somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাওলানা,প্রগতিবাদী,ধর্ষণ...

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাওলানা ‘ওয়াজে’ বলছেনঃ আমি বলছি আপনাকে,আল্লাহ-র দুনিয়ায় যতদিন মেয়েদের পোশাক ইসলামী না হবে,ততদিন পর্যন্ত ধর্ষণ বন্ধ হবার না...ছেলেরা সামলাইতে পারেনা,এরকম আল্লাহ-ই তাদেরকে বানিয়ে দিয়েছেন।ওদের সামলাইতে বলা আল্লাহর আইন ভঙ্গ করা!সৌদি আরবে রেপ নাই!কেন?মেয়েরা বোরখা পরে,তাই!আল্লাহ আপনারে হেদায়াত দিক!আপনি কাফির,বাংলার মাটিতে কাফিরের জায়গা নাই!আল্লাহ গজব ফেলুক আপনার মাথায়!

প্রগতিবাদী ‘সেমিনারে’ বলছেনঃ আপনি পাকিস্তানী দালাল,কথা কম!আপনি মাদ্রাসা পাশ,আমি আমেরিকা থেকে ব্রেইন ওয়াশ হয়ে,থুক্কু...আইডিয়া নিয়া আসছি,আমি বেশি জানি!আমি চুশীল,আমি জানি অইসব দেশ সোনার দেশ,অইসব দেশে রেপ নাই!ওগো মেয়েরা কাপড় পরেনা!নেংটা ঘুইরা বেড়ায়!তারপরো ধর্ষণ হয়না!!কেন??হ্যারা শিক্ষিত!আমাদের মেয়েরাও তাই আর কাপড় পরবেনা!এই-ই সমাধান!৭১-এ এতো ধর্ষণ কেন হইলো বলেন যদি নেংটা থাকলেই ধর্ষণ হয়??বলেন,ইসলামী দেশগুলায় এতো রেপ কেন হয়?আছে জবাব??সো,আমি জিতলাম!কেইস ডিসমিসড!

