somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেনুকাহন

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিয়ের রাতেই লোকটা যখন প্রথম প্রশ্ন করলো “তোমার বিয়ের আগে কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক ছিল?” তখন বেনু অনেকক্ষণ কোন কথা বলতে পারেনি। আনিস রুমে আসার আগে ওকে যখন সাজিয়ে গুছিয়ে বিছানার উপর বসিয়ে বাড়ির মহিলারা কিছু অশ্লীল কথা বলে টিপ্পনী কাটছিল তখনই বেনুর গা গুলাচ্ছিল। নতুন বউ, সোজাসুজি কিছু বলাও যায় না তাই চুপ করে বসে ছিল। একেকটা কথায় যেন তার কানে কেউ আগুন ঢালছিল। মনে হচ্ছিলো কানটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে! মহিলারা আরো কিছুক্ষন থেকে দরজা টেনে দিয়ে বেরিয়ে গেল। তখন থেকে বেনুর হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছিলো। অপরিচিত একটা ঘর, অপরিচিত রুম, অপরিচিত সব। আজ থেকে তাকে সবকিছু আপন করে নিতে হবে,মানিয়ে নিতে হবে সবকিছুর সাথে প্রতিনিয়ত। ভাবতেই কেমন যেন ভয়, আর প্রচণ্ড মন খারাপ চেপে ধরলো। দম আটকে আসছে তার।

আনিসের সাথে বেনুর বিয়েটা হুট করেই হয়ে গেল। বিয়ের আগে আনিসের সাথে বেনুর একটা শব্দও কথা হয়নি তার। সামনাসামনি দেখাও হয়নি।চাচী ছবি এনে সামনে ফেললেন – এর সাথে তোর সামনের শুক্রবার বিয়ে। ছেলে ভাল,ব্যাবসা করে। বয়স একটু বেশি কিন্তু সেটা কোন সমস্যা না। ভালো ছেলের বয়স একটু বেশিই হয়। আগে এক বিয়ে হয়েছিলো অবশ্য। দুই বছরের মাথায় বউ মারা যায়। এক ছেলে আছে। আজকাল এইসব কোন সমস্যাই না। আর তাছাড়া তুইও কোন আরবের খোরমা খেজুর না! তোর মতামত নিতে আসিনি,জানিয়ে দিতে এসেছি। তোর চাচা সব ঠিক করে ফেলেছেন।চাচী যেতে যেতে আবার ফিরে এলেন। কিছু মনে পড়েছে হঠাৎ এভাবে বললেন- তোর মায়ের দুইটা চুড়ি আছে না তোর কাছে? সেগুলো দে তো। বিয়ের অনেক খরচ। হুট করে সব ঠিক হয়ে গেল,হাতে টাকা-পয়সা তেমন নেই। আর তাছাড়া তোর জন্যই তো খরচ হচ্ছে! বেনু কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন নড়তেও ভুলে গেছে। বিয়ের খবরে তার যতটা না কষ্ট হল চাচীর এভাবে চুড়ি চাওয়াটা আহত করলো তার চাইতেও বেশি। ‘কিন্তু চাচী সেগুলো আমার কাছে মায়ের এক মাত্র স্মৃতি। আমার কাছে আমার মায়ের আর কিছুই যে নেই!’ কান্নাটা আর চাপতে পারল না। ‘তো কি হয়েছে? চুড়ি কি আমার জন্য চাচ্ছি? তোর বিয়ের খরচের জন্যই তো চাচ্ছি। একজীবন খাওয়ালাম পড়ালাম, এখন বিয়ের খরচও যোগাতে হবে?” চাচীর এই চেহারা সে আগেও দেখেছে যখন মায়ের অন্যান্য গয়নাগুলোও চাচী নিয়ে নিয়েছিলো!

ছোটবেলা থেকে এই চাচার কাছেই সে মানুষ হয়েছে। চাচাতো ভাই-বোন গুলোর খেয়াল রাখতে গিয়ে বেশি দূর পড়ার সুযোগ হয়নি। চাচা-চাচীর কোন কথার অবাধ্য সে কখনো হয়নি। পরিস্থিতি যেমনি হোক হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়েছে কারণ নাহলে তার মৃত মায়ের নামে খুব খারাপ খারাপ কথা শুনতে হয়। মা চলে গেছে তার ১০ বছর বয়সে। মায়ের সাথে আর খুব বেশি সুন্দর স্মৃতি নেই। বিয়ের এক বছরের মাথায় বাবা মারা যাওয়ার মায়ের গায়ে লাগে “অলুক্ষুনির’ পদবী! দাদা-দাদী, চাচা-চাচী কেউ মাকে সহজভাবে মেনে নেয়নি। একা মানুষটা সারাদিন গাধার মতো মুখ বুঝে খাটত আর গভীর রাতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদত। কত রাতে মায়ের কান্নার শব্দে বেনুর ঘুম ভাবে তার ইয়ত্তা নেই। বেনু আলতো করে মায়ের গায়ে হাত রাখতেই মায়ের ফুঁপানো থেমে যেত। যে মানুষটা বেঁচে থাকতে এত কষ্ট পেয়েছে তাকে মরার পর আর বদনামের ভাগিদার করতে চায়নি বেনু। তাই কখনোই চাচা-চাচীর কথার অমত করেনি।কিছুতেই না। তাই বিয়ের প্রস্তাবেও চুপই থাকলো।

