এই ভদ্রলোক(!)কে প্রথম দেখেছিলাম বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের খেলায় বাংলাদেশের বিজয়ের পর।সমগ্র বাংলাদেশ যখন আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর উল্লাস করছিলো এই লোক তখন একটা ভিডিও আপলোড করেন যার মূল কথা " যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ আফগানিস্তান,যাদের দেশে খেলার মাঠ নাই,তাদের বিপক্ষে জিতে এতো উল্লাসের কি আছে, বাংলাদেশের প্লেয়াররা এক ম্যাচ জিতে কয়েক ম্যাচ হারে, রুবেল কেলেংকারি ব্লা ব্লা ব্লা ......... সামনে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের সাথে খেলা আছে 'দেখবো নে' কেমনে জিতো!" এই ভিডিওতে তিনি বেশ কয়েকবার 'দেখবো নে' কথাটা বেশ বিশ্রী ভাবে বলেছেন। বলাই বাহুল্য তার শব্দচয়ন, প্রয়োগ এবং প্রকাশ ভঙ্গি যথেষ্টই আপত্তিজনক। প্রথম লাইনে 'ভদ্রলোক' লেখার পর বিস্ময়সূচক চিহ্ন কেন দিয়েছি তার ব্যাখ্যায় অবশ্যই আসব। আগে কিছু দরকারি কথা বলে নেই। তার ওই বাংলাদেশের প্লেয়ারদের অবমাননা করার জবাব অনেকেই উল্লেখযোগ্যভাবে তার ইউটিউব চ্যানেলের কমেন্টে, ফেসবুক পেজ এ দিয়েছেন। বাংলাদেশ দল স্বয়ং তার এইসব কথাবার্তার জবাব দিয়েছে। তাই আমি আপাতত ওই ব্যাপারে আর গেলাম না।
এই লোক তার পর বহুবার দেশের বিভিন্ন ব্যাপারে যৌক্তিক এবং অযৌক্তিক ভিডিও প্রচার করছিলেন। তার যৌক্তিক ভিডিওগুলো দেখলে আমি ভাবি-ভালোই বলেছেন। মাথায় কিছু আছে। কিন্তু অযৌক্তিক ভিডিওগুলো দেখলে আমি দ্বিধায় পড়ে যাই।
সম্প্রতি তিনি সালমান মুক্তাদির নামক এক অল্প বয়সী ছেলের পিছে লেগেছেন। সালমান মুক্তাদির ইউটিউব সেলিব্রেটি এবং টিভিতে কিছু নাটকও করেছে। এই ছেলে সম্পর্কে তার প্রধান অভিযোগ "বাংলিশ" ভাষায় কথা বলা। এইবার ঈদে সালমানকে কোন একটা টিভি চ্যানেল তার মা সহ আমন্ত্রণ করে। মুফাসসিল ইসলাম সেই ভিডিও দেখে সালমানের মা সম্পর্কে অত্যান্ত নোংরা এবং আপত্তিকর ভাষায় কথা বলেছেন। মহিলার এই লোকের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এখন পর্যন্ত তা করেননি এটাই অবাক হওয়ার বিষয়। মুফাসসিল ইসলামের বয়স ৫০ এর বেশি হবে। তার আচরন, কথাবার্তা কোনভাবেই তার বয়সের সাথে যায় না। সম্ভবত সালমানের একটা মেয়েবন্ধুর সাথে একটা ছবি নিয়ে তিনি যে আপত্তিকর মন্তব্য ছড়াচ্ছেন তাতে কোন ভাবেই তাকে সুস্থ্য বলা চলে না। ফেসবুকে কে কিভাবে কি ছবি দিলো সেটা একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার,তার ব্যাক্তিত্ব এবং চিন্তাধারাকে উপস্থাপন করে। কিন্তু হাঁটুর বয়সী ছেলের ফেসবুক ঘেঁটে ঘেঁটে এইসব ছবি বের করে পাবলিক করে নোংরা মন্তব্য করা মুফাসসিল ইসলামের নিজের ব্যাক্তিত্বকেও কোন অংশে আলোকিত করছে না।
কিছু সোজাসাপ্টা কথাঃ
১) মুফাসসিল ইসলাম, ভাষার উৎপত্তি যদি আপনি পর্যালোচনা করেন তবে দেখবেন ভাষা বরাবরই পরিবর্তনশীল। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগেও বাংলা ভাষা এমন ছিল না,চল্লিশ বছর পর এমন থাকবেও না। ভাষা পরিবর্তন হয় পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে। এই জেনারেশান বাংলা মুভি না, ইংলিশ মুভি আর হিন্দি মুভি দেখে, ইংলিশ বই পড়ে। যৌক্তিকভাবেই এদের অধিকাংশের উপর এর প্রভাব পরেছে।সেতাই স্বাভাবিক। ছোট বাচ্চাও তরতর করে হিন্দি বলে। সেখানে একটা বয়সী প্রজন্ম যাদের আলোচনা এবং আগ্রহ পাশ্চাত্য
