চলছে শীতকাল। হিম হিম ঠান্ডায় এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি বা চা না হলে যেন চলেই না!
তবে আপনি যদি ক্যাফেইন থেকে দূরে থাকতে চান তবে আপনার জন্য আজকের লেখাটি।
"গোল্ডেন মিল্ক" বা "টারমারিক মিল্ক" বা "সোনালি দুধ" এর পরিচিত নাম হচ্ছে " হলুদ দুধ" বা " হালদি দুধ"।
শোনা যায়, ত্বকের সৌন্দর্য আর উজ্জ্বলতা বাড়াতে ক্লিওপেট্রা প্রতিদিন হলুদ-দুধে গোসল করতেন।
টিভি বিজ্ঞাপনে যদিও শচীনের মুখে শোনা যায়, "বুস্ট ইজ দা সিক্রেট অফ মাই এনার্জি"
তবে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেট প্লেয়ার শচীন টেন্ডুলকারের প্রতিদিনকার পানীয় হচ্ছে এই "হালদি দুধ"।
আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রে, এ দুধের অনেক গুণাগুণ বর্ণনা করা হয়েছে।
কেন খাবেন এই দুধ?
১) শীতে নাক ঝাড়তে ঝাড়তে অবস্থা যদি কাহিল হয়ে যায়, তবে এই দুধ খেয়ে দেখতে পারেন।
কারণ হলুদ আপনার ইমিয়্যুন সিস্টেম কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
একইসাথে কাশি ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
২) হলুদে আছে 'কারকিউমিন' যা ক্যান্সার সেলকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
৩) এটি খাদ্য পরিপাকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৪) ইহা লিভার টনিক হিসেবে কাজ করে।
৫) এটা রক্তকে বিশুদ্ধ করে। এছাড়াও ব্লাড সারকুলেশন উন্নত করে।
৬) ইহা আর্থ্রাইটিক পেইন কমাতে সাহায্য করে।
৭) হলুদ-দুধে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম যা হাড়ক্ষয় রোধ করে।
এছাড়া অস্টিওপেরেসিসে আক্রান্ত রোগীর জন্য সেরা পথ্য এটি।
৮) এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, চামড়া কুঁচকে যাওয়া ঠেকায়, একজিমা দূর করে।
৯) ব্রণের সমস্যা রোধ করতে এর জুড়ি মেলা ভার।
এছাড়াও ত্বকের যেকোন সমস্যায়, একটি তুলোর বলের সাহায্যে আক্রান্ত স্থানে ,
১৫ মিনিট ধরে হলুদ দুধ লাগিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
১০) হলুদ, মৃদু ফাইটোইস্ট্রোজেন এর ন্যায় কাজ করে যেটি নারীদের রিপ্রোডাকটিভ সিস্টেম কে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
১১)এছাড়া এটি নারীদের হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
যেসব নারীরা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার দরুন মিনস্ট্রুয়াল প্রবলেমে ভুগছেন, তারা অবশ্যই ক্যাফেইন থেকে দূরে থাকুন
আর এই শীতে আপনার খাদ্য তালিকায় হলদে-দুধ রাখুন।
এ দুধ পানে কখনো কখনো ভ্যাজিনাল ডিসচার্জ বেড়ে যেতে পারে। এতে ভয় পাবার কিছু নেই।
১২) যারা 'ইনসোমনিয়া' বা 'নিদ্রাহীনতায়' ভুগছেন,তাদের জন্য খুব ভালো 'স্লিপ এইড' হতে পারে 'হলুদ-দুধ'।
কারণ এটি পানে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়, যা দ্রুত ঘুম আনতে সাহায্য করে।
