somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"নাস্তিকতা ছেড়ে আলোর সন্ধানে"

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কফির পেয়ালায় শেষ চুমুক দিয়ে তিনি খানিকটা সময় নিয়ে বললেন,
"বুঝলে রুবেন স্রষ্টা বলে কিছু নেই। এমন রাবিশে মানুষ বিশ্বাস করে কিভাবে?"
রুবেনের আজ সে কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না। চোখে জল,করছে টলমল ।
অলক্ষ্যে ২/৩ ফোটা কফির উষ্ণতার সাথে মিশে গেছে।

এইতো সেদিনকার কথা। ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের এক টগবগে তরুণ ছিল রুবেন।
তারুণ্যের উদ্দাম ঢেউ আছড়ে পড়েছিল বুকে। নারী, মদ, জুয়া সে এক অন্য নাইট লাইফ!
উদ্দামহীন তারুণ্যের লাগাম টেনে দিল কিছু দুর্ঘটনা।
মা-বাবার মাঝে ছাড়াছাড়ি হল, নিজের প্রিয় চেরী কুকুর টাও মারা গেল। দুইবার রোড এক্সিডেন্ট এর হাত থেকে বেঁচে ফিরল সে।
এই প্রথম মনে হল, জীবন নিয়ে গভীরভাবে ভাববার দরকার আছে। কাজেই ধর্মতত্বের দিকে ঝুঁকে পড়ল সে।
তার বাবা-মা দুইজনেই খ্রিষ্টান পরিবারে বড় হলেও, নিজেরা সে ধর্ম ছেড়ে নাস্তিকতার পথ ধরেছেন বহু আগে।
এমনকি নিজের সন্তানদেরো নাস্তিক্যবাদ চর্চা করিয়েছেন।

প্রথমেই সে খ্রিষ্টান বন্ধুদের সাথে আলাপ করে খ্রিষ্টান ধর্মের খুঁটিনাটি বিষয়ে জানা শুরু করল।
চার্চে যাওয়া ও শুরু করল। বাইবেল পড়া শুরু করল।
কিন্তু বাইবেল এর রকমফেরের প্যাঁচে পড়ে সে বিশ্বাসের সুতোয় টান পড়ল।

এরপর মন ছুটল, হিন্দু ধর্মের দিক। কিন্তু যা খুঁজছিল তা না পেয়ে ফিরে গেল সে।
দিকহীন এক ভ্রান্ত নাবিকের মত এগিয়ে চলল।

এবার শুরু হল ইহুদীধর্ম নিয়ে চর্চা। কিন্তু না, এখানেও মন টিকল না।

এবার এক শান্ত-সৌম্য ভিক্ষুর কাছে বৌদ্ধধর্ম এর পাঠ নেয়া শুরু হল।
রুবেনের মনে হল, এই প্রথম সে সত্য খুঁজে পেয়েছে যার প্রতিক্ষায় তার এ ছুটে চলা।
ভিক্ষুদের লাইফস্টাইল তাকে মুগ্ধ করে দিল।
কিন্তু অচিরেই তার মনে হল, এটা খুব সুন্দর জীবন ব্যবস্থা হতে পারে কিন্তু সে যা খুঁজছে সেটা এখানে নেই।
হতাশা ঘিরে ধরল।

শেষে এক বন্ধুর অনুরোধে ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করল।
প্রায় ছ'মাস কুরান নিয়ে গবেষণা চালালেও তখনো ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে পারছিল না।
কোথায় যে কি একটা নেই!

সে গ্রীষ্মের রাতেও আকাশে মিটিমিটি তারা জ্বলছিল।
দু-একটা রাতজাগা পাখি ডেকে উঠেছিল কোথাও।
রুবেন এর সামনে একটা কোরান শরীফ বন্ধ করে রাখা। পাশে একটা মোমবাতি জ্বলছে।
বেশ আধাত্মিক টাইপের একটা পরিবেশ।

"দেখ আল্লাহ, আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করব কিন্তু তুমি যে আছ, তার নিদর্শন আমাকে আগে দেখাও।
সেটা হতে পারে, বিদ্যুতের ঝলকানি বা অন্য কিছু। আমি জানি, তুমি সারাদিন অনেক ব্যস্ত থাকো,
আমি অনেক কিছু করেছি তোমাকে জানতে, এবার তোমার পালা আল্লাহ।"

কথাগুলো বলার পর আশেপাশে একবার দৃষ্টি ঘোরালো রুবেন।
নাহ, কিচ্ছু ঘটল না।
হতাশ হয়ে কোরান খুলে পড়া শুরু করল:

"তোমরা যারা আমার নতুন নির্দশন দেখতে চাও, আমি কি ইতিমধ্যে তা দেখাই নি?
তোমার চারপাশে তাকাও। মিটিমিটি করে জ্বলতে থাকা তারার দিকে দেখ।
সূর্যের দিকে দেখ। চন্দ্রের দিকে তাকাও। পানির দিকে তাকাও।
এসবই কেবলমাত্র জ্ঞানীদের জন্য আল্লাহ্‌র নিদর্শন হিসেবে রয়েছে।"

এই একটিমাত্র আয়াত, একটিমাত্র কিতাব যা যুগে যুগে বহু পথভ্রান্ত রুবেনদের আলোর পথের যাত্রী বানিয়েছে!


(সত্য ঘটনা অনুসারে লিখেছি।
যার জীবন থেকে স্টোরি টা নেয়া হয়েছে, তার মজার একটা ইউটিউব ভিডিওর লিংক দিলাম: https://www.youtube.com/watch?v=9xhZ00xnHIA )
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×