সংস্কৃতির প্রতি তাদের আপনি 'বাংলিশ প্রজন্ম' ' বাংলা মা আর ইংরেজ বাবার সংকর" বলে সেই ছেলে এবং তার মাকে অপমান করার সাহস বা অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে? সংকর কিনা সে হিসেবে গেলে তো আপনি সহ পুরো ভারত উপমহাদেশই সংকর জাতি। ব্রিটিশ জাতির মতো ফর্সা গায়ের চামড়া আমরা কিভাবে পেয়েছি সেই ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে বরং আমি না যাই। সেটা সবার জানা। কেউ না জেনে থাকলে ইন্টারনেট আর ইতিহাসের বই আছে।
এবার যদি আমি বাংলা ভাষার কথা বলি তবে আপনার ভাষাও তো পিউর বাংলা না। রীতিমতো নোংরা, অশালীন, অমার্জিত, রুচিবিবর্জিত শব্দের প্রয়োগ আপনার ভাষায়। যদি আপনি বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা থেকে এই সংগ্রামে নেমে থাকেন তবে আপনাকে মনে করিয়ে দেয়া আবশ্যক যে আব্দুল্লাহ আবু সাইদ স্যার, বাংলাদেশের লেখক, কবিগণ অশালীন ভাষার প্রয়োগ ছাড়াই আমাদের মনে বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা জাগিয়ে তোলেন, একটা বাংলা বই পড়ে দেখতে অনুপ্রানিত করেন। এদের কাছ থেকে শেখার মতো অনেক কিছু আছে আপনার, শিখে নিন। শিখলে কেউ ছোট হয় না। শেখানোর জন্য ন্যূনতম যে যোগ্যতা দরকার তা তো অন্ততপক্ষে থাকা চাই।তা নয় কি?
২) মেয়েদের ছবি কালেক্ট করে, তাদের ড্রেস আপের নোংরা বর্ণনা দেয়া কি খুব বেশি অসভ্যতা নয়? যদি আমি ব্যাক্তি স্বাধীনতার কথা বলি তাহলে বলবো ওই মেয়ে বা ছেলের ছবি কালেক্ট করে তার কান গরম হওয়া বর্ণনা দেয়ার অধিকার আপনার নেই। যদি সমাজের সিনিওর সিটিজেন হিসেবে এই ক্রমবর্ধমান অতিআধুনিকতা আপনার চোখে লাগে তাহলে প্রতিবাদ করুন অন্যভাবে। দেশে বিদেশীয় সংস্কৃতির আগমন বন্ধ করতে আন্দোলন করুন, ভারতীয় চ্যানেল বাতিল করতে আন্দোলন করুন। রাস্তায় বড় বড় অশালীন পোষ্টার ঝুলায় জামা কাপড়ের(যেখানে মডেলদের কাপড়ের সংকটই প্রগাঢ় ভাবে চোখে লাগে) সেসব বন্ধের আন্দোলন করুন। কারণ এই অল্পবয়সী জেনারেশান স্বভাবসুলভভাবেই এসবের প্রতি আকৃষ্ট ও অনুপ্রানিত হয়। তাতো করতে দেখি না আপনাকে।
৩) বয়সে বড় হলেই কাউকে সম্মান করতে হবে এই নীতি সুমাইতা মানে না। আপনি সম্মানের যোগ্য হলে বয়সে ছোট হলেও আপনাকে আমি সম্মান করব। সম্মান আদায় করে নিতে জানতে হয়। আপনি যা করছেন তাতে ছেলে মেয়ে গুলোকে আপনার বাজে বিহেব শিখতে এবং অভাবে ব্যাবহার করতে অনুপ্রানিত করছেন। আপনার ডায়ালগ "এবার খেলা হবে!" দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলার মধ্যে আমি সম্মান করার মতো এলিমেন্ট খুঁজে পাই না। ভালো ব্যাবহার করুন, আর যদি তা আপনার পক্ষে সম্ভব না হয়ে থাকে তবে 'সিনিওর সিটিজেন" ট্যাগ নিয়ে মুখে কুলুপ আটকে থেমে যান। সেটাই উত্তম !
এই ব্লগ তার চোখে পড়লে পরবর্তীতে আমাকে নিয়ে এক অশালীন ভিডিও বের করলেও তাতে অবাক হব না। তবে আমি চাই এই লেখা তার চোখে পড়ুক!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫০