অনেককেই বলতে শুনি, গত শতকের শেষ দশকে যাদের জন্ম তারা নাকি পৃথিবীর এ যাবৎ কালের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষ! কারন তাদের বেড়ে উঠার সময়টাতে পৃথিবীটা এক লাফে কয়েক হাজার বছর এগিয়ে গেছে। আর এই এগিয়ে যাওয়ার মুল উপাদান হোলো ডিশ টিভি, কম্পিউটার, ইন্টারনেট আর মোবাইল ফোন।
কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আমাদের প্রজন্ম মানে আমরা যারা সেই সময়ের বেশ কিছু আগে জন্মেছি তারা সবচেয়ে বেশী সৌভাগ্যবান। কারন আমরা বিবর্তনটা চোখের সামনে দেখতে পেরেছি।
আমাদের শৈশব কেটেছে বেতার নাটক শুনে। জানিনা এখনকার প্রজন্মের কেউ এটা শুনেছে কি না ! কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি বাংলাদেশ বেতার থেকে (তখনকার রেডিও বাংলাদেশ) যে মানের নাটক প্রচারিত হতো এখনকার টিভি বা এফ,এম চ্যানেলের অনুষ্ঠানের মান তার এক হাজার ভাগের এক ভাগও না ! প্রতি শুক্রুবার বিকেল ৩টায় অসাধারণ সব নাটক প্রচার করা হতো।
আমাদের সময় যোগাযোগের একটা মাধ্যম ছিল “পত্র মিতালী”। চিঠি লিখে লিখে এক দেশের মানুষ অন্য দেশের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতো। সেটার যে কি একটা মজা আর নেশা, যারা না করেছে তারা কখনো বুঝতে পারবেনা।
তখন বিভিন্ন দেশের স্ট্যাম্প আর কয়েন জমানো ছিল রুচি আর মননের প্রতীক। টিফিনের পয়সা, সালামি বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে সবাই এগুলি কিনতো। বাসায় অতিথি আর বন্ধুরা আসলে ছেলে মেয়েরা তাদের সংগ্রহ দেখিয়ে একজন আরেকজনকে তাক লাগাতে চাইতো।
বিনোদনের খুব বেশী মাধ্যম যেহেতু ছিলোনা তাই বিনোদনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতো গল্পের বই। তখন সারা বাংলাদেশের প্রতিটা এলাকার পাড়ায় বা মহল্লায় যে পরিমান লাইব্রেরী ছিল এখন তার এক আনাও খুজে পাওয়া যাবেনা।
এখন সব কিছুই হাতের মুঠোয়, তবুও জেনে বেড়ে উঠছে কয়জন ? পরিবর্তনের জোয়ার কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা সত্যি, কিন্তু মৌলিকতাকে পাস কাটিয়ে বেশী দূর যাওয়া আদৌউ সম্ভব কিনা, সময় তার উত্তর দিবে...
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৪