ছেলে সম্পর্কিত তার প্রচণ্ড একটা ভয় কাজ করতো। চাচার সামনে সে কখনোই পড়তে চাইতো না পারতপক্ষে। চাচাও বুঝে গিয়েছিলেন এই মেয়ের কোথাও যাওয়ার নেই। মুখ থেকেও এর মুখ নেই। তাই চাচা এর সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন কয়েকবার বিভিন্নভাবে। কিন্তু চাচী সবসময়ই বাসায় থাকতেন তাই প্রতিবার ছুটে পালিয়ে বেঁচে যেত। চাচা যতক্ষণ বাসায় থাকতো তখন নিজের রুম থেকে বেনু বের হতো না।গভীর রাতে রুমের দরজার মৃদুশব্দে আর কুঁকড়ে যেত। থরথর করে কাঁপত। একদিন চাচী বাসায় ছিলেন না। চাচা গেলেন ব্যাবসার কাজে শহরে। চাচী যাওয়ার পেছনেই চাচা ফিরে আসবে এমনটা অনুমানও করেনি বেনু। দরজার টোকা শুনে সরল মনে দরজা খুলে দিয়েছিল...
এই ঘটনা চাচী হয়তো অনুমান করে নিয়েছিলেন। সোজাসুজি কিছু জিজ্ঞেস করেননি। তবে সেদিন এই নিয়ে ঘরে ভীষণ তুল্কালাম হয়েছিলো। সেই ঘটনার দুইদিনের মাথায় এই বিয়ের প্রস্তাব! বেনু এই ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেয়ে যেমন খুশি হয়েছিলো তেমনি তার শতগুণ ভয় চেপেছিল আসন্ন সময় নিয়ে। মনে মনে ঠিক করেছিল বিয়ের রাতেই লোকটাকে সব খুলে বলবে। কিছুই লুকাবে না। লোকটার ব্যাপারে ভাগ্য মেনে নিবে। কিন্তু এটাও সে ভালো করেই জানে কোন পুরুষ মানুষই এমন একটা ঘটনা সহজে মানতে চাইবে না। তবুও মনের কোথাও একটা সূক্ষ্ম আশা কাজ করছিল... হয়তো মানুষটা বুঝবে! কিন্তু বেনু জমে গেল। বিয়ের রাতে লোকটার প্রথম আলাপের প্রথম প্রশ্ন শুনে বেনু অনেকক্ষণ কিছুই বলতে পারল না... সে জানে না কোত্থেকে শুরু করতে হবে, সে জানে না সে কি বলবে। আসলে বেশি কিছু আশা করাই ঠিক না। আজাদ কথা দিয়েছিল সে বউ করে ঘরে তুলে নিবে। বেনুর কষ্টের কথা সে জানত। বেনুর কষ্টে ওই মানুষটারও চোখ ভিজতো। কিন্তু ওই মানুষটাও এই ঘটনার পর বেনুকে মেনে নিতে পারেনি। বেনুর কাছে সব কথা শোনার পর যে দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সে দৃষ্টিতে করুনা ছিল, ভালোবাসা না। মানুষটা উঠে চলে গিয়েছিল আর ফিরেও চায়নি। সেই মানুষটা যদি এমন করতে পারে তাহলে আসলেই বেনুর আর কিছু আশা করা উচিত না। অন্তত এই মানুষটার কাছে না,একে সে চেনেই না!

ঘরের এই আবছা অন্ধকার আলোটাকে সে বড্ড ভয় পায়। চেনা মুখও অচেনা হয়ে যায় এই আলোতে। বেনুর ইচ্ছে করছে এই আঁধার ভেঙ্গে ছুটে পালিয়ে যেতে। দূর, বহুদূর। যেখানে কেউ তাকে চেনে না,সে কাউকে চেনেনা। কিন্তু মনে হচ্ছে সে আঁধার একটা গোলকধাঁধাঁয় আটকা পড়েছে। যেখান থেকে পালানোর পথ তার জানা নেই।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:০৩
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×