাকে ধলির বেড়ে উঠা। একদিন যখন ধলি ডিম পাড়ল দীপার আনন্দ কে দেখে? হৈচৈ করে পাড়া মাথায় তুলে ফেলল সে। আমার ধলি ডিম পেড়েছে। তার মনে যেন এক অপার্থিব আনন্দ। প্রতিদিন ধলির ডিম পাড়ার সময় হলে ধলিকে বসিয়ে সে অপেক্ষা করে - অপেক্ষা করে এক অব্যক্ত সুখানুভুতির জন্য।

ওদিকে দীপকও হেরে যাবার পাত্র নয় অন্তত ভালোবাসার মাঠে তো নয়ই।
তার দিদি ধলিকে যতটা ভালোবাসে সে তার কালুকে তার চেয়ে কোন অংশেই কম ভালোবাসে না। সে ও পিছু পিছু কালুর দেখাশুনা করে। কালুটা তুলনামুলক চঞ্চল। সে তার পিছে সারা দিন ছুটিয়ে বেড়ায় দীপককে। এভাবে কাটতে থাকে তাদের দিন তাদের প্রতিযোগিতা আর ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় দু ভাই বোন কেউ কারো কাছে হারার পাত্র নয়। তাদের সেই দিন গুলি মোড়ানো যেন সোনা দিয়ে।
******
গল্পটি এখানে শেষ করতে পারলে দুজন বা চারজন সবার জন্যই ভালো হতো কিন্তু তা হতে দিলো না। দিলো না প্রাণ ঘাতী রাণীখেত রোগ।একদিন হঠাৎ করেই দীপক দেখল কালুটা আর আগের মতো ছুটে বেড়াচ্ছে না। কী ব্যাপার? সে বাসায় চিৎকার শুরু করলেও তার বাবা মা প্রথমটায় তেমন আমল দিলেন না। কিন্তু যখন শুনলেন রাণীখেতের আগমন ঘটেছে মহামারী রূপে তখন দাকলেন পশু চিকিৎসক। তিনিই জানালেন সেই খবর। জানালেন কালু লড়ছে প্রানঘাতী রাণীখেতের সাথে।তার জীবন প্রদীপ নিভে যাবার আর বেশি বাকি নেই। দীপক খবরটা জানল না।কিন্তু আড়ালে দাড়িয়ে জেনে গেল দীপা।

নির্ঘুম কাটলো দীপার রাত। হঠাৎ করেই সে বুঝল ধলিকে বিসর্জন দিতে হবে দীপককে খুশি রাখতে। নইলে তো তার ভাইটি কেদে খুন হবে। এমন সময় আবার তার চোখের সামনে তার সন্তানপ্রতিম ধলির মুখচ্ছবি ভেসে উঠলো। কী করবে সে? কালুকে দুরে সরাতে হবে তার ভাইটি ঐ কালুর মৃত্যু সহ্য করতে পারবে না। কালুকে সরালে ধলিকে সে রাখে কোন মুখে। আবার তার সন্তানের (ধলি) চেহারা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।এক পর্যায়ে সে যেন অনুভুতিহীন হয়ে গেলো।

পরের দিন সকালে উঠে দীপক দেখল ধলি নেই। তার দিদি নাকি রাগ করে তাকে বের করে দিয়েছে। বের করবি কর দিদিটা এখন আবার ফুপিয়ে কাদছে। দীপক তার কাছে গেলো । কী বলে সে সান্তনা দিবে সে বললো দিদি তুই কাদিসনে। আমার কালু তোর। যা বোকা এসব কী বলিস।কড়া ধমক দিয়ে তার দিদি যেন তাকে বসিয়ে দিতে চাইলো।দীপক হঠাৎ করে রেগে গেলো।দিদি তুই যদি না নিস কালুকে আমি পালবো না বলে চেচাতে চেচাতে বাড়ি মাথায় তুলল এবং এক পর্যায়ে সে বাবাকে বলল যেন কালুকে বেচে দিতে।

দীপার বুক আটকে আসছে কষ্টে সে জানে সে যেখানে রেখে এসেছে ধলিকে তাতে সে ইতোমধ্যেই চলে গেছে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে। আর তার নিথর দেহের মাংস গিলছে কোন মানুষরূপী রাক্ষস। তাই দুপুরের খাবারে মুরগীর মাংস দেখার পর সেযখন কুকড়ে উঠলো তার কারণ বোধ করি কেউ জানলো না ,শুধু দীপক তার অশ্রুসিক্ত কপোলপানে চেয়ে রইলো আর আজ তাদের মধ্যে যে নীরব অভিনয় চলল সে কথাই ভাবতে লাগলো।
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×