গেলো ক'দিনে যারা ধর্ম অবমাননা নিয়ে খাড়াইয়া পড়েছিলেন, আপনারা নিজেরা কি বাজার করে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করেন?
দয়া করে কাছাকাছি কোন বাজার থেকে একবার ঘুরে আসুন। নিজেই উপলব্দি করতে পারবেন এ মুহূর্তে কোন বিষয়ে আপনার, আমার অনুভূতি জাগিয়ে তোলা জরুরি। অবশ্য সেটি চিন্তা করার আগেই তো অনুভূতিতে টোকা লাগার লাইন বেরিয়ে গেলো।
এই যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী মহল;
আপনারা জানেন আজকের বাজার দর অনুযায়ী সবচেয়ে মোটা চালের কেজি ৫০ থেকে ৫৩ টাকা। ঝিঙে, লাউ, চিচিঙ্গা, পটল; যেটাই বিক্রেতার ঝুড়ি থেকে তুলতে যান না কেনো - কেজি প্রতি দাম দিতে হবে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
পোল্ট্রি মুরগি!
রেটিং সে তো "সানি লিওন" কে ছাড়িয়ে গেছে এ মাসের শুরুতে। আর সোনালী মুরগী?
সে তো সুনীলের "কেউ কথা রাখেনি" কবিতার সেই লস্কর বাড়ির খাওয়ার টেবিলে। গেলো এক সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালী মুরগীর দেমাক বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা। প্রতি কেজির দাম ৩০০ থেকে ৩২০।
বিশ্বাস হয় না! তাহলে ঘরে বসে নেটে সার্চ দিয়ে দেখে নিন। এবার আসেন সয়াবিন তেল প্রসঙ্গে। গেলো সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৫৩ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে; যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের মাঝামাঝিতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকায় উঠেছিল।
অনুভূতি এখনো জেগে ওঠেনি!
তাহলে শুনুন প্রতি কেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য এখন ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। যা মাসখানেক আগে ৫৫/৬০ টাকায় পাওয়া যেতো। একইভাবে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ৭০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।
আর শুনবেন। এলপি গ্যাস, বিদ্যুতের ইউনিট, ওয়াসার বিশুদ্ধ পানির বিল, আদা, রসুন, ডাল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামের খবর।
দেশি আদার দাম এখন ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা। দেশি রসুনের দাম ২০ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ এবং আমদানি করা রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভাই; এগুলো হলো আপনার, আমার সবার কমন ইস্যু। এখানে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টানসহ সকল ধর্মাবলম্বীর নিত্যদিনের অপরিহার্য বিষয়।
একবার ভেবে দেখুন তো, যে মানুষটি ছোটখাটো চাকরি বা ব্যবসা করে; কোন মাসে বেতন পান, কোন মাসে আবার ঠিকমত পান না। তিনি এই পরিস্থিতিতে কিভাবে সংসার চালান?
ভেবে দেখুন তো, আমরা যখন কোন ব্যাংকের বুথে গিয়ে টাকা উঠায়; কখনো কি সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞাসা করে দেখেছি একবেলা ডিউটি করে মাস শেষে তিনি ক'টাকা বেতন পান। কিভাবে চলে তার সংসার? পঁচা তরকারি দিয়ে মোটা চালের পান্তা ভাত খাওয়া তো তাদের কাছে এখন আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে শুরু করেছে।
গার্মেন্টসে কাজ করা বোনটি কি পারে তার সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে? একটা কাঠি লজেন্স কিনে দিতে?
রিক্সাওয়ালা, দিনমজুরসহ স্বল্প আয়ের হতদরিদ্র মানুষের জীবন যাত্রায় স্রেফ শাকসবজি দিয়ে ভাত খাওয়া যে এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে; সে খবর কি আমরা কেউ অনুভব করতে পারি!
ধর্মীয় অনুভূতিটাকে আপাতত স্থফা দিন।
সব ধর্মে সৃষ্টিকর্তা একজন। মুসলিম, ইহুদি, খৃষ্টান, হিন্দু - সবার ধর্ম গ্ৰন্থে তা উল্লেখ আছে। সুতরাং সেই মহান পরাক্রমশালী তাঁর সকল সৃষ্টকর্ম হেফাজত করবেন। আপনি আমি কেনো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবো! লজ্জাবতী গাছের মত কুঁকড়ে যাবো মুহূর্তেই।
আমরা আসলে আমাদের অনুভূতিটাকে কোথায় ফোকাস করা উচিত সেটা বুঝে উঠতে পারি না। অথবা কালেকালে বিবেক, বুদ্ধি, নৈতিকতা লোপ পেতে পেতে অনুভূতির বেসিক জায়গাটাকে ধ্বংস হয়ে গেছে।
নিত্য প্রয়োজনীয় মালামালের এই লাগামহীন বৃদ্ধি রোধের ইস্যুতে আমি রাজপথে নামতে প্রস্তুত। কারণ আমার স্ত্রী, আমার সন্তান, আমার বাবা মায়ের দেখভালের দায়িত্বটা আমার।
জিনিসপত্রের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে আমি কেনো; সৎ পথে আমার চেয়ে দু পাঁচগুণ বেশি টাকা আয় করা মানুষও একদিন তার পরিবারের মুখে হাসির বদলে চোখের পানি দেখতে পাবেন; এ ব্যাপারে নূন্যতম সন্দেহ নেই।
বাজার দর ইস্যুতে প্রতিবাদ করা আপনার, আমার, সবার ব্যক্তি স্বার্থে সময়োপযোগী একটি পদক্ষেপ। এটা আমাদের নাগরিক অধিকার। এ নিয়ে ভয় পাওয়া বা বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। বরং এতে করে আম জনতার দাবি দাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার যথা সাধ্য চেষ্টা করবে। এটাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থার প্রচলিত প্রক্রিয়া।