জন্মলগ্ন থেকে ধর্মব্যবসায়ী জামাত নারী অধিকার ও নারী নেতৃত্ববিরোধী নানান ফতওয়া দিলেও অবশেষে মন্ত্রিত্বের লোভে নারী নেতৃত্বকেও জায়িয করেছে। জামাতের জন্য অবশ্য এটি কোন নতুন বিষয় নয়। ক্ষমতার ভাগ পাওয়ার জন্য ১৯৯১ সালেও সংরক্ষিত দু’টি মহিলা আসনে প্রতিনিধি বসিয়ে একইভাবে নারী নেতৃত্বকে জায়িয করেছিল। কিন্তু বিএনপি তখন জামাতকে সন্তুষ্ট না করায় আবার নারী নেতৃত্ব মানি না, বলতে সময় লাগেনি। তবে বিগত আওয়ামী লীগ আমলে আবার বিএনপি-জামাতের মধুচন্দ্রিমা ঘটেছে এবং ২০০১ সালের নির্বাচন তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির সোল এজেন্ট দাবিদার দল জামাত আদর্শ বিসর্জন দিয়ে সব ধরনের আপোস-মীমাংসায় পৌঁছে মসনদের ভাগিদারও হয়েছে। অবশ্য মন্ত্রিত্ব জায়িযের জন্য জামাতের আমীর সাবেক শিল্পমন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ওরফে মইত্যা রাজাকার মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে যে, “ইসলামে নারী নেতৃত্বকে অযোগ্য বলা হয়নি, আমরা নারী নেতৃত্বের জোটে যোগ দিয়েছি ইসলাম নির্মূলকারীদের হাত থেকে দেশকে হিফাযত করতে। আওয়ামী লীগ এদেশ থেকে ইসলামী মূল্যবোধের চিহ্ন মুছে ফেলে ইসলামী রাজনীতি ধ্বংস করতে চেয়েছিল” (দৈনিক যুগান্তর: ২৭.১০.২০০১)।
বিগত মন্ত্রিসভায় জামাতের শীর্ষপদের দু’জন- দলের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ যথাক্রমে শিল্প ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হয়েছিল। তবে জামাত শুধু এবারই যে মন্ত্রী হল তা নয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এ দলটি কয়েকদিনের জন্য মন্ত্রিত্বের অমৃত স্বাদ পেয়েছিল। কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে ঘাতক মন্ত্রী মহোদয়দের কারাগারে পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল। গো. আযমসহ কেউ কেউ রাতের আঁধারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে জানে বাঁচে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে আগস্ট মাসে ডা. মোত্তালিব মালিককে পূর্ব-পাকিস্তানের গভর্ণর বানায়। চরমপত্রখ্যাত এই ‘ঠ্যাঁটা মালেইক্যার’ মন্ত্রিসভায় উচ্ছিষ্ট গ্রহণের জন্য এগিয়ে এসেছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে জামানত বাজেয়াপ্ত দুই জামাত নেতা আব্বস আলী খান ও মাওলানা একেএম ইউসুফ। আব্বাস আলী খান পরবর্তীকালে জামাতের ভারপ্রাপ্ত আমীর এবং মাওলানা ইউসুফ নায়েবে আমীর হয়েছে। তারা মালিক মন্ত্রিসভায় যথাক্রমে শিক্ষা ও রাজস্ব মন্ত্রী ছিল। সেদিনের জামাতের দু’মন্ত্রীও তাদের আদর্শ অনুশাসনের বিপরীতে পাকিস্তানী বাহিনীকে পূর্ব-পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার জন্য অকুণ্ঠ সহযোগিতা দিয়েছিল।
দলীয় এক সংবর্ধনা সভায় একাত্তরের ২৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিত্ব গ্রহণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে ধর্মব্যবসায়ী জামাতের সেদিনের বয়ান ছিল- “জামাতে ইসলামী পাকিস্তান ও ইসলামকে এক ও অভিন্ন মনে করে। ........কাজেই পাকিস্তান যদি না থাকে, তাহলে জামাতের কর্মীরা দুনিয়ায় বেঁচে থাকার কোন সার্থকতা মনে করে না।”(দৈনিক সংগ্রাম, ২৬.৯.১৯৭১)। অবশ্য পাকিস্তান টেকেনি, ভেঙে বাংলাদেশ হয়েছে। এখনও অবশ্য বাংলাদেশে পাকিস্তানের স্মৃতি জামাতের দিল থেকে মুছে যায়নি- তা বিভিন্ন ইস্যুতে বার বার প্রমাণিত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরও জামাতের মধ্যে পুরোদমেই বিরাজমান। তবে এবার ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে সাবেক জামাতী মন্ত্রীদ্বয়।