১৩) আলঝেইমারে আক্রান্ত ব্যক্তির পথ্য হিসেবে কাজ করে এ দুধ।
সতর্কতা :
১) আপনি যদি গর্ভবতী হোন তবে "হলুদ দুধ" পান থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
২) হলুদে আছে ব্লাড থিনিং প্রোপারটিজ। তাই আপনি যদি ব্লাড থিনিং সাপ্লিমেন্টারী গ্রহণ করে থাকেন,
তবে এই পানীয় সেবন থেকে বিরত থাকুন।
৩) আর্থ্রাইটিক পেইন থাকলে যদি ডেইরী প্রোডাক্ট সেবনে আপনার সমস্যা বেড়ে যায়,
তবে "কোকোনাট" মিল্কের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন।
৪) হলুদে আপনার এলার্জি বৃদ্ধি পেলে (স্পেশালি গলা বা মুখে) এ পানীয় সেবন থেকে বিরত থাকুন।
৫) অতিরিক্ত পানে মেন্সট্রুয়েশন প্রবলেম হতে পারে।
৬) মাত্রাতিরিক্ত পানে হার্টবার্ন, পরিপাকে সমস্যা, ডায়রিয়া, লিভারে সমস্যা, ইন্টারনাল ব্লিডিং,
হাইপারএকটিভ গলব্লাডার কনট্রাকশন, নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে।
৭) এন্টিকোগুলেন্ট জাতীয় ঔষধ যেমন: এস্পিরিন জাতীয় ঔষধ সেবন করতে থাকলে, এ দুধ সেবন করবেন না।
৮) সার্জারি করার দুই সপ্তাহ আগে বা পরে এ দুধ পান হতে বিরত থাকুন।
৯) সবচে ভাল ফল পেতে সকালে বা রাতে খালি পেটে এ দুধ পান করুন।
"হলুদ-দুধ" বানাবার পদ্ধতি :
উপকরণ:
২ কাপ দুধ
১ চা চামচ কাঁচা হলুদের রস বা গুঁড়ো হলুদ
১/৪ চা চামচ গোলমরিচ গুড়ো
প্রথম পদ্ধতি : একটা পাত্রে সবগুলো উপকরণ নিয়ে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন।
দুধ ভালভাবে ফুটে উঠলে পাত্রটি চুলা থেকে নামান।
এবার আপনি চাইলে সামান্য মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
"বিসমিল্লাহ " বলে গরম গরম পান করুন।
দ্বিতীয় পদ্ধতি : একটা পাত্রে দুধ আর গোলমরিচ গুড়ো সহ মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন।
দুধ ভালভাবে ফুটে উঠলে পাত্রটি চুলা থেকে নামান।
এবার কাপে দুধটা ঢেলে তাতে ১ চা চামচ কাঁচা হলুদের রস মেশান।
এবার "বিসমিল্লাহ " বলে গরম গরম পান করুন।
পান শেষে তলানি টুকু ধুয়ে ফেলবেন না। সামান্য পানি মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন।
অনেকেই হয়ত জানেন না, খাওয়া বা পান শেষে তলানিতে থাকা খাদ্যকণায় ,
ভিটামিন বা অন্য উপাদান এর অনুপাত বেশী থাকে।অথচ সচরাচর আমরা তা না খেয়ে ফেলে দেই।
খাওয়া শেষে আলহামদুলিল্লাহ্ বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
গোলমরিচ যোগ করবেন কেন?
১৯৯২ সালে প্রকাশিত ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোকাইনেটিক্স এর রিপোর্ট অনুযায়ী,
হলুদে বিদ্যমান কারকিউমিন শোষণের জন্য মানব দেহকে বেশ বেগ পেতে হয়।
কিন্তু অল্প পরিমাণ গোলমরিচ যোগ করলে শোষণের হার ২০০০% পর্যন্ত বাড়ানো যায়।
আমার প্রিয় মালাই পড়া "হলদে-দুধ "
তাহলে আর দেরী কেন?
এখন থেকে মালাই চা ছাড়ুন,
মালাই পড়া সোনালি দুধ খাবার অভ্যাস করুন।
"হালদি দুধ"
"হেলদি দুধ"
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৩