আমাদের এলাকায় গতকালকে একটা দূর্ঘটনা ঘটেছে। কয়েক বাসা পরের এক বাসার মেয়েটা ঠিক সন্ধ্যাবেলায় মাগরিবের আযানের কিচ্ছুক্ষন আগে এই দুর্ঘটনাটা ঘটিয়েছে। ওকে আমি ব্যাক্তিগতভাগে চিনতাম না। কখনও দেখিনি, নাম ও জানিনা। বুঝতে পারছিনা কেন সে এটা করল।
মেয়েটা বয়সে খুব বড় না। শুনেছি একটা বেসরকারি মেডিকেল এ পড়ে। ফার্স্ট ইয়ার। স্পষ্টতই টিনএজার। এই টুকুন একটা মেয়ে এত্ত সাহস পায় কিভাবে আমার মাথায় আসেনা। হয়তবা অনিয়ন্ত্রিত আবেগ। থাকতেই পারে।
এই বয়সে তরুন তরুণীদের ভিতর মাত্রাছাড়া আবেগ থাকতেই পারে। তবে নিয়ন্ত্রনের বাইরে গেলেই সমস্যা। একটা বা দুইটা জীবন, একটা পুরা পরিবারের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে, নষ্ট করে দিতে পারে। ভিতরের ঘটনা জানিনা। হয়তবা বাবা মার সাথে কোন মতের অমিল হয়েছিল, হয়ত খুব সিরিয়াস কোন ব্যপার। কে জানে? কিন্তু তাই বলে এতবড় একটা পদক্ষেপ? কিভাবে?
মেয়েটাকে একটু আগে জানাজা শেষে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হল। আমি বারান্দা থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম প্রচুর মানুষ আর সাথে কানে আসছিল মেয়েটার আত্মীয় স্বজনের কান্নাকাটি, আহাজারি।
আহা রে! গতকালকেও সে এতক্ষণে দিব্যি চলে ফিরে বেড়াচ্ছিল। মাত্র একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারনে আজ তার যায়গা আর বাড়ির নরম বিছানায় নেই। সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে শক্ত বিছানায়।
গতকাল রাতে আকাশে খুব সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছিল। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে চাঁদের আলো দেখতে দেখতে চমৎকার দখিনা হাওয়া অনুভব করছিলাম আর ভাবছিলাম। হয়তবা এই মেয়েটা আর তার পরিবারও এই সৌন্দর্য উপভোগ করত। কিন্তু হায়! এ কি হয়ে গেল? সামান্য একটা ভুল !!!
এই অচেনা অজানা মেয়েটার জন্য কেন যেন খুব খারাপ লাগছে। মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করে দিয়ে তার আত্মাকে শান্তিতে রাখুক।
তরুন তরুণী ভাই বোনদের উদ্দেশ্যে বলছি, জীবনে কঠিন সময় আসতেই পারে, তাই বলে ভেঙ্গে পড়বেন না। প্রিয় মানুষ জনের সাথে মনোমালিন্য হতেই পারে। রেজাল্ট খারাপ হওয়ার জন্য বাবা মা বকা দিতেই পারেন। ভালবাসার মানুষটাকে কোনভাবে হারাতে হতেও পারে।
তাই বলে নিজের জীবন এভাবে বিসর্জন দেবেন? হাসপাতালে হার্টবিট দেখানোর যে যন্ত্র থাকে তার ডিসপ্লে দেখেছেন? উপর নিচ উপর নিচ করে প্রবাহমান তরঙ্গ এর রেখা দেখা যায়। রোগি মারা গেলে তা “শুন্য বিন্দুতে” একদম সোজা রেখা হয়ে যায়।
মানুষের জীবন মনস্তাত্তিক অর্থেও তাই।
If you have no Ups and DOWNs in your LIFE, then you are DEAD.
তাই আসুন, আমরা সচেতন হই। একটা সময় খারাপ গেলে হতাশ হবেন না। ভাল সময় ও আসবে। এক মানুষ ভাল না বাসলে অন্য মানুষ ভাল ভাসবে। কিন্তু জীবনটাই না থাকলে তো সবই শেষ।
প্লিজ দয়া করে কেউ এভাবে নিজের জীবন নষ্ট করার কথাও ভাববেন না।
সারাদেশে এমন অসংখ্য ঘটনা একের পর এক ঘটে চলেছে। আমাদের শিক্ষা নেয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। সবাই সচেতন হোন। আর বাবা মা দের উদ্দেশ্যে বলছি, নিজের সন্তানকে এমন ভাবে বন্ধু বানিয়ে নিন যেন তারা তাদের কোন সমস্যার কথা অবলীলায় আপনাদেরকে বলতে পারে। আর যেন কাউকে এভাবে চলে যেতে না হয়। সবাই ভাল থাকবেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