আমি ব্লগে আসার পর থেকে ধর্ষণ বিষয়ে মাওলানার ওয়াজ আর প্রগতিবাদীর সেমিনার,এই-ই দেখছি গেলো একমাস ধরে।মাওলানারা সেমিনার চেনেননা,প্রগতিবাদীরা আবার ওয়াজ চেনেননা!দুই পক্ষ দুই দিগন্তে।এসবের বাইরে যারা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তাদের কথা আলাদা,তবে সংখ্যাটি এতোই নগণ্য যে হতাশাজনক।কেন এই ব্লগে এতো ঠেলাঠেলী?কেন বেশিরভাগ-ই ভাবছেন না এই সমস্যা আপনাদের গলাবাজি বা একে অন্যকে দোষাদোষী করে সমাধান হবেনা বা আমি ঠিক তুমি ভুল এই নীতিতেও এর সমাধান হবেনা?সমাজকে রেপের মতো একটি সেনসিটিভ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সঠিক মতাদর্শ দিতে হলে আপনাদেরকে একে অন্যের কথা শুনতে হবে,সম্মিলিত একটি প্রয়াস থাকতে হবে যাতে পজিটিভ কিছু,গুরত্ববহ কিছু সমাধান আপনাদের মাধ্যমে ব্লগের পাঠকরা জানতে পারেন।বাঙ্গালের স্বভাবজাত কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি আর কত?
চলুন দেখি এই দুই দল যদি ঐক্যমতে পৌঁছান কখনো তাহলে সহজেই বিতর্ক বাদ দিয়ে তারা কত ভালো কিছু সমাধান উপস্থাপন করতে পারতেনঃ
এক-
ধর্ষণ হবার পরে মেয়েদের পোশাক নিয়ে চিল্লাফাল্লার মানেই ধর্ষকের দোষ ধর্ষিতার ঘাড়ে কিছুটা হলেও চাপিয়ে দেয়া,এটা বন্ধ করতে হবে।এটা মেয়েটির প্রতি এক ধরনের চরম অবমাননা,তাকে অপমান করার চূড়ান্ত ধর্ষকেরা করে ফেলেছে,এরপর আবার আপনি আমি যখন তার কাপড় নিয়ে টানাটানি করছি,তখন তার ‘ধরনী দ্বিধা হও’ বলা ছাড়া গতি কই?আর এখানে অনেক প্রশ্ন করা যায়,করার ফাঁক থেকে যায়-
 যারা ধর্ষিত হয় তাদের সবাই কী বাজে কাপড় পরে বলেই ধর্ষিত হয়?নাহ!একটি ৫ বছরের মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে এই কয়দিন আগে,সেই মেয়ের কী কাপড় নিয়ে কেউ কিছু বলবেন?ইসলাম এই মাসুম বাচ্চাকে হিজাব করতে বলেছে?নাহ!তবে?
 হিজাবী মেয়েরা যখন ধর্ষিত হয়??
 বোরখা পরা মুসলিম দেশে যখন ধর্ষণ হয়?
তাই এসব অর্বাচীন আচরণ বাদ দিতে হবে।
দুই-
Prevention is better than cure.এই কথাটি কারো মনে হয় না মানার কথা না।কেউ যদি বলেন যে ধর্ষণ কী রোগ যে prevent করব? এই প্রশ্নকারী অবশ্যই আরেক অর্বাচীন বলে গণ্য হবার যোগ্য।অবশ্যই এটি একটি রোগ,সমাজের অসুস্থতা,কিছু অসুস্থ মানুষের কাজ।সুতরাং এর preventive measure এটি মহামারী হবার আগেই নিতে হবে।কী সেগুলো?
 আইনের প্রয়োগ চাই,শক্ত প্রয়োগ।ধর্ষণের আইন আমার মনে হয়না ফাঁসির চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে।কেউ কেউ বলেন,রেপ করে তো মানুষ মারা হচ্ছেনা।তাহলে ফাঁসি কেন?কিন্তু যত যাই বলা হোকনা কেন,রেপ একজন মানুষের আত্মসম্মানকে মেরে ফেলার চেষ্টা।যত না তাকে,তার শরীরকে অপমান করা হয় তারচে বেশী তার মন আর মানসিক ভারসাম্যকে অপমান করা হয় যা সারা জীবন তাকে বইতে হবে এক দুঃস্বপ্নের মতো।আর যে হারে এর বিস্তার হচ্ছে তাতে ফাঁসি-ই এখানে অবশ্য কার্যকর আইন। আর যদি ফাঁসি না-ই হয়,তবে মৃত্যু পর্যন্ত জেলে থাকার শাস্তির বিধান দেয়া চাই।১২-১৩ বছর জেল খাটার পর পরিবারের লোকজনেরা মালা দিয়ে বাংলা ছিঃনেমার মতো আসামীকে ঘরে ফিরিয়ে আনবে,এরকম হলে হবেনা।আইন শক্ত হলে আর ৪-৫টা শাস্তি দ্রুত কার্যকর হলে সমাজের বাকি অসুস্থ নর্দমার কীটগুলোর টনক নড়বে।জঘন্য কাজটি করার আগে ১০ বার ভেবে নিবে।
২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর-এর ডেইলি স্টার বলছেঃ
As per reports of Odhikar, a rights body, as many as 760 women and children were raped between January and November while the number was 711 in 2011, 559 in 2010, 456 in 2009 and 454 in 2008.
Of the 760 victims this year, 188 were gang raped while 69 were killed after rape.
Click This Link
কিন্তু ধর্ষণ হবার পরে তার শাস্তি আমাদের দেশে কয়জনের হয়েছে এবং তা কী হয়েছে এখন পর্যন্ত,জানিনা।কিছু দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী দ্রুত বিচার দরকার।irony of truth হল,৩১শে ডিসেম্বর ২০১০-এর ডেইলী সান বলছেঃগেল ১০ বছরে ৫৭৮০ জন মহিলা আর শিশু রেপের শিকার হয়েছে,অথচ বিচারকরা সফট কর্নার দেখান শাস্তি দেবার সময় এবং আইনের লোকেরাই বলছেন আইন কম শক্ত হলে শাস্তি নাকি বেশী কার্যকর হত!!!“ Legal experts and police high-ups believe that the provision of capital punishment for rape in the Women and Children Repression Prevention Act 2000 is a hindrance to the implementation of the law. Judges often tend to avoid the punishment of life imprisonment or death sentence to offenders which, they said, would not happen if the punishment were lessened to a rational level.”
Click This Link

