somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সপ্তকাণ্ড মজিদ ভাই

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মজিদ ভাইয়ের মনে বড় দুঃখ। সেই দুঃখে মজিদ ভাই সারাক্ষণ মুখটা কালো করে রাখলেও সেটা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। কারণ মজিদ ভাইয়ের গায়ের রং কুচকুচে কালো। তাঁর দুঃখ হলো, ‘গায়ের রং ঠিক আছে, কিন্তু আমি বিদেশে জন্মালে কি কোনো সমস্যা ছিল? কে না জানে, বিদেশে কালোদের কত খাতির! সাদা চামড়ার অপরূপ ক্লাসিক মেয়েরা তাদের পাশে খাটকাল চেহারার কালো ছেলেদের নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।’ খোদাতালার একটা সাধারণ ডকুমেন্টেশনের ভুলের জন্য তিনি বিদেশের আমির না হয়ে আজ দেশের ফকির!
মজিদ ভাই অবশ্য এই ব্যারিয়ার ভাঙার চেষ্টা করেছেন। বিদেশের মাটিতে তাঁর দর্পিত কৃষ্ণকায় পা-খানা রাখার অদম্য ইচ্ছায় তিনি দেশের মাটি বেচে দিয়েছেন। মানে শনির আখড়ার তিন কাঠা জমি বেচে পয়সা দিয়েছেন আদম ব্যাপারীকে। পরিণতিতে সেই আদম ব্যাপারী লাখপতি হয়ে গেছে, কিন্তু মজিদ ভাইকে এখন পয়সা জমাতে হচ্ছে কবরের জমি কেনার জন্য। কারণ মজিদ ভাইয়ের আম্মা এই ঘটনা জানতে পারলে কবরে গিয়ে শুয়ে পড়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই...
বেশ কিছুদিন বুম হয়ে থাকার পর আবার একদিন জেগে উঠলেন তিনি। ভাবলেন, চেহারাটাকে নতুন উদ্যোগে একটু খোলতাই করার চেষ্টা করা যাক। এরপর আরও নানা কাহিনি। ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর পুরুষ সংস্করণ গালে মেখেছেন। এতে বন্ধুরা বলেছে, ‘মুখের মধ্যে এ রকম পাতলা চুনকাম করেছে কে রে?’
শীতকালে মুখটা ঝকঝকে দেখানোর জন্য বিদেশি সুগন্ধভরা ক্রিম মেখেছেন। বন্ধুরা দেখে বলেছে, ‘কী রে, মুখটাকে তো একেবারে পালিশ করা লেদারের জুতো বানিয়ে এনেছিস!’
বন্ধুরাই যদি এ রকম কথা বলে, তাহলে শহরের সুন্দরী মেয়েরা কী বলবে? মজিদ ভাইয়ের দৃঢ় বিশ্বাস, তিনি আর দশটা মানুষের থেকে আলাদা। সবাই তাদের বুকের মধ্যে হার্টের পাশাপাশি ফুসফুস, কলজে-মলজে অনেক কিছু নিয়ে জন্মায়, কিন্তু মজিদ ভাইয়ের পুরো বুকটা জুড়ে শুধুই একটা রেকর্ড মাপের হার্ট। যে হার্টের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, অন্দরে বন্দরে তন্বী তরুণীদের জন্য বন্যার পানির মতো এক হাঁটু ভালোবাসা থই থই করছে।
কিন্তু হায়, সেই হাঁটুপানিতে কোনো লাস্যময়ী জলকেলি বা নিদেনপক্ষে একটু ঝাঁপাঝাঁপিও করতে এল না!
মজিদ ভাইয়ের আম্মা দীর্ঘদিন ধরে তার বিয়ের চেষ্টা করে আসছেন, কিন্তু আজন্ম প্রেমিক মজিদ ভাইয়ের মতে, সম্বন্ধ করে বিয়ে করা মানে নেহরু-ভুট্টোর মতো মিটিং করে দেশ পাওয়া, আর নানা ধরনের পক্ষ-বিপক্ষ মতের সামনে দাঁড়িয়ে প্রেম করে বিয়ে করা মানে লড়াই করে দেশকে স্বাধীন করার মতো ব্যাপার।
কিন্তু দীর্ঘদিন নানা জায়গায় চেষ্টাচরিত্র করে মজিদ ভাই যখন মেয়েদের ঠাট্টা-মশকরা-অবহেলায় পর্যুদস্ত, তখন সব চিন্তা বাদ দিয়ে তিনি নেহরু-ভুট্টো তত্ত্বের দিকেই এগোলেন। নাইল নদীর মতো লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আম্মাকে বললেন, ‘ঠিক আছে, পাত্রী দেখো...আমাকে কিছু দেখানোর নেই, তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ!’
