somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তামান্না তাবাসসুম
আমি খুব পজেটিভ মানুষ। যা আমাকে পোড়ায় তা নিয়ে মাঝে-সাঝে লিখি। তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে একটা উপস্থিত কবিতা লেখা প্রতিযোগীতায় পুরস্কৃত হওয়ার মধ্য দিয়ে কলম ধরার যাত্রা শুরু

তখন ত্রিশ

১১ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-আসলে আমাদের বিয়েটা মানায় না,আপনি আমার থেকে দশ বছরের বড়।
-আরে এটা কোন ব্যপার না,ছেলের সরকারী চাকরি থাকলে মেয়ের বাবা মা বয়সের আরো বেশি ডিফারেন্স থাকলেও রাজী হয়। বিয়ের "বাজারে"এটাই রিয়ালিটি।
-ওহ,তাহলেতো বিয়ের বাজারে আপনি অনেক ডিমান্ডেবল একটা পন্য !
এই কথা শুনে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আনিসের। পিচ্চি মেয়ে বলে কি!নর্থ সাউথে পড়ে ভাব বেশি বেড়ে গেছে।
ঘটককে ফোন দেয়,সন্ধ্যায় যেন আরো বায়োডাটা নিয়ে দেখা করে।আর হ্যা ব্র্যাক,নর্থ সাউথ,এ আই উ বি এগুলা বাদ।
অফিসে বসে ফেসবুক চালাচ্ছে আর বিভিন্ন পোস্টের কমেন্ট বক্সে নজর রাখছে আনিস। কোন মেয়েকে ভাললেগে গেলেই পাঠিয়ে দিচ্ছে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। সাথে একটা শুভেচ্ছা মেসেজ।এখন আর কেউ ঝুলিয়ে রাখেনা। সরকারি আমলার প্রোফাইল বলে কথা।
ভার্সিটি লাইফের দুটো ছবি বেছে প্রফাইল পিকচার আর কভার ফটো বানিয়েছে। আনিসের ধারনা সে বরাবরই সুদর্শন। কিন্তু ইদানিং চুল কমে যাচ্ছে আর ভূড়িটা ভালই বোঝা যায়। জীবন থেকে তেত্রিশটা বছর চলে গেল। যদিও সার্টিফিকেটে ত্রিশ।

বাল্যবন্ধু আকাশ মেসেঞ্জারে টেক্সট করে আনিসকে। কিরে তোর লিস্টের এক মেয়ে ফারিয়া,আমাকে ইনবক্স করল,তোর সাথে নাকি ওর প্রেম,তুই নাকি এখন ওকে আর পাত্তা দিচ্ছিস না?
মেসেজ দেখে প্রচন্ড রাগ হয় আনিসের। এই মেয়ে পেয়েছেটাকি। তিন দিন আগে ফোন,ফেসবুক সবখান থেকে ব্লক মারলাম। এখন আমার বন্ধুদের আমার নামে আজে বাজে কথা বলে বেরাচ্ছে।
আনিস বিরক্তি নিয়ে রিপ্লাই দেয় ,আর বলিস না,এই মেয়েকে পটাতে অনেক কাঠখোড় পোড়াতে হয়েছে আমার। অনেক দামি দামি গিফট দিতে হয়েছে। এই ছয়মাসের কষ্টে পানি ঢেলে দিলো মা। তার নাকি এই মেয়েকে পছন্দ হয়নি। মেয়ে নাকি বেশি ফ্যশনাবল। তার দরকার সাধাসিধে মেয়ে, যে কিনা সংসারের দায়িত্ব নিবে।এমন একটা মেয়ে নাকি দেখেছে সে, আজ আফসের পর দেখতে যাব। কি আর করা তাই ওর সাথে আর কনটাক্ট করি না।
এই বয়সে আর এতো আবেগ আসে না, এতো ধৈর্যও নাই বাসায় ঝামেলা করার। যখন আবেগ ছিলো তখন কেউ তার দাম দেয় নাই। এখন বিয়ে করছি শুধু একটা বিয়ে করতে হবে এই জন্য।
মেয়েকে এভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিজেই লাপাত্তা!কাজটাকি ঠিক করলি?
আর ঠিক বেঠিক। আমার সাথে লাইফে যা হয়েছে সব কি ঠিক হয়েছে? আমাকে কি কেউ কষ্ট দেয়নি?
আমিতো দেখেছি পাত্রী। এখন কাউকে তো আর সবাসরি এভাবে বলা যায় না। তাই একটু পটায় বললাম, মাঝে আমারো ভাল টাইম পাস হল। ঐ মেয়ে প্রেম ভাবলে আমার কি দোষ!

মায়ের পছন্দের সেই মেয়েকে দেখতে যায় আনিস। মেয়েটাকে এক নজর দেখেই চমকে যায়। কলেজে ঠিক এমন দেখতে এক মেয়েকে প্রপোজ করে স্যারের হাতে মার খেয়েছিলো। ঐ মেয়েকে দেয়া চিরকুট সরাসরি ওদের ক্লাস টিচারের কাছে দিয়ে দিয়েছিলো মেয়েটা। আনিসের মার খাওয়া দেখে ঐ মেয়ের সেকি হাসি।
মেয়ে দেখতে শুনতে,যোগ্যতায় সব ঠিক থাকলেও রিজেক্ট করে দেয় আনিস। একেতো ফারিয়াকে মেনে না নেওয়ায় মায়ের উপর রাগ। তারপর কলেজের ঐ মেয়ের উপর জমানো রাগ। সব একসাথে মেটাল।

রুপার আরেকটা ছেলে হয়েছে।দুই ছেলের মা হয়ে গেল রুপা। শুধুমাত্র রুপাকে দেখার জন্য আলাদা একটা ফেইক আইডী খুলেছে আনিস। আনিসকে তো ফেসবুক আইডি খোলার পর থেকেই ব্লক করে রেখেছে রুপা। তাকে আজো ক্ষমা করেনি সে।
আনিস নিজে ভাবছে, আমার কি দোষ ছিলো। আমিতো রপাকে চেয়েছিলাম,এখনো ওর অভাবোধে ভুগি।
আমারা ছিলাম মেড ফর ইচ আদার। ওর মতো করে কেউ কখনো আমাকে বোঝেনি। সেই স্কুল লাইফ থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি।
ভার্সিটিতে উঠে সাহস করে প্রপোজ করতেই ও রাজী হয়ে গেল। আমার মতো আনস্মার্ট ছেলে যার দিকে কোন দিন কোন মেয়ে ফিরেও তাকায়নি,কারো কাছেই কখনো পাত্তা পায়নি তাকেই জীবনের সাথে জড়িয়ে নিলো রুপা। আমাকে নিয়ে তার কতো স্বপ্ন। ভার্সিটি শেষের দিকে ওর বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ বাড়তেই থাকলো।
রুপা কেঁদেকেটে আমাকে বলে আনিস কিছু একটা করো। বিয়ে নাহয় তোমার চাকরি হওয়ার পরেই করো। দুই ফ্যামেলিতে পাকা কথা বলে রাখ অন্তত।
বাসায় এই কথা বলতেই সবার মাথায় বাজ পরে। বলে তুই বড় ছেলে তোর কাধে পুরো সংসারের দায়িত্ব। তুই কিভাবে এসব বলিস। মাবাবাকে কোন ভাবেই রাজী করানো যায়নি। রুপা কোর্ট ম্যরেজ করতেও রাজী ছিলো। আমি সাহস পাইনি। বাবাকে খুব ভয় পেতাম।

বাসায় বোন ভাগনে এসেছে, আনিসের কাছে দাবী ওদেরকে ওদের শপিংএ নিয়ে যেতে হবে। অন্যসময় ওরা এলে খুব ভাল লাগে আনিসের। কিন্তু ইদানিং সব কিছুতেই বিরোক্তি লাগে। শালার পুরুষ মানুষের কাছে সবার টাকা ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার নাই। ফ্যমেলির দায়িত্ব নেয়ার জন্য ভালবাসার মানুষকে হারালাম।
তার দুই বছর পরেই বোন এক ছেলের জন্য পারলে আত্নহত্যা করতে যায়। তার সাথেই বিয়ে দেয়া হল বোনকে। বিয়ের অনুষ্ঠান করা হল অনেক ধরদেনা করে। তারপর দিনরাত টিউশনি করে সেই টাকা শোধ করে আনিস। এখন মেয়ের বাবারা সবাসরি জিজ্ঞেস করে বেতন কতো, জিজ্ঞেস করে সঞ্চয় সম্পত্তির হিসাব।
বিশেষ করে এই বিয়ের জন্য পার্ফেক্ট কাউকে খোঁজার প্যারা আর ভাল্লাগেনা, কেমন অনিশ্চিত সব।
উফ্ এতো দেখাদেখি আর ভাল্লাগেনা। এবার যাকে দেখবো তাকেই বিয়ে করে ফেলবো। যা আছে কপালে।

একটা মেয়ে মোটামোটি ভালই লাগলো,অনার্স ফাইনাল ইয়াররে পড়ে। মেয়ের সাথে কথা বলে মেয়ে রাজী কি রাজী না ঠিক বোঝা গেল না।
দুদিন অপেক্ষা করলে ওরা খোঁজখবর নিয়ে ফাইলান রেজাল্ট জানাবে। মেয়েপক্ষ রাজী থাকলে এখানেই বিয়ে করবে আনিস।
স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড দাওয়াত করেছে তার বাচ্চার জন্মদিনের আর সে কিনা এখনো ব্যচেলার এই এক সরকারী চাকরির ফাঁদে পরে। এই বন্ধুই পাস করার পরপর প্রাইভেট জবে ঢুকে গিয়েছিলো। গতবছর যখন আর টিউশনি করে চলছে না, সরকারী চাকরি পাবার আশা প্রায় শেষ, এদিকে প্রাইভেট জব গুলা চায় ফ্রেশার। স্টাডি শেষ হবার পর তিন বছর গ্যাপ থাকায় তার চাকরি জোটানোতেও অনেক ঝামেলা হচ্ছিলো। তখন পাশে দাড়ায় এই বন্ধু। এদিকে কর্পরেট সেক্টরে তিন বছর এগিয়ে থাকা মানে অনেক এগিয়ে থাকা। শুরুতো এন্ট্রি লেবেলের জব দিয়েই করতে হয়। বন্ধু যখন বস,সে আমার তিন র‍্যাংক উপরে। অনেক হিনোমন্যতায় কেটেছিলো ঐ ছয়মাস। অবশেষে হাতে এলো সেই কাংক্ষিত সোনার হরিন। সরকারি চাকরি।
এসব ভাবতে ভাবতে কখনযে ফোন বেজে ওঠে টের পায়না আনিস।
রিসিভ করতেই এক যুবকের অপ্রস্তুত কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
হ্যালো আনিস সাহেব বলছেন?
জ্বী বলুন
আসলে কোন ভনিতা ছাড়াই সরাসরি বলছি। আশাকরি আপনি আমার ব্যপারটা বুঝবেন।
আমি তপু। আপনি গত পরশু যে মেয়েকে দেখে এলেন তার সাথে আমার চার বছরের সম্পর্ক।
এবারে ছেলেটার গলা ভেংগে আসছে। ভাইয়্যা সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালবাসি। আমি এখনো কিছু করিনা বলে আমরা আমাদের বাসায় জানাতে পারছিনা। আমার আর দুবছর সময় দরকার ওর দায়িত্ব নেয়ার জন্য। ভাইয়্যা আমাদের একটু হেল্প করেন প্লিজ। আপনি এই বিয়েতে না করে দেন।
কিছু না বলে ফোন কেটে দেয় আনিস। তারপর মেয়ের বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় আগামী সপ্তাহেই আকদ সেরে রাখতে চায় তার পরিবার।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৩২
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×