somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ ও সেক্স ডল

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ ও সেক্স ডল
বাংলাদেশের সমাজে থাকি। ছোট বেলা থেকে অনেক নারী পুরুষের শ্রদ্ধা, ভক্তিপূর্ণ প্রেমময় প্রেমের জীবন, দাম্পত্য জীবন দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। আমার মনে মনে গর্ব হয় এজন্য যে, আমি যৌনজীবনে একগামীতাকে সমর্থনকারী ভারতীয় সংস্কৃতির মাঝে বড় হয়েছি এবং রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র ও অন্যান্য গুণী বাঙ্গালী লেখকদের প্রেমের গল্প ও উপন্যাস পড়ার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু যদি আমি পশ্চিমা সংস্কৃতির বহুগামিতা সমর্থনকারী কোনো দেশে জন্মাতাম, তবে আমি যৌনজীবনে একগামিতাকে সমর্থনকারী কোনো নিয়মের প্রতি হয়ত শ্রদ্ধা প্রদর্শন নাও করতে পারতাম।

পশ্চিমা যৌন জীবন সম্পর্কে সিনেমা, নাটক, গল্প ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে যেসব ধারণা পেয়েছি-তার বেশীরভাগই আমার কাছে অতি আদিখ্যেতা মনে হয়েছে। আমি আমার কিছু লেখায় এসব বিষয়ে কিছু মতামত ব্যক্তও করেছি- যা সাধারণ পাঠকসহ আমার বেশকিছু প্রগতিশীল বন্ধুদের ভালও লেগেছে। আজ "মানুষ ও সেক্স ডল" লেখাটিতে আমি নারী পুরুষের সুস্থ প্রেমময় যৌন জীবন সম্পর্কে আরও কিছু মতামত ব্যক্ত করব-যা গ্রহণ করা বা না করা মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আমরা বড়রা ভবিষ্যত প্রজন্মকে কিভাবে সুস্থ, প্রেমময় জীবনে বাঁচিয়ে রাখতে চাই, তাও ভেবে দেখার মত বিষয়।

আমি বাংলাদেশে অনেক দম্পতি দেখেছি- যারা স্বামী, সন্তান, সংসারের জন্য জীবনের সবটুকু রস নি:শ্বেস করে এবং সুখ দুঃখ মিলে তাদের জীবন কাটে অনবদ্য সুস্থ প্রেমের মধ্য দিয়ে। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখেছি। আমি দেখেছি, যৌন জীবনে প্রেমিক প্রেমিকার প্রতারণা, স্বামী স্ত্রীর প্রতারণা, নারীদের উচ্ছৃঙ্খল যৌন জীবন এবং যৌন জীবনে অনেক যৌন সঙ্গী থাকার পরেও নারী পুরুষের খাই খাই ভাব বজায় থাকা। তবে আমি অনুভব করেছি, যে নারী পুরুষ ভালবেসে সন্তান, সংসার নিয়ে শ্রদ্ধার সাথে জীবন যাপন করতে পারে- তারা তাদের নিজের জীবন এবং সমাজের জন্য নিরাপদ। এই অবস্থাটা বিশ্বের বেশীরভাগ দেশে বর্তমানে অনুপস্থিত। যৌনজীবনে ভাত তরকারী খাওয়ার মত "একজনে বহু দেহ খাওয়া" নীতিটা বর্তমানে অনেক দেশের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি যে দেশেই থাকুকনা কেন, পুরুষরা সবসময় সবদেশে নারীদের উপর এক্ষেত্রে আগ্রাসী এবং অত্যাচারী। নারীরাও অনেকক্ষেত্রে অনেক উচ্ছৃঙ্খলতার পরিচয় দেয়। কিন্তু পুরুষের তুলনায় তা কম।

মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সহ অনেক নারীবাদী, মানবতাবাদী লেখকরা নারীদেরকে পুরুষ সমাজ যেন পুতুল না ভাবে সেজন্য সমাজের কাছে আবেদন জানিয়ে গেছেন। কিন্তু সমাজকে প্রকৃত অর্থে মানবিক করার শিক্ষায় আমরা সবাই অনেক পিছিয়ে। তাই নারীদেরকে পুতুল ভাবাটা সব দেশের সব সমাজে স্বাভাবিক প্রবণতা।

নারীরা ধর্ষিত হয়- এটা সব দেশের রোগ। অনেকে মনে করেন- সমাজে পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে ইচ্ছেমত যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলার রীতি প্রচলিত থাকলে নারী ধর্ষণ কমবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যেসব দেশকে ফ্রি সেক্সের দেশ বলা হয় সেসব দেশেও প্রচুর ধর্ষণ হয়। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোতে আইনের শাসনটা তড়িৎগতিতে হয়- এতটুকু পার্থক্য মাত্র।

আমরা মানুষরা আমাদের বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে যেমন সুস্থ, সুশৃঙ্খল হতে পারি, তেমন অসুস্থ, উচ্ছৃঙ্খলও হতে পারি। ভালবাসাহীন যৌন সম্পর্ক জীবনকে কতটা নীচে নামাতে পারে, আর ভালবাসাপূর্ণ যৌন সম্পর্ক জীবনকে কতটা উপরে উঠাতে পারে- তা গভীর জ্ঞানের অধিকারী মানুষরাই কেবল অনুভব করতে পারে।
আজকাল বিশ্বে সেক্স ডল নামক যৌন যন্ত্র অনেক দেশে পাওয়া যাচ্ছে এবং ব্যবহৃত হচ্ছে। চীন দেশে এই "সেক্স ডল" প্রচুর তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশেও এসব সেক্স ডল বিক্রি হচ্ছে। আমি আমার সুস্থ শিক্ষিত মস্তিষ্কে কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা এই বিষয়ে ঘৃণা প্রকাশ করার মত। আমি মনে করি আমরা মানুষরা প্রেমময় মানুষের সমাজ গড়ে তুলতে পারছিনা বলেই নারী পুরুষের যৌন ভোগবাদীতা এই পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে।

মূলত: শিশুদেরকে আমরা ছোটবেলা থেকে কোন ধরণের চিন্তা চেতনার মধ্যে বড় করে তুলছি-তার উপর নির্ভর করে শিশুরা বড় হয়ে সব কাজে কিভাবে আনন্দ নিবে এবং কিভাবে সবকিছু উপভোগ করবে। আমাদের শিশুদেরকে শিক্ষিত করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সমাজ, দেশ ভোগবাদীতা ঢুকিয়ে দেয় শিশুদের মস্তিষ্কে। অশিক্ষিত বা কুশিক্ষিত মানুষ পশুর মতই থাকে। এইসব মানুষ নিজের কাজের মধ্য দিয়ে অন্যের ক্ষতি বা নিজের ক্ষতি সম্পর্কে চিন্তা করেনা। আবার সুস্থ সংস্কৃতি, সুস্থ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ নিজের কাজের মাধ্যমে অন্যের বা নিজের ক্ষতি করতে তৎপর হয়না।

প্রাকৃতিকভাবে নারী পুরুষের যৌন চাহিদা মিটানোর জন্য জীবন্ত শরীরের প্রয়োজন হয়। যে নারী বা পুরুষ যৌন জীবনে পুতুলের মত বা যন্ত্রের মত আচরণ করে- তাকে সুস্থ কেউ যৌন সঙ্গী হিসেবে পছন্দ করেনা। কারণ যৌনজীবনে মানুষের দরকার হয় জীবন্ত রসময় বা রসময়ী নারী পুরুষ। কিন্তু সেখানে যৌন পুতুল বা সেক্স ডল যখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, তখন বোঝাই যাচ্ছে যৌন ভোগবাদিতা কোন স্তরে নেমে গেছে! অন্তত কবিগুরু রবী ঠাকুরের সংস্কৃতির মানুষ হিসেবে এই যান্ত্রিকতা দেখে আমার হাসি আর কান্না দুটোই আসছে।

অনেক দেশে অনেক লোক এবং আমাদের দেশেও কিছু স্ত্রী বা স্বামী মনে করছে- "যখন সঙ্গী কাছে না থাকে তখন যৌন চাহিদা পূরণের জন্য সেক্স ডলের সহযোগিতা নেয়া নিরাপদ এবং বিশেষ বিশেষ দেশে নিজেকে কলঙ্কমুক্ত রাখতে বা অতৃপ্ত যৌন চাহিদা মিটাতে সেক্স ডলই উত্তম। কারও কারও মতে এটা যৌনসঙ্গীর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হতে পারে- তাতে কারও ক্ষতি নেই। আবার কেউ কেউ মনে করে যে, যাদের বিয়ে বা প্রেম করতে ইচ্ছে করেনা অথবা যৌন সঙ্গী হিসেবে মানুষকে ভাল লাগেনা, তারা যৌন চাহিদা মিটাতে অন্যান্য কৃত্রিম উপায়গলোর পরিবর্তে "সেক্স ডল" ব্যবহার করতে পারে।"

আবার কোনো কোনো দেশের লোকজনের মতামত হল- "যৌন তৃপ্তি বিষয়টা অনেকটাই মানসিক-যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবসময় শারীরিক কসরতটাই আসল নয়। নারীপুরুষের রোবটের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন নারীপুরুষকে রোবট বানিয়ে দিবে। রোবটের সাথে সেক্স করা আর মরা মানুষের সাথে সেক্স করা সমান। সেক্স ডল পুরুষের যৌন চাহিদা হয় বাড়িয়ে দিবে, অথবা পুরুষদের নপুংসক বানিয়ে দিবে। কারণ পুরুষদের কৃত্রিম যৌন চাহিদা মিটানোর উপায়গুলো পুরুষের শরীরের ক্ষতি করে-এটি পরীক্ষিত।"সেক্স ডল" পদ্ধতি পুরুষকে নারীবিদ্বেষী এবং নারীকে পুরুষ বিদ্বেষী করে তুলবে।"

অনেক দেশের অনেক মানুষ যৌনতার মাঝে প্রেম থাকা জরুরি নয় বলে মনে করে। তাই তারা স্বামী বা স্ত্রীর কারও একটু শারীরিক সমস্যা হলেই পুরুষরা পতিতালয়ে দৌঁড় দেয় এবং নারীরা গোপনে অন্য পুরুষের কাছে দৌঁড় শুরু করে।

আমি মনে করি- প্রেমহীনতা মানব সমাজকে পশুর স্তরে রেখে দেয় এবং সম্পূর্ণ সমাজকে যান্ত্রিক করে তুলে কৃত্রিমতায় ভাসিয়ে দেয়। নীতি নৈতিকতা, প্রেম ভালবাসা, একগামীতাও অনেক দেশে স্বীকৃত। এসব নীতিতে যারা বিশ্বাসী- তারাও অন্যের ক্ষতি করেনা। জীবন্ত প্রেম, ভালবাসা, স্বামী স্ত্রী, সন্তান সন্ততি ইত্যাদি যেসব সমাজে আছে, তাদের জীবন সবচেয়ে সুস্থ এবং সুন্দর। কারণ এই ধরণের চিন্তা চেতনার মধ্যে দায়িত্ববোধ, প্রেমবোধ বেশি থাকে। নারীপুরুষের প্রেমময় সঙ্কোচহীন যৌন সম্পর্ক সুস্থ সমাজ সৃষ্টিতে এবং নারীকে পুতুল না ভাবাতে সহায়ক।

তিল তিল পরিশ্রমে স্বামি স্ত্রী মিলে গড়ে উঠে সংসার এবং তাদের মাঝে আসে ভবিষ্যৎ মানব শিশু। ভালবাসাপূর্ণ জীবনে একজন স্ত্রী তার স্বামীর জন্য এবং একজন স্বামী তার স্ত্রীর জন্য যৌন মিলনের অপেক্ষায় কিছু সময় নষ্ট করতে দ্বিধা বোধ করেনা বা দু:খিতও হয়না। যারা যৌন মিলনে প্রেম থাকা আবশ্যক মনে করে- তারা তাদের যৌন সঙ্গীর জন্য অপেক্ষা করতে জানে। এই অপেক্ষা অনেক মধুর এবং কোনোভাবেই কষ্টকর নয়।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×