somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তামান্না তাবাসসুম
আমি খুব পজেটিভ মানুষ। যা আমাকে পোড়ায় তা নিয়ে মাঝে-সাঝে লিখি। তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে একটা উপস্থিত কবিতা লেখা প্রতিযোগীতায় পুরস্কৃত হওয়ার মধ্য দিয়ে কলম ধরার যাত্রা শুরু

যাবজ্জীবন কোয়ারেন্টাইন

১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৬:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"ধুর, এটা কোন শুক্রবার হলো? শুক্রবারে বেলা করে ঘুম থেকে উঠতাম, তাতো রোজই উঠছি। ভাল মন্দ খেতাম, তাও রোজই খাচ্ছি৷ একটু নেটফ্লিকক্স দেখতাম তাওতো রোজই দেখছি। কি বোরিং লাইফ!" 

ফেসবুকের টাইমলাইন স্ক্রল করছে মিমি। পোস্টায় আঙুল থেমে গেল। মিমি ভাবছে ছয় বছর ধরে কোন শুক্রবারেই বেলা করে ওঠা হয়না তার ৷ মফস্বলে বাড়ির বউদের সপ্তাহের কোন দিনেই বেলা করে ওঠার নিয়ম নেই। হুম তবে করনার কারনে সবাই বাসায় থাকায় এই সময়ে রোজই  ভাল মন্দ রান্নার চাপ যাচ্ছে ।  তাই সেও বুঝতে পারছেনা আজ শুক্রবার কিনা।

স্ক্রল করতেই আরেক পোস্ট, "করনার দিন গুলোতে বাইরে বেরুবার জন্য অস্থির হয়ে আছেন, বোরডম কাটাতে বাড়িতে বসে আপনি যা যা করতে পারেন তার একটা  লিস্ট দেয়া হল। এখানে মুভি দেখতে বলা হইছে, গান শুনতে, ক্রাফট করতে, বই পড়তে, পুরানো সখ আবার শুরু করতে, রান্না করতে, দাম্পত্য সম্পর্ক নতুন করে সুন্দর করতে আরো কত কি! "

বাবারে বাবা!  ঘরে বসে এত্তো কিছু করার আছে?  আমি দেখি ঘরের সব কাজ করে
সেই ভোর ৫ টায় উঠে ১২ টায় ঘুমিয়ে আলাদা কিছু করার জন্য শরীর আর সায় দেয় না৷ হুমায়ুন আহমেদের বই পড়তে কত ভাল লাগতো মিমির, গত মাসে একটা বই শুরু করেছিলো পড়ার সময় এতো বার ডাক পরে, কাজের জন্য উঠতে হয়। এভাবে বই পড়তে মজা নাই, পরে আর শেষ করা হলনা বইটা। আর দাম্পত্য সম্পর্ক ঠিক করার কথা বলছে? এই কদিনে রোজ সকাল বিকাল তার নতুন নতুন খাবারের আবদারর মেটাতে মেটাতে মেজাজ আরো খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে৷ 
গার্লস গ্রুপে দেখি মেয়েদের বরেরা এই সময় বাসার কাজে কত্ত হেল্প করছে, দুজন মিলে রান্না করছে, ঘর মুছে দিচ্ছে, হাড়িপাতিল মেজে দিচ্ছে। জয়েন ফ্যামেলিতে এসব স্বপ্ন। 
মিমির হঠাৎ কেমন ব্যাথা ব্যাথা করে বুকের ভেতর। 

স্ক্রল করে যায় মিমি।

"আমার আজকের সারাদিনের কাজের রুটিন - হাড়ি পাতিল মাজা, ফার্নিচার মোছা, রান্না করা, ঘর মোছা। শালার করনা আমারে জরিনা বানায় দিলো।  কাজ করতে কারতে জানটা শেষ। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে ফ্রান্স!  "
আজবতো, এর চেয়ে বেশি কাজতো মিমি প্রতিদিনই করে! 
কত তারকা আবার বাসন মাজার, ঘর ঝাড়ু দেয়ার ভিডিও দিয়ে নিজের কাজ নিজে করার সবক দিচ্ছে।  গার্লস গ্রুপে মেয়েরা সারাদিন পোস্ট করছে বুয়া ছাড়া তাদের দুর্দশার কথা!   

এই কদিন ধরে ফেসবুকে আসলে নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছে মিমির। অন্যদের চাইতে তার লাইফস্টাইল যে এতো ফারাক তা এভাবে চোখে আঙুল দিয়ে কখনো দেখা যায়নি কোনদিন। ঘরে থাকতে এতো আস্থির হওয়ার কি আছে বোঝেনা মিমি। মাসে হাতে গোনা দুই তিনদিন বাড়ির বাইরে বের হোওয়া হয় তার। বাবার বাড়ি, শপিং আর দাওয়াত এছাড়া কোথাও তেমন যাওয়া হয়না। তো সে কি মরে গেছে নাকি?
আগে মানুষের অনেক পোস্ট দেখতো সেগুলো শো অফ ভেবে শান্তনাও নিতো। কিন্তু এখনতো সবাই নিজের আসল জীবনের কথা লিখছে।
আজকাল কোন পোস্টের সাথে একাত্ব হতে পারছেনা মিমি। নিজের সাথে মিলছেনা কোন ট্রল বা স্ট্যাটাস।

বুয়া ছাড়া মেয়েদের কষ্টের পোস্ট গুলো দেখে হুট করে মনে খুবি আনন্দ লাগছে মিমির। "আমি সারাজীবন ঘরের কাজ করে করে জান ক্ষয় করছি আর তোদের দুই দিনের এতো ঢং!"  মিমির মন চাচ্ছে এই করনাকাল আরো অনেকদিন থাক। "এই বার বুঝো সোনারা।  আমি অভাবের সংসারে এতো কষ্টে থাকবো আর তোমরা আরাম করবা তা হবে না।"

এই মুহুর্তে তাকে চাকরি করতে অনুমতি না দেয়ার জন্য শাশুড়ির উপর সব রাগ ক্ষোভ দূর হয়ে যায় মন থেকে। যাবজ্জীবন কোয়ারেন্টাইনে থাকা এই নারীর কিভাবে সহ্য হবে পুত্রবধূর বাইরে বের হওয়ার সাধ! 

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×