"ভালোবাসা কখন মানুষ কে মরতে শিখায় না।
ভালোবাসা মানুষ কে নতুন করে জন্ম দেয়,
কিন্তু ভালোবেসে মানুষ মরে কেনো?
কেনো ইতিহাস থমকে দাড়ায়?
ধিক্কার জানাই ওই সব নরপষু কুলঙ্গারদের যারা ভালোবাসার নামে প্রতরনা করে।
শান্তার জীবনী কি আমাদের সমাজের বোনদের শিক্ষা হতে পারে না!!
শান্তা বেশ কয়েক বছর আগে ওর চেয়ে বছর দুয়েকের
ছোট দূর সম্পর্কের এক চাচাত ভাইয়ের সাথে সিরিয়াস রিলেশনে জড়িয়ে পড়ে।
বিষয়টা ওদের পরিবারে জানাজানি হলে ওর অভিভাবকরা এ সম্পর্ক মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানালে ,
ওর সাথে পরিবারের দ্বন্দ্ব এবং টানাপোড়া শুরু হয়।
এরই এক পর্যায়ে গত ঈদুল আযহার পরে শান্তা ফ্যামিলি ছেড়ে মেসে এসে ওঠে।
এরই মধ্যে সে পছন্দের মানুষটিকে নাকি বিয়েও করেছিল।
এরই সূত্র ধরে শান্তার সাথে ওর পরিবারের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে।
এদিকে ওর পছন্দের মানুষ ঢাকা পাড়ি জমায়।
শান্তা মেসে থেকে একাডেমিক পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি বই পড়া এবং লেখলেখিও চালাচ্ছিল।
তার পড়ার টেবিলে ছিল বিভিন্ন বইয়ের স্তূপ।
বেশ কিছুদিন আগে থেকে তার মনের মানুষের সাথে শান্তার সম্পর্কের টানাপোড়া শুরু হয়।
ছেলেটি ঢাকা গিয়ে অন্য একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।
এনিয়ে ওদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়।
যার জন্য শান্তা মা বাবার অবাধ্য হয়েছে, তাদের সঙ্গ ত্যাগ করে দূরে সরে আছে,
সেই ভালোবাসার মানুষের বিশ্বাস ঘাতকতা ছিল শান্তার জন্য বড় আঘাত।
মানুষটার অবহেলা শান্তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল।
চরম ভালাবাসার দরুণ শান্তা চেষ্টা করছিল সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে।
বাবা মায়ের অবাধ্য হওয়ায় তারাও মেয়ের সাথে তেমন যোগাযোগ রাখত না বললেই চলে।
কতদিন গেছে দুঃখী মেয়েটা রাত জেগে একা একা বসে চোখের জল ফেলেছে।
মা বাবার পাশাপাশি ভালাবাসার মানুষের অবহেলা ওকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে ফেলে।
মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকত। এ সময় ওর পছন্দের খাবার ছিল চিপস।
ও তেমন মিশুক ছিল না। চুপচাপ থাকত অধিকাংশ সময়।
শুধুমাত্র চিপস খেয়েই সে দিন পার করে দিত।
তবে ওর নিত্য সঙ্গী ছিল মোবাইল ফোন।
মৃত্যুর চারদিন আগে থেকে ও খাওয়া দাওয়া প্রায় ত্যাগ করে।
দুয়েকটা চিপস ছাড়া খাদ্য বলে কিছু ছিল না ওর।
সেদিনই বাড়িঅলা ভাবীর নজরে ব্যাপারটা আসায় শান্তার বাসায় ফোন দিয়ে ,
শান্তার অবস্থার বর্ণণা দিয়ে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলে ভাবী।
আসন্ন বিপদ বুঝতে পেরে ভাবী ওর মাকে সতর্ক করেছিল।
তারা না এলে তাদের মেয়ের বিরাট ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
শান্তা আশা করেছিল, ভাবীর ফোন পেয়ে ওর বাবা না আসুক, মা অন্তত ওকে নিতে আসবে।
কিন্তু আসেনি তারা।
এতে রীতিমত মুষড়ে পড়ে মেয়েটা।
নিজের কৃতকর্মের জন্য চিৎকার করে মাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারেনি শান্তা।
এদিকে প্রেমিকের সীমাহীন অবহেলা। যার জন্য বাবা মার কাছে তার অগ্রহণযোগ্যতা।
বিষয়টা কাউকে শেয়ার করেনি ভীষণ একাকীত্বে ভোগা বেচারী শান্তা।
নিজের কষ্ট বুকে চেপে রেখে ডুকরে কেঁদেছে।
সুইসাইডের দুদিন আগে রক্তও নাকি বিক্রি করেছে সে! (নাকি দান করেছে? শিওর নই আমি)
নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেয়া দুর্বল শরীরের একটা মেয়ে যদি সেই শরীরে আবার রক্ত দেয়, তার কন্ডিশন কী হতে পারে?