বাহ!আমরা ধন্য!বিচার করতে বিচারকরা মায়াময় হয়ে পড়েন,ভাবেন,আহা!না জানি কার ছেলে!এত কড়া শাস্তি কেমনে দেই!রেপ একটা করেছে,তো কী হল??এর জন্যে কী আর ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দেয়া যায়? X(
এই অবস্থার আশু উত্তরণ অবশ্যই দরকার।সরকার বাহাদুরে কেউ কী আছেন যিনি এসব রিপোর্ট পড়ে দেখেন??প্রকৃত অবস্থার খবরাখবর নেন,ব্যবস্থা নেন?
 কিছুদিন আগে ব্লগে এক আপু দেখলাম ভাল একটি প্রশ্ন করেছেন,সেটা হল,যারা অমুসলিম,তারা তো বোরখা পরবেনা,তাহলে পোশাকের ব্যাপারে এতো চিল্লানোয় লাভ কই?এর সহজ উত্তর হলঃসবাইকে বোরখা কেন পরতে হবে?সমাজ সংস্কার,মেয়েদের পোশাক নিয়ে কথা বলার মানেই বোরখা পরার কথা বলা নয়।তবে পোশাকের শালীনতা বোধ পুরোপুরি হারিয়ে যাবার আগেই এ নিয়ে সচেতন হতে হবে।কারণ,যে হারে মেয়েরা পশ্চিমা সমাজের ভালো দিক ছেড়ে অসুস্থ দিক নিয়ে ব্যস্ত হচ্ছে,তাদের এবং বলিউডের পোশাক নিয়ে লাফালাফি/বাড়াবাড়ি করছে তা তাদের মর্যাদাবোধকে পুরুষের মর্জিমাফিক করে তুলছে,তাকে পণ্যে রুপান্তর করছে,পুরুষের বিকৃত লালসা চরিতার্থ করতে নিয়ামক হচ্ছে পোশাকীয় অশালীনতা।এই হলিউডি/বলিউডি অপসংস্কৃতির আগ্রাসন বন্ধ করার এখন-ই সময়।পোশাকে শালীনতা/পরিমিতিবোধ ধার্মিক/অধার্মিক/বকধার্মিক(just kidding! :D ) সবার-ই থাকতে হবে।

 পর্ণ আর আজেবাজে সিনেমার আগ্রাসন বন্ধ করা খুবই জরুরী।এই ব্লগেই কিছু লোককে পর্ণের পক্ষে সাফাই গাইতে দেখেছি আমি!এটা নাকি সুস্থ যৌন জীবনের জন্যে খুব দরকার!আজব এ দুনিয়া!পর্ণ জরুরী???বিয়ে করুন না!বিয়ে করার সামর্থ্য না থাকলে রোজা রাখুন,মাথা ঠিক থাকবে।হিন্দু/ক্রিশ্চান অন্য ধর্মের হলে উপাস থাকুন।পুণ্যও হয়,মাথাও উলটাপালটা যুক্তি দিবেনা বিকৃত রুচির পক্ষে।যাই হোক,পর্ণের ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু আজেবাজে হলিউডী/বলিউডী চিঃনেমা?সব কিছু বন্ধ করা অসম্ভব সরকারের পক্ষে,তাই এখানে পারিবারিক শিক্ষা খুবই জরুরী।আমার বাচ্চা কী দেখা শিখবে আর আমি নিজে কী দেখব,সেটা আমাকেই ডিসাইড করতে হবে।আমি স্টার প্লাস দেখলে/ক্যাটরিনার অশ্লীল নাচ শিল্প বলে চালিয়ে নিয়ে দেখতে থাকলে আমার বাচ্চাও তাই দেখা শিখবে।নিজে ভালো মুভি দেখুন বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে,বাচ্চারা আপনাকে দেখেই শিখবে।
অবাক লাগে যখন দেখি শাহরুখ খান দামিনির মৃত্যু নিয়ে শোকাহত হন,প্রতিবাদে কত কিছু বলেন,অথচ উনারা হলেন এসবে উসকানি দাতাদের হোতা।তার মতো নায়কেরা মুভিতে রাস্তায় মেয়েটিকে দেখেই ‘ওঃ আমার জান, তোমাকে দেখে আমার উড়ে গেছে প্রাণ’- এই টাইপ গান গাওয়া শুরু করেন!কিছুদিন আগে দেখলাম,এক বাচ্চাদের মুভিতে এই ভদ্রলোক রাস্তায় দাঁড়িয়ে কারিনা কাপুরের পশ্চাতদেশে থাবা দিচ্ছেন!বাহ!কী সুন্দর!বাচ্চারা এই-ই তো শিখবে!ইভ-টিজিং আর তারপরের ধাপে রেