somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: উড়োজাহাজ অথবা এক অভিশপ্ত রাজকন্যার গল্প

১৪ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সারাদিন বিভিন্ন কাজ এবং অকাজের পর মধ্যরাতে বাড়ী ফেরা; শ্যাওলা পড়া দেয়ালগুলো যেন মনেরই প্রতিচ্ছবি। অতঃপর ঘৃনা অথবা ভালোবাসার পদাবলী......... জীবনের আবর্তন এভাবেই। তারপর কোন এক রাতের আঁধারে একটা চিরচেনা মুখ, দেখা হলেই খেলার সার্থক সমাপ্তি। জন্ম অথাবা জীবনের আখ্যান হয়তো এটা নয়, তবুও এটাই সত্য।

মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একা, কিন্তু আশ্চর্য হচ্ছে যে আমরা কখনো একা থাকতে পারেনা। সংকটে পড়লে আমরা কেমন দলবদ্ধ হয়ে পড়ি, ভাগ বাটোয়ারার হিসাব আপাততঃ স্থগিত রেখে আমরা দলবদ্ধভাবে ব্যস্ত হই নিজের স্বার্থ সংরক্ষনে, এবং সেভাবেই পূর্ণ হয় দলগত প্রাপ্তির কোষাগার।

মফস্বল থেকে এসে হঠাৎ করে বড় হয়ে পড়া আমিও কেমন যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম ইট, সূড়কি, আর বালুর তৈরী মনের আড়ালে। হয়তো হারাতেই এসেছিলাম আমি, শহুরে দীণতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারা আর জীবন কে আঁকড়ে ধরেঅতীতের আঘাত দ্বারা সৃষ্ট অপঘাত গুলোকে উপড়ে ফেলে দিতে গিয়ে কখন যে আমি নিজেই হারিয়ে গিয়েছিলাম ইতোমধ্যেই নিজেকে হারিয়ে ফেলা এই শহরে। হারতে হারতে যখন নিজেকে খুজছিলাম; যখন নিজেকে শুদ্ধির (!) অবান্তর ভাবনায় যোগাযোগের সবগুলো পথ ছিন্ন করে দিয়ে সূর্যের সাথে ঝগড়া করে গৃহবন্দি হয়ে ১৭ টি দিন পার করে বের হয়ে এসেছিলাম লাল-নীল আলোয়... তখনো আদতে আমি কিন্তু একাই ছিলাম, আর কারো সাহচর্য তখন আমাকে বিন্দুমাত্র আন্দোলিত না করে বরং কিছুটা বিরক্তিরই উদ্রেক করত।

হারাতে হারাতেই যখন আমি তলিয়ে যাচ্ছিলাম তুই খুজে পেলি আমায়, খুজে পেয়েছিলি আগেই শুধু চিরায়ত সত্যের ধোয়া তুলে ধরা দিলি দেরিতে। মনে পড়ে সেই চায়ের কাপ আর সিগারেটের ধোঁয়ায় পোড়া দুপুর, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিকাল, আর কথায় কথায় রাত, রাতের রাস্তায় হেটে হেটে রাত্রি যাপন, অথবা সম্বলের শেষ সিগারেটের পর যখন ভোর রাতে হাটতে হাটতে পলাশী গিয়ে আরো ঘন্টাদূয়েকের রসদ নিয়ে ফিরে এসে পুনরায় দেশশুদ্ধ মানুষের সমালোচনা শুরু করতাম। মনে পড়ে পরদিন সকালের মিড টার্ম পরীক্ষার চেয়েও আমাদের কাছে গুরূত্বপূর্ন হয়ে উঠতো সামাজিক অসংগতিগুলো। কোনমতে উতরে যাওয়া রেজাল্ট নিয়ে মাথাব্যথা ছিলোনা কারোই।

নীতু তোকে ভালোবাসতো, তুই বাসতি না, আবার ওকে তোর এই অবাধ প্রশ্রয় দেয়াটা আমি কখনোই সমর্থন করতে পারিনি। নীতুই কিন্তু ওর ঘনিষ্টজন ভেবে আমার করা সাহায্যের (!?) প্রতিদান দিতে আমার জন্যে যোগার করে এনেছিলো ওর বান্ধবী বিথীকে। খুব বেশী সুন্দর না হলেও সপ্রতিভ ব্যক্তিত্ব দিয়ে নিজেকে আকর্ষনীয় করার সব যোগ্যতাই তার ছিলো। আমার যুক্তি গুলোকে খোঁড়া প্রমান করতে তোর তখন বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি। দমকা হাওয়ার মত আসা সেই সময়ে তুই-ই কিন্তু সবচেয়ে বেশী উৎসাহ যুগিয়েছিলি আগেই পোড় খাওয়া আমাকে। হুম আজ আর অস্বীকার করবোনা, অস্থির আমাকে সেই পেরেছিল কিছুটা স্বস্তি দিতে, আর তুইতো ছিলিই সেতু হয়ে আমাদের মাঝে।