শহীদ মিনারে যাওয়া, ফুল দেয়া এতদিন নাজায়িয ফতওয়া দিলেও মন্ত্রীত্বের স্বাদে সে ফতওয়া ভুলে অবলীলায় নাজায়িয কাজটি করেছে। এমনকি মন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদ দুর্গা পূজামণ্ডপেও গিয়েছিল। তীলক এঁকেছে জামাতের ধর্মীয় উদারতা দেখানোর নামে। তবে ক্ষমতার বাইরে থাকলে বরাবরের মতো ফতওয়া পরিবর্তনও হয়ত জামাতের জন্য স্বাভাবিক।
মাওলানা নিজামী দু’বার সাংসদ হয়। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদের সদস্যদের জীবনীভিত্তিক দু’টি বই প্রকাশিত হয়েছে এবং তার জীবনীও ছাপা হয়েছে। উভয় গ্রন্থে তার ১৯৬০ এর দশকে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন ও ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার বর্ণনা রয়েছে। এরপর এক লাফে ১৯৭৯ সালে তার ‘উজ্জ্বল’ (?) কর্মজীবনের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ৬০ এর দশকের গৌরবময় ভূমিকার পাশাপাশি ৭০ এর দশকের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা এ প্রজন্মের অনেকের জানার আগ্রহ প্রবল। হয়ত এসব বইয়ে ৬০ এর দশকে ‘ফুলের মতো পবিত্র’ ভূমিকার বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধে তার অন্ধকারাচ্ছন্ন ভূমিকার কথা প্রকাশ করতে সে দ্বিধা করেছে বা লজ্জা পেয়েছে (যদি লজ্জা থাকে)। অথবা ভুলে থাকতে চেয়েছে সেসব দিনের বিভীষিকাময় অপকর্মের স্মৃতি। সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের এ ধরনের জীবনীগ্রন্থ বের হওয়ার অবশ্য সুযোগ আগে হয়নি। কেননা, সে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে হেরে যায় এবং ২০০১ সালে জোট থেকে মনোনয়নে ব্যর্থ হলেও মন্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল।
একাত্তরে দু’জন ছিল জামাতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘের শীর্ষস্থানীয় নেতা। মাওলানা নিজামী ছিল পাকিস্তান (পাকিস্তানের উভয় অংশের) ছাত্রসংঘের (বর্তমান ছাত্রশিবির) সভাপতি। আর আলী আহসান মুজাহিদ পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সভাপতি। আজকের মত মিলেমিশে দুই নেতা সেদিন মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। দলে দলে তরুণ-যুবকরা সেদিন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেও সেদিনের এই দুই তরুণ মুক্তিযুদ্ধ বিনাশ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিধনে আত্মনিয়োগ করেছিল। দুই সভাপতির নেতৃত্বে গড়ে উঠে ঘাতক ‘আল-বাদর বাহিনী’। এটি ছিল মূলত ছাত্রসংঘের একটি আর্মস ক্যাডার বাহিনী। যদিও এই বাহিনী গো. আযমের সার্বিক নির্দেশে কাজ করত কিন্তু এর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ছিল মাওলানা নিজামী। সে এই বাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং মুজাহিদ ছিল প্রধান সংগঠক। আল-বাদর বাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার। স্বাধীনতাকামীদের খুজে বের করা এবং হত্যা করা। এর উদ্দেশ্য সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য মানুষ হত্যা ছাড়াও স্বাধীনতার উষালগ্নে ঢাকাসহ সারাদেশে জঘন্য হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয় এই ঘাতক বাহিনী।
অবশ্য জামাত এখন আর এ কথা স্বীকার করে না। বরং ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে অধুনা লুপ্ত ‘আজকের কাগজে’ তৎকালীন জামাতের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা নিজামী দাবি করে যে, “জামাত নয়, আওয়ামী লীগই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে” (দৈনিক আজকের কাগজ, ১৫.১২.১৯৯১)।
বিগত কয়েক বছর ধরে জামাত বুদ্ধিজীবী দিবস পালন এবং পরিকল্পিতভাবে গণহত্যার দায় অস্বীকার করছে। অথচ যে কোন সুস্থ মানুষমাত্রেই জানেন, ১৯৭১ সালের ১০-১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ বাংলাদেশের সর্বত্র পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের সহযোগী হিসেবে জামাত-মুসলিম লীগের সৃষ্ট রাজাকার, আল-বাদর ও আল-শামস্দের হাতে প্রাণ দিয়েছে অগণিত স্বাধীনতাকামী মানুষ। জামাত যতই বিকৃত ও বিভ্রান্ত বক্তব্যই দিক না কেন, কয়েকজন পাকিস্তানী জেনারেল এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির তৎকালীন প্রধান জেড.এ. ভুট্টো এসব নৃশংতার সঙ্গে জামাতের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া এর বড় প্রমাণ জামাতের মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রাম’ সহ অবরুদ্ধ বাংলাদেশের নয় মাসের পত্রপত্রিকা। এর থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, জামাত নেতা বিশেষ করে জামাতের দুই প্রাক্তন মন্ত্রী মাওলানা নিজামী ও মুজাহিদের বক্তৃতা বিবৃতি ও কর্মকাণ্ড গণহত্যার সহায়ক হয়েছিল। দৈনিক সংগ্রামে বর্ণিত এ দুই নেতার কিছু বক্তৃতা ও বিবৃতি এখানে উদ্ধৃত হল। পাঠকই বিচার করবেন তারা গণহত্যার জন্য দায়ী কি-না?
১৯৭১ সালের মাঝামাঝি দেশব্যাপী ঘাতক শান্তিকমিটি, রাজাকার বাহিনী গঠন সম্পন্ন হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে গড়ে উঠে আলবাদর ও আল শামস। রাজাকার, আল-বাদর বাহিনীর সংগঠনে জামাতের এই দুই প্রাক্তন মন্ত্রী দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যায়। ২৫ জুলাই মাওলানা নিজামী বরিশাল টাউন হলে ছাত্রসংঘের এক সভায় বক্তৃতায় পাকিস্তানী বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে ছাত্র-যুবক সবাইকে দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী) দমনে সহযোগিতা করার আহ্বান জানায় (দৈনিক সংগ্রাম, ২৬.৭.১৯৭১) ।
’৭১এর আগস্ট মাসে মুক্তিবাহিনী বেশ কিছু সফল অভিযান পরিচালনা করলে পাক বাহিনীর সাথে তাদের দোসররাও অধিক তৎপর হয়ে উঠে। ১০ আগস্ট ময়মনসিংহে ছাত্রসংঘের এক সভায় সভাপতির ভাষণে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী দেশের শত্রুদের (মুক্তিযোদ্ধা) খুঁজে বের করা এবং তাদের তালিকাভুক্ত করার কাজে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানায়। (দৈনিক সংগ্রাম, ১১.৮.১৯৭১)। অবশ্য সে আবেদন করেই দায়িত্ব শেষ করেনি। বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে মূলত জামাতের দেয়া দেশপ্রেমিক তালিকার ভিত্তিতেই পাকিস্তানী বাহিনী তাদের হত্যা করে। ১১ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের এক অভিযান দালাল মাওলানা সায়িদ মাহমুদ মোস্তফা মদনী নিহত হলে এর প্রতিবাদে পরের দিন ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা নিজামী বিবৃতি দেয়। সে এতে বলে যে, ‘ইসলামী আন্দোলনের দুই একজন নেতাকে হত্যা করে পাকিস্তানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা স্তব্ধ করা যাবে না এবং দুষ্কতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) এর পরিণাম ভোগ করতেই হবে’ (দৈনিক সংগ্রাম ১২.৮.১৯৭১)।