চলাফেরা এবং কথা বলার সময় ওর শরীর কাঁপতে থাকে।
খাবার বলতে শুধু চিপস।
শঙ্কিত বাড়িঅলা ভাবী আবার ফোন দেয় শান্তার বাড়িতে।
কিন্তু কেউ আসেনি ওকে নিতে।
অপরাধবোধে থাকা শান্তা নিজে থেকে ফিরে যেতে পারেনি গৃহে।
আত্মহনন যেদিন করে, তার আগের দিন ওর প্রিয়মানুষের সাথে ঝগড়া হয় ওর।
পরেরদিন সারা দিন চেষ্টা করেও ফোন ঢুকাতে পারেনি ছেলেটির ফোন।
সুইচ অফ। রাতেও ফোনে পায়নি ছেলেটিকে।
অনেক চেষ্টা করেও যখন ছেলটির সাথে যোগাযোগে ব্যর্থ হয় শান্তা, তখন হতাশায় ছেয়ে যায় ওর মন।
কষ্টে বুক ভেঙে যায়। বিতৃষ্ণা জন্মে যায় জীবনের প্রতি।
ছেলেটির উদ্দেশে একটি মেসেজ লেখে সে। চরম সিদ্ধান্তটা তখনই নেয়।
আগে থেকেই নিয়ে আসা ইঁদুর মারা বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় রাত আনুমানিক তিনটে সাড়ে তিনটের দিকে।
ওর বমি করার শব্দে ওর রুমমেট জেগে যায়।
মেয়েটা ভয় পেয়ে বাড়িঅলা ভাবীকে ডাক দেয়।
ভাবী এসে পরিস্থিতি দেখে ওর বাড়িতে ফোন দেয়।
ওর মা এতরাতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়।
তখন শুধু মা, মা বলে প্রলাপ বকছিল মেয়েটা।
মায়ের কাছে যেতে চায় সে, মাকে একনজর দেখতে চায়, মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চায়।
শান্তার শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি।
ওকে গুরুতর অবস্খায় পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
অবস্থার আরও অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেলে রেফার করে ওরা।
কিন্তু লাভ হয়নি।
কয়েকদিন না খেয়ে থাকায় খালি পেটে বিষ পান করার প্রতিক্রিয়াটা হয়েছে মারাত্মক।
গাড়িতে তুলতে তুলতেই দেহ ত্যাগ করে একছেলে একমেয়ের সংসারের একমাত্র মেয়ে শান্তা।
তখনও ওর মা পৌঁছায়নি।
মৃত্যুর পর শান্তার মোবাইলে একটা মেসেজ পাওয়া যায়।
ছেলেটির উদ্দেশে সেন্ড করা।
মেসেজটির ভাষা ছিল অনেকটা এরকম: -
"তোমার প্রতি কোনও রাগ বা অভিযোগ নেই আমার।
জানি জান্নাত কোনদিনই পাবো না আমি।
তবুও ভীষণ কষ্টের অবহেলার এই জীবন ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমি।
যদি পারো, তো আমার কবরে একমুঠো মাটি দিও।"
-শান্তা
কৃতজ্ঞতাঃ তামান্না লোহানি ছোঁয়া ( আপুর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া)
কিছুদিন ধরে শুধু সুইসাইডের খবর পাচ্ছি।
ভেবেছিলাম কিছু একটা লিখব। কিন্তু ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
শুধু কোরানের দু'টো আয়াত মনে করিয়ে দিতে চাইঃ
" হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না।
যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে।
যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত,
তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না।
কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন।
আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন।"
- সূরা আন-নূরঃ আয়াত ২১
"আর তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাওবা কর।"
- সূরা হুদ : ৩
" হে ঈমানদারগন! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর, বিশুদ্ধ তাওবা।"
- সূরা আত-তাহরীম
“অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে;
এরাই হল সেসব লোক যাদের তওবা আল্লাহ কবুল করেন।
আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ।”
- সূরা নিসা: ১৭
“আর এমন লোকদের জন্য তওবা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,
এমন কি যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে আমি এখন তওবা করছি।”
- সূরা নিসা: ১৮
"যারা অজ্ঞতা বশত মন্দ কাজ করে অতঃপর তওবা করে, অাল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমাশীল। "
আপনি বলে দিন, (আল্লাহ বলেন)
"হে আমার বান্দাগণ!
যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো,
তোমরা আল্লাহ তায়ালার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না।
নিঃসন্দেহে আল্লাহ (অতীতের) সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন।
নিশ্চয় তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু।”
- সূরা আয্ যুমার: ৫৩
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৫৩