পরাজিত সম্রাটের মতো হাঁটতে হাঁটতে আম্মার ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। ছাদে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হে রাতের আকাশ, তুমি কালো তবু কতই না রূপবান... তোমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কত অষ্টাদশীর নির্ঘুম রাত কেটে যায়, অথচ...’
এ রকম যখন ভাবছেন, ঠিক তখনই মাথায় টুপ করে এক ফোঁটা পানি পড়ল! মজিদ ভাইয়ের দুঃখে আজ আকাশের চোখেও পানি! ভাবতেই মজিদ ভাইয়ের চোখে পানি চলে এল...
ঠিক তখনই হুড়মুড়িয়ে প্রায় আধা বালতি পানি এই শীতের রাতে তার গায়ে এসে পড়ল! মজিদ ভাই হাউমাউ করে উঠে তাকিয়ে দেখেন, পাশের আন্ডার কনস্ট্রাকশন ছয়তলা বাড়ির ছাদ থেকে দুটো মজুর অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
বয়স্ক একজন মজুর বলল, কিডা...? নিচের ছাদে আছেন নিহি কেউ?
কোনো শব্দ না করে মজিদ ভাই গজগজ করতে করতে নিচে নেমে এলেন। এর কদিন বাদেই তাঁর বিয়ে হয়ে গেল। পাত্রী তিনি আর দেখেননি, দেখতেও চাননি! বাসররাতে সবাই তাকে হিন্দি সিনেমার কায়দায় ধাক্কা দিয়ে অন্ধকার ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে গেল! বউ নির্ঘাত বিছানায় বসে আছে, মজিদ ভাই কিছুটা কৌতূহল, কিছুটা টেনশন নিয়ে এগিয়ে গেলেন! কিন্তু বিছানায় যে কেউ নেই! মজিদ ভাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন দেখে কাঁসার ঘণ্টার মতো একটি নারীকণ্ঠ বেজে উঠল, ‘উ. ন্যাকা! অন্ধকারে বউ খুঁজে পায় না! আমি তোমার থেকে বেশি কালো না, বুঝেছ?’
মজিদ ভাই হাঁ করে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘সোনিয়া!’
বউটি মিটমিট করে হেসে বলল, ‘চিনতে পেরেছ তাহলে?’
চিনতে না পারার কোনোই কারণ নেই। মজিদ ভাইয়ের ফুফাতো ভাইয়ের বড় শালার চাচাতো শালীর ননদ। মজিদ ভাইয়ের মতোই ঘোরতর কৃষ্ণকায়। প্রথম দেখার পর থেকেই আঠার মতো মজিদ ভাইয়ের পেছনে লেগে ছিল সে। মজিদ ভাই সারা জীবন ফরাসি মেয়েদের স্বপ্ন দেখে এসেছেন, তাই জীবনের একমাত্র প্রত্যাখ্যানটি তিনি সোনিয়াকেই করতে বাধ্য হয়েছিলেন!
সোনিয়া আপা সাপের মতো হিসহিসে গলায় বললেন, ‘খুব ফর্সা মেয়ে খুঁজে বেড়ালে এত দিন, তাই না? পেলে না তো কাউকে, আমি অভিশাপ দিয়েছিলাম কিনা!’
মজিদ ভাই চমকে উঠে বললেন, ‘অভিশাপ!’
‘হ্যাঁ, এ কারণেই তো কাউকে খুঁজে পাওনি! অভিশাপ না থাকলে পেয়ে যেতে, গায়ের রংটা কালো তো কী? তুমি মানুষটা তো অনেক সুন্দর! যথেষ্ট লম্বা, গলার ভয়েস ভালো, ছিমছাম মেদহীন শরীর...’
মজিদ ভাই নড়েচড়ে দাঁড়ালেন। তার মুখটা আপনা থেকেই কেমন যেন হাসি হাসি হয়ে উঠেছে। মনের ভেতর একটা ফুরফুরে ভাব। কী যেন একটা রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে চলেছে ভেতরে। পেছন থেকে একটা অদৃশ্য মানুষ তাঁকে ঠেলে নিয়ে চলল বিছানার দিকে।
...পাঠক, এর পরের দৃশ্যে আমরা না-ই থাকি। এই সময়টি একান্তই মজিদ ভাই আর সোনিয়া আপার।

লিখেছেন: মৃদুল আহমেদ | তারিখ: ১৪-০২-২০১১
ভালবাস দিবসে আমার পাগলামি- ডাইরেক্ট কপি পেস্ট ফ্রম রস+আলো!!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×