somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিঠিঃ বৃষ্টিতে ভেজার পরে, নিজেকে আবারো ভিজিয়ে...

১৮ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রিয় ‘লী’,
নেশাগ্রস্থের মত আচরন করছি, মনে হচ্ছে অন্ধকার ঘরে চোখে কালো পট্টি বেঁধে ছেড়ে দিয়েছে কেউ, আর আমি হাতড়ে খুঁজে ফিরছি আমার আমিকে, আমার বসার চেয়ার, ঘুমানোর বিছানা, সিগারেটের প্যাকেট, দিয়াশলাই, ছাইদানি, পানির বোতল। মাতাল অন্ধকারে বসে আছি এক পরগাছার মত। খুঁজে বেড়াই শিঁকড়, অথবা অসহায় অস্তিত্বের প্রান্তিক ভূমি। বিশুদ্ধ অন্ধকারে আপাপবিদ্ধ চাঁদ ধরা দেয় আনমনে শাপগ্রস্থের মত। হুম, আজ অন্ধকারের কলঙ্ক শুধু ঐ সূর্যের কড়া রোদে ঝলসে যাওয়া সবুজ গোলক পিন্ড অথবা বয়সের আঁচড় পড়া তোমার শ্রীহীন মুখ। যে মুখে আমি দেখেছিলাম জীবন আর অনুমানে শিখেছিলাম ধাঁরাপাত। বর্ণমালাগুলোও ধরা দিতো নতুন নতুন অর্থ নিয়ে।

অথচ কি আশ্চর্য, একবার ও বলিনি তোমাকে, তুমিই ধরা দিতে চেয়েছিলে অনেকটা হ্যাঙলার মত, একবার না বারবার। অনেকবার। আমি অবাক হয়ে যেতাম আমার কৃপনতায়। যখনই আগল খুলতে চেয়েছি, দীনতাগুলো চেঁপে ধরতো আমার টুটি। অতীতের ব্যার্থ আবেগ যাতে পুনরায় মাথাচাড়া না দেয় এই ভেবে তটস্থ ছিলাম তখন, অথবা জন্মদাত্রীর বেখেয়ালে বলা “সবকিছুরই একটা উপজুক্ত সময় আছে, সময়ের কাজ অসময়ে করলে খুব খারাপ দেখায়, আফসোস করতে হয় সারাজীবন” অমোঘ বানী হয়ে নির্জন বনের ঝিঁ ঝিঁ পোকার মত কানে বাজতো একঘেয়ে হয়ে।

কেনো জানিনা, আমি হ্যাঙলা হতে পারিনি কখনো, যখন মুখের একটা কথায় ‘লাবন্য’ চলে গিয়েছিলো বিয়ে করতে বিলেতফেরত কোন এক পকেটভারি অপরিচিত মানুষকে, তখনো না। যাকে দেখে টাকার ভারে ন্যূজ পেটমোটা মানিব্যাগ ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি আমার। তখনও কিছুই বলতে পারিনি, আমি পারতাম ওকে যেতে না দিতে, হয়তোবা ছলে নতুবা বলে, কিন্তু আমি তা কখনোই চাইনি। চাইনি কারন ভালোবাসা দিয়েই রাখতে চেয়েছিলাম। বিশ্বাস করতাম, “ভালোবাসলে ফিরে আসবে ঠিকই”। অবাক করা ব্যাপার, সে ফিরে এলো ঠিকই, ভালোবাসায় নাকি জীবনের ব্যার্থতা ঘোচাতে জানিনা, কিন্তু ততদিনে আমার ভালোবাসাটা আর ছিলোনা। তখন এমনকি এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, যাওয়ার সময় আমিই ওকে বলেছিলাম, “আজ তোমাকে মুক্ত করে দিলাম, ভালোবাসা নিয়ে ফিরে এসো, যদি কখনো ভালোবাসতে পারো সত্যিকার করে, পরিপূর্ন ভাবে”। নিজের অপরিপক্কতা কে আজ গালি দিতে ইচ্ছে হয়।