১৪ আগস্ট পাকিস্তানের আজাদী দিবস। সেদিন কেউ এ দিবস পালন না করলেও ব্যতিক্রম ছিল জামাত ও ছাত্রসংঘ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংঘ সভা করে ও পরে যে মিছিল হয় তাতে নেতৃত্ব দেয় মাওলানা নিজামী। (দৈনিক সংগ্রাম, ১৬.৮.১৯৭১)।
’৭১এর ২২ আগস্ট মাওলানা নিজামী অন্য এক বক্তৃতায় বলে যে, “এসব পাকিস্তানবিরোধী (মুক্তিযোদ্ধারা) ব্যক্তিরা শুধু পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন নয় এর মাধ্যমে ইসলামকে উৎখাত করতে চায় (দৈনিক সংগ্রাম ২৩-৮-১৯৭১)। সেপ্টেম্বর মাসে অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধীর মতো মাওলানা নিজামীও তৎপর হয়ে উঠে। সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখে সে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর শিক্ষানবিস রশিদ মিনহাজের বাবার কাছে তারবার্তা পাঠায়।
মাওলানা নিজামী ছাত্রসংঘের প্রধান হিসেবে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরকে ভারতীয় এজেন্ট হিসেবে উল্লেখ করে দেয়া শোকবার্তায় মিনহাজের পিতাকে জানায়, “ভারতীয় হানাদার ও এজেন্টদের মোকাবেলা করতে গিয়ে মিনহাজ প্রাণ দিয়েছে। মিনহাজের এই আত্মত্যাগ পাকিস্তানের অখণ্ডতায় বিশ্বাসী সবাই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে” (দৈনিক সংগ্রাম ৪-৯-১৯৭১)। একই মাসের ৭ তারিখে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী দিবসে কার্জন হলে দেয়া এক বক্তৃতায় মাওলানা নিজামী বলে যে, “ছাত্রসংঘের প্রতিটি কর্মী দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। (দৈনিক সংগ্রাম ৮.৯.১৯৭১)।
এরপর কয়েকদিনের জন্য সাংগঠনিক সফরে নিজামী যশোরে যায়। ১০ সেপ্টেম্বর সেখানে রাজাকার সদর দফতরে সমবেত রাজাকারদের উদ্দেশে ভাষণ দেয় নিজামী। (দৈনিক সংগ্রাম, ১৫-৯-১৯৭১)।
১৬ সেপ্টেম্বর যশোরে ছাত্রসংঘের এক সভায় বক্তৃতাকালে সে বলে যে, “দেশের সঙ্কটজনক পরিসি'তিতে আমরা পাকিস্তানের সেবায় এগিয়ে এসেছি, তেমনি সরকারের উচিত হবে আমাদের খাঁটি সৈনিকরূপে গড়ে তোলা” (দৈনিক সংগ্রাম, ১৫-৯-১৯৭১)। পরের দিনও নিজামী অপর এক বক্তৃতায় তথাকথিত বঙ্গদরদীদের স্বরূপ উদঘাটন করে সাহসের সাথে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে বলে যে, “দুনিয়ার কোন শক্তিই পাকিস্তান ধ্বংস করতে পারবে না” (দৈনিক সংগ্রাম, ১৬-৯-১৯৭১)।
পরের মাসে নিজামীর পাশাপাশি তার সহকর্মী আলী আহসান মুজাহিদ বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফরে বের হয়। ২৫ অক্টোবর মুজাহিদ ইসলামী অ্যাকাডেমী হলে প্রাদেশিক সদস্যদের এক সম্মেলনের ভাষণে পাকিস্তানের ছাত্র জনতাকে দুষ্কৃতিকারী (মুক্তিযোদ্ধা) খতম করার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় (দৈনিক সংগ্রাম, ২৬-১০-১৯৭১)।
একই মাসের ২৭ তারিখে রংপুর জেলা ছাত্রসংঘের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে মুজাহিদ সবাইকে পাকিস্তান বাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায় (দৈনিক সংগ্রাম, ২৮-১০-১৯৭১)।