ডিমের লটারি হচ্ছে।
লোকজন ২ টাকা জমা দিয়ে কাগজে লেখা একটা নম্বর নিচ্ছে দোকানির কাছ থেকে।৫ জন মিলে ধরতে হবে লটারি।৫ জনের কাছে ৫ টা নম্বর।এই ৫ টি নম্বরের একটা রেপ্লিকা আছে দোকানির হাতের বাক্সে।সে সেটাকে ঝাঁকিয়ে সেখান থেকে একটা নম্বর তুলে বিজয়ির নাম ঘোষনা করছে।
অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে আনিস।প্রতিবারই সে এগিয়ে যায় একটা নম্বর কিনবে বলে।তবে বারবার পিছিয়ে যায় সে।পকেটের একমাত্র অবলম্বন তার ২ টাকা।
আবার লটারিতে একটা ডিম জেতার তার খুব ইচ্ছা।ডিম টা পেয়ে এক দৌড়ে সে তার মাকে গিয়ে দেখাবে।খুশিতে সে হাবুডুবু খেতে থাকবে মায়ের কোলে।
তার নিজ গ্রামের সৌদি ফেরত রফিক মোল্লার ছেলে রিফাত এই নিয়ে ৫ টা ডিম জিতল।
কিন্তু সে পর পর ৫ টি ডিম ই খেয়ে ফেলল।
এ নিয়ে আনিসের কোন আফসোস নেই।
বড়লোকের নাদুসনুদুস ছেলেদের ভাগ্য এমনি হয়,এটাই তার ধারনা।জন্মের পর থেকেই সে এসব দেখে অভ্যস্ত।
গ্রামের মেলায় ডিম লটারি হবে এই খুশিতে ক্লাস টুএর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করা আনিস ডিসেম্বর মাসের শীতে নিজের দেহের উত্তাপ ছাড়িয়ে ডিমের গরমে উত্তপ্ত হয় লেপের নিচে।
বাবাকে শতবার বলেও সে ২ টাকার ব্যবস্থা করতে পারে না।প্রতিদিন শুধু দূর থেকে ডিম লটারি দেখে।"২ টাকায় এক ডিম"।অবশেষে তার দুঃখ দেখে দয়া হয় বড়বুর।২ টা টাকা তার হাতে দিয়ে বলে এই নে।
২ টাকায় আনিস যেন দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তির ক্ষণস্থায়ী স্বাদ পেল।দৌড়ে মাঠ পেরিয়ে চলে গেল কাঙ্খিত স্থানে।"২ টাকায় এক ডিম"।দোকানি এখনো ডেকে চলেছে।এ ডাক যেন শত বছরের পুরনো ডাক।হাজার মাইল দূর থেকে এরা ডাকে আনিসদের।
দুরু দুরু কাঁপতে থাকা আনিসদের বুকে এরা শিহরণ তোলে,তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে কিংবা মোহনপুরের হাট পেরিয়ে।
অবশেষে সাহস পায় আনিস।২ টাকা জমা দিয়ে একটা নম্বর নেয় সে।ময়লা জমা সাদা কাগজের উপর তাচ্ছিল্য করে লেখা ৩ নম্বর।ক্লাস টু তে আনিসের রোল ও ছিল ৩।একে একে ৫ জনের কোটা পূরণ হয়।একেক রকম নম্বর হাতে নিয়ে সবাই খোদার নাম জপছে।সবার চোখ দোকানির হাতের বাক্সের দিকে।
এমন সময় বাক্স ঝাঁকানো বন্ধ হল।চোখ বন্ধ করে দোকানি একটা নম্বর তুলল।আল্লাহ্ আল্লাহ্ করতে থাকা আনিস যেন দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।তিইইইইইইন।
আৎকে উঠে আনিস।বিশ্বাস করতেও যেন কষ্ট হচ্ছে তার।জিতে গেছে সে।"২ টাকায় এক ডিম"।
ডিম হাতে নিয়ে দৌড় দিবে এমন অবস্থায় আনিস ফিরে তাকায় দোকানির অন্য একটা প্রস্তাব শুনে।
:গেদা ডিম টা খাবা না বেঁচবা? ৮ টাকা দিমু।
তুমি চাইলে ৪ বার লটারি ধরতে পারবা।
ছোট মনে কেমন যেন একটা হিসেব মিলিয়ে ফেলে আনিস।একবার ধরেই একটা ডিম পেয়েছে সে।৪ টা ধরে না জানি কয়টা পাওয়া যায়।তাছাড়া লটারি ধরার উত্তেজনাও পাওয়া যাবে।কপালে হয়ত আর কোন দিন ২ টাকা নাও জুটতে পারে।
শুরু হল আবার লটারি।আনিস নম্বর পেল ১।
তবে ডিম পেল না সে।তো কি হয়েছে। আরো ৩ টা সুযোগ আছে।জিতলেই "২ টাকায় এক ডিম"।দ্বিতীয় বার নম্বর পেল ৪।আবার ডিম পাওয়া হল না।তৃতীয় বার ২।এবারও ডিম নেই কপালে।
সব হারানোর ব্যাথায় কাতর হয়ে গেল আনিস।তার সামনে একটামাত্র সুযোগ বাকি আছে।হেরে গেলেই শেষ।কিছুটা ভরসা পেল সে ৩ সংখ্যাটা পেয়ে।এবারের নম্বর আবার সেই ৩।শুরু হল বাক্স ঝাঁকানো।দোকানি ঘোষনা করছে বিজয়ী নম্বর।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে আনিসের।হাত পা অবশ।চোখ বন্ধ।নিঃশ্বাস যেন থমকে গেছে।চাআআআর।
মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে আনিসের।
:কিরে বাজান হাঁপাইতাছস ক্যান?খোয়াব দেখছস?
হ মা খোয়াব দেখছি।ডিমের খোয়াব।
"২ টাকায় এক ডিম।"