somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" জেদী মেয়ের হিজাব "

১৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"১৯৭৯ সালের কথা। আমার দাদা ঠিক করেন, সিরিয়া ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমাবেন।
পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, প্রথমে দাদা ক্যালিফোর্নিয়া তে যাবেন।
এরপর দাদী তার সাত সন্তানসহ যাবেন।

দাদা চলে যান।
কিছুদিন পর দাদী ও তার সন্তানেরা রওনা হোন।
তারা প্রথমে নিউইয়র্কে অবতরণ করেন।
সেখান থেকে ক্যালিফোর্নিয়া যাবার পূর্বে সমস্ত অভিবাসীদের একটি সবুজ কার্ডের প্রয়োজন হতো।
এই কার্ডে অবশ্যই হিজাব ছাড়া ছবি যুক্ত করতে হতো।

আমার ফুপীর নাম ছিল হালা। তিনি পর্দা করতে ভালবাসতেন।
এয়ারপোর্টের এক অফিসার বললেন, গ্রীনকার্ডটি পেতে হলে তাকে অবশ্যই হিজাব খুলে ছবি তুলতে হবে।
কিন্তু আমার ফুপী ছিলেন ভীষণ জেদি। তিনি কোনভাবেই হিজাব খুলতে রাজি নন।
এবার আমার দাদী রেগে গেলেন। তিনি ইচ্ছেমতো ফুপীকে বকা-ঝকা করতে লাগলেন।
কিন্তু আমার ফুপী তার সিদ্ধান্তে অটল।
তিনি ইমিগ্রান্ট অফিসার কে বললেন,
"আপনারা যত খুশি তত মানুষ ডেকে আনুন কিন্তু আমি কোনভাবেই আমার হিজাব খুলব না।"

পরিস্থিতি তখন নাজুক। এভাবে চলে গেল তিন ঘন্টা।
অবশেষে আমার নাছোড়বান্দা ফুপীর জয় হল। তাকে হিজাব পড়েই ছবি তোলার অনুমতি দেয়া হল।
কিন্তু ততক্ষণে, ক্যালিফোর্নিয়াতে যাবার ফ্লাইট টি মিস হয়ে গেছে।
ওনারা বাধ্য হয়ে, পরেরদিনের টিকিট কাটলেন । সারারাত এয়ারপোর্ট এই কাটিয়ে দিলেন।
সেদিন আমার দাদী, ফুপী কে ভীষণ বকেছিলেন। ফুপী খুব কান্না করেছিলেন।

পরেরদিন তারা ক্যালিফোর্নিয়া তে পোঁছালেন।
আমার দাদা, তাদের দেখতে পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসে সবাইকে জড়িয়ে ধরেন।
তিনি বার বার বলতে থাকেন,
"আলহামদুলিল্লাহ্‌, আলহামদুলিল্লাহ্‌, কখনো ভাবি নি, তোমরা বেঁচে থাকবে,আবার তোমাদের দেখা পাবো!
গতকালের ফ্লাইট টা এক্সিডেন্ট করেছে। ফ্লাইটে থাকা ২৭১ জন যাত্রী সবাই নিহত।"

এ কথা শোনার পর কেউই কথা বলতে পারছিল না।
সবাই অঝোর ধারায় কাঁদছিলেন আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছিলেন।

আমার ফুপী ছিলেন ভীষণ সাহসী।
হিজাবের জন্য তার ভালবাসা ছিল একেবারেই নিখাদ!
এই ঘটনাটি আমাকে ভীষণ অনুপ্রেরণা যোগায়।
চারিদিকে আজ ইসলামের প্রতি যেভাবে আঘাত আসছে,তাতে ঈমান ধরে রাখা খুব শক্ত হয়ে গেছে।
কিন্তু বিশ্বাস করুন, আপনি যখন কাউকে ভালবাসবেন, দুনিয়ার কোন বাঁধাই আপনাকে আটকে রাখতে পারবে না।
যেকোন মূল্যে আপনার ভালবাসাকে প্রতিষ্ঠা করবেন।
আমি শুধু বলতে চাই,
"আল্লাহকে ভালবাসুন।
হ্রিদয়ে আল্লাহর রং ধারণ করে, দ্বীনের উপর অটল থাকুন।"



(পুরো ঘটনাটি মারওয়া আতিক নামের এক দ্বীনি বোনের জীবন থেকে নেয়া।)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২৫
১৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×