সেবছর সৌদিতে বাংলাদেশের দুদিন আগে রোজা শুরু হয়েছিল। দেশে ছুটিতে এলাম আব্বা আম্মার সাথে মজা করে ঈদ করতে। কিন্তু আমার ৩১টি রোজা রাখা হয়ে যাচ্ছিল দেশের হিসাবে ঈদ করতে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সবার সাথেই রোজা রেখে যাব, এবং দেশের ঈদের দিনে আমারও ঈদ।
আব্বা স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে পরামর্শ করে এলেন। তিনি বললেন, ত্রিশ দিনের বেশী রোজা হতে পারে না, তাই শেষটা ছেড়ে দিতে হবে। আরো জানালেন, ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। আব্বার কাছে জানতে চাইলাম, ইমাম সাহেব কোন ঈদের কথা বলছেন, যেহেতু আমি কোন যুক্তিতেই সৌদিতে অবস্থান করছি না।
আব্বা অস্থির হয়ে আমাকে নিয়ে গেলেন ইমাম সাহেবের কাছে। আমি ওনার সাথে একমত প্রকাশ করলাম যে ৩০টি রোজা রেখে ৩১তম টি ছেড়ে দিলে আমার কোন ক্ষতি নেই। সেই সংগে সবার সাথে থাকার আগ্রহ জানালাম এবং নিজেকে ভিন্ন দেশের বাসিন্দা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত না করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলাম।
তারপর ইমাম সাহেবকে জিগ্যেস করলাম, আমি যদি বাংলাদেশ থেকে রোজা শুরু করতাম, সৌদিতে গিয়ে আমার ২৮ রোজার দিনে ওখানকার ঈদ হয়ে যেত, তখন আমার কিরূপ করতে হত? বিজ্ঞ ইমাম সাহেব, যিনি আমার অনেক শ্রদ্ধার পাত্র, জানালেন, ন্যূনপক্ষে ২৯ দিন রোজা রাখতেই হবে।
-তাহলে যে ওখানকার ঈদের দিন আমাকে রোজা রাখতে হবে, সেটাও কি হারাম হয়ে যাবেনা? এবার আমি প্রশ্ন রাখলাম।
অভিজ্ঞ ইমাম সাহেব আমার কথায় একটুও রাগলেন না। মুখে স্বভাবসুলভ হাসি বজায় রেখে আব্বাকে বললেন, ডাক্তার সাহেব, আপনার ছেলের কথায় যুক্তি আছে!
সেই বছর ৩১টি রোজাই রেখেছিলাম শেষ পর্যন্ত। কবরে গেলেই শুধু জানা যাবে, সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল কিনা।
আমার ৩১ রোজার ঈদ নিয়ে লিখতে গিয়ে ২৮ রোজার আরেকটি ঈদের কথা মনে পড়ে গেল। সেবার সৌদিতে ৩০শে শাবানের পর রোজা শুরু হল। কিন্তু ২৮ রোজার রাতেই শাওয়ালের (ঈদের) চাঁদ উদিত হয়। বাদশাহ ফাহাদের আমলে ঘটেছিল এই ঘটনা। বাতাসে গুজব রটল, কেয়ামত সন্নিকটবর্তী। পরবর্তীতে বাদশাহ ফাহাদ প্রকাশ্যে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং সবাইকে একটি রোজা রাখতে অনুরোধ করলেন।