যখন আমরা আরো নিকটবর্তী হচ্ছিলাম, এগিয়ে যাচ্ছিলাম কোন একটা নিশ্চিত গন্তব্যের দিকে, তখনই হঠাৎ করে সবকিছু থেকে তোর নিজেকে সরিয়ে নেয়াটা একটু ধাক্কার মতই ছিল। আলস্যে ভড় করা মস্তিস্কও হিসাব মিলাতে বড্ড দেরী করছিলো। তোর এই নিরাসক্ততা আর পড়ালেখায় মনোনিবেশ কে প্রথমে স্বাগত জানিয়েছিলাম সুমতি ফিরে আসার ভুল হিসাবেই।

তারপর কিছু না বলেই তুই অদৃশ্য। আজীবন গালাগালী করা আমেরিকাকেই বেছে নিলি উচ্ছশিক্ষার উৎকৃষ্ট স্থান হিসেবে। পৌছে হতবাক আমাকে বলেছিলি আমরা ওদের মত কখনোই হতে পারবোনা তাই গালাগালি করি নিতান্ত অক্ষমতা থেকেই। সেই শেষবারের মত যোগাযোগ, নতুন নাম্বার নেয়া বোধহয় তোর এখনও হলোনা।

আমার ভুল আমি বুঝেছি ঠিকই, তাইতো বিথীর সাথে আর যোগাযোগের চেষ্টা করিনি, তার শত চেষ্টাকেও বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে। একটা মানুষ কতটা কষ্ট সহ্য করতে পারে বলতে পারিস? কষ্ট লোহাকে সোনা করে এটা বোধহয় জানিস, কিন্তু গলে গলে যে পানির মত করে বাতাসেও মিলিয়ে যেতে পারে, এটা কি ভেবেছিস কখনো??

কিছুদিন আগে শুনলাম ওর নাকি বিয়ে গেছে। আবাক হতে ভুলে গেছি বলেই হয়তো আমেরিকা প্রবাসী পাত্রের কথা শুনেও খুব বেশী অবাক হইনি। চিরকালই জীবনের যোগবিয়োগে অপরিপক্ষ আমি এখানেও হিসাব মেলাতে ব্যর্থ।

আর নীতু এখনও বসে আছে, ঠিক আগের মত, পাগলের মত। মধ্যরাতে মাঝে মাঝে ঘুম ভাঙ্গলে দেখি বারান্দায় গিয়ে চেয়ে আছে আকাশের দিকে, ভাবে ওর স্বপ্নের উড়োজাহাজে করে এই বোধহয় তুই এলি। উদ্ধার করতে, আবারও ওকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে, হারিয়ে যাওয়া সেইসব স্বপ্নের সময়ে। না আমি কোন রাগ করিনা, আমিও ওর পাশে থেকে থেকে যে সেই উড়োজাহাজটির অপেক্ষা শুরু করেছি নিজের অজান্তেই....

যখন খুব বেশী ক্লান্ত লাগে আড়াল খুজি সিগারেটের ধোঁয়ায়। ঝাপসা চোখে আশ্রয় খুজতে থাকা মানুষটির আশ্রয় আর হয়ে উঠা হয় না।

আর আমি শত ঝামেলার মাঝে থেকেও একাই আছি, আয় আবারো আমরা দলবদ্ধ হই, তুই চাইলে না হয় একটি চুক্তিও করে নিবো সেখানে কাউকে কোন ব্যক্তিগত কথা বলার অধিকার দেয়া হবেনা। আয় তোর উড়োজাহাজে ভড় করে আবার তুই ফিরে আয়, সংকটে পড়ে শংকিত আমরা আবার ও শুধু বেঁচে থাকার জন্যেই বেঁচে থাকি।

মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে আকাশ পানে চেয়ে থাকা এক অভিশপ্ত রাজকন্যার অসম্পূর্ন স্বপ্নের ব্যর্থতার পূর্ণতা দিতে হলেও তুই ফিরে আয়।


(গল্পটি আগেও একবার প্রকাশ করা হয়েছিলো)
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×