তুমি তো জানতে সবকিছুই, তারপরও তুমি কেন আমাকেই পছন্দ করতে গেলে, জানতে না যে যুদ্ধাহত মানুষ যুদ্ধকে ভয় না পেলেও যুদ্ধের কুচক্রী মহল কে এড়িয়ে চলে সবসময়ই। না ভয় থেকে নয়। ঘৃনা থেকে। একটা গাঁ শিরশির করা অনুভুতি, তোমার শরীরে কখনো জোঁক উঠেছিলো? যদি না উঠে থাকে ঠিক বুঝবে না কি ভয়ংকর সেই ঠান্ডা অনুভূতি। নিজের শরীরে বসে রক্ত খেয়ে যাওয়া দেখতে ক’জনই পারে বলো সহ্য করতে??? অনেকে পারলেও আমি পারিনি, তাইতো তোমাকে ভালো লাগলেও বলতে পারিনি ভয়ে, সে আমার নিজের সাথেই এক গভীর যুদ্ধ, কত যোগ-বিয়োগ, জ্যামিতি, ত্রিকোনমিতি ...... তারপরও পারিনি নিজেকে বোঝাতে। কেনো যেনো একটা তুলনা চলে আসতো সবসময়, যখনই সাহস গুলোকে জড়ো করে নিজেকে খুলে দিতে চাইতাম তোমার কাছে, তখনই অতীতের কংকালগুলো সামনে বসে মুখ কেলিয়ে হাসতো, আর আর আমি মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতাম নদীর ভেঙ্গে যাওয়া কিনারায় শিকড় বের করে দাঁত-মুখ খিচিয়ে থাকা এক বটবৃক্ষের মতো। সত্যি বলছি, তোমাকে কষ্ট দিয়ে তোমার কষ্টবোধকে ভোঁতা করা ছাড়া আর কোন অভিসন্ধি তখন আমার ছিলোনা।

মনে পড়ে, আমার একটু পর পর সিগারেট খাওয়া দেখে একদিন বলেছিলে, “আপনি সিগারেট খুব বেশি খান, কমাতে পারেন না?” আত্ম অহংকারী আমি বলেছিলাম “ঠিকই বলেছো, যেদিন কোনকিছু আমাকে খাওয়া শুরু করবে সেদিনই আমি তা ছেড়ে দিবো, আমী সিগারেট খাই, কারন সারাজীবনে পাওয়া বন্ধু আর সঙ্গীগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশী বিশ্বস্ত, ছেড়ে যায়নি কখনো, আর যাবেওনা যতক্ষন না আমি ছাড়বো।“ বিশ্বস্ত সঙ্গী নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মূহুর্তেই অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলো তোমার মুখ। খুব কি কষ্ট পেয়েছিলে সেদিন? জানো সঙ্গীর অভাব না ঘুচলেও এই বাজে অভ্যাস টা ছাড়ার চেষ্টা করেও বারবারই হেরে যাচ্ছি নিজের ইচ্ছা শক্তি আর মনোবলের কাছে। সে খুব বিশ্বস্ত সাথী আমার শত অবহেলাতেও আজ আর পিছু ছাড়ছেনা।

ভেবেছিলাম হাত বাড়ালেই তোমাকে পাওয়া যাবে, যেহেতু হাতের নাগালেই ছিলে অনেকটা দিন। রাগ করেও দূরে যেতে পারোনি, ফিরে আসতে বারবার। আর আমি আগের চেয়েও আরো বেশি অহংকারী হয়ে অতিষ্ট করে তুলতাম তোমাকে। কেন তুমি এতো সহজলভ্য হয়ে গিয়েছিলে, কেনো নিজেকে এতো খেলো করেছিলে তুমি আমার কাছে? তোমার সহজলভ্যতায় (!) খুব বেশি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কোনকিছুই দূর্লভ করতে চাইনি, পাছে সুগন্ধি ছড়িয়ে উড়ে যায়......

আজ তোমাকে খুঁজি পথে পথে, ধারন ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী উঠা বাসের এক কোনে বসে আনমনে বাইরের দিকে চেয়ে থাকা মেয়েটির মুখে, অথবা শহরের পথের ভীড়ে হঠাৎ করেপরিচিত একটি মুখ দেখে চমকে উঠার প্রতিক্ষায় হেটে যেতে থাকি পরিচিত অপরিচিত সবগুলো পথে, শুধু যাওয়া হয়না খুব পরিচিত তোমার পথে। যেখানে গেলে নিশ্চিত করেই জানি পাবো তোমার দেখা। নিজেকে বোধহয় কখনোই সহজ করতে পারবোনা। তাইতো নাম্বার থাকা সত্তেও ফোন করতে পারিনা, ভয়ে কুঁকড়ে থাকি, যদি হারিয়ে ফেলি আমাকে আবারো।

প্রকৃতি উজাড় করা তুমুল বৃষ্টি আমার খুব প্রিয়, আমি রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। ভিজতে। ভিজাতে শুকনা খটখটে মনের ভিতরও। আজো ভিজলাম, জমে থাকা কষ্টগুলো উড়িয়ে দিতে কালো মেঘের দলে। পারিনি শুধু তোমাকে উড়িয়ে দিতে............

শুভকামনায়,
‘সু’

তারিখঃ ১৮ই আগষ্ট, ২০০৯
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১০:২২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×