তখন অনেক ছোট। আমাদের বাসার পাশে এক রুমের একটি ঘরে সাবলেট এল এক লোক। শুনলাম তিনি নাকি পত্র-পত্রিকায় লেখা-লেখি করে। পরদিন বাবা বলল ইনিতোমাদের নতুন স্যার, রোজ সন্ধ্যার পর তোমাদের পড়াতে আসবেন।
পরদিন পড়াতে এসে তিনি আমার মাকে তার জন্য একজন বুয়াঠিক করে দেয়ার অনুরোধ করল। আমাদের বাসায় এক বুয়া কাজ করত যার প্রচন্ড পান খাওয়ার নেশা। তাকেই মা তার জন্য ঠিক করে দিল।
স্যার সারাদিন ঘরে থাকতেন না তাই ওই বুয়ার কাছে ঘরের চাবি দিয়ে যেত। স্যার ছিল অতিভোলা প্রকৃতির। আমি কিছুদিন পর স্যারকে বললাম, স্যার, আপনি যে বুয়াকে চাবি দিয়ে যান, সে যদি সব চুরি করে পালায়? তিনি বললেন, আমার আছেই কি যে নেবে? থাকার মধ্যে তো ওই বিছানা বালিশ আর ঘর ভর্তি বইপত্র, ম্যাগাজিন, পেপার। অতএব তোমার চিন্তা করার দরকার নেই। আর এতকিছু ভাবলে লেখায় মন দেয়া যায় না।
যা হোক, বুয়া দু’দিন পর পর মায়ের কাছে পান খাওয়ার জন্য টাকা চাইতো আর মায়ের ঝাড়ি খেত। আমি প্রায়ই লক্ষ্য করতাম, বুয়া স্যারের ঘর থেকে কাগজপত্র আঁচেলের নিচে নিয়ে যায়। সেদিন আর মায়ের কাছে টাকা চায় না। আমি একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় দেখি বুয়া কাগজওয়ালার কাছে অনেক ম্যাগাজিন বিক্রি করছে। আমি ভাবলাম স্যারই হয়তো বলেছে, তাই এ নিয়ে আরমাথা ঘামাইনি।
ক’দিনপর দেখি স্যার ঘর তন্ন তন্ন করে কিসব খুঁজছে। আমি জিজ্ঞেস করতেই বলেন যেসব ম্যাগাজিন তার লেখা ছিল তার একটাও পাওয়া যাচ্ছে না। আরও বলেন, এগুলো আমার যক্ষের ধন। আমি ভাবতেও পারছি না কোথায় উধাও হলো এগুলো। তখন আমার আর বুঝতে কিছু বাকি থাকে না। মনে মনে বলি, আমার কথার দাম দেননি তো এখন বোঝেন ।
যক্ষের ধন বেচে বুয়া মনের সুখে পান খাচ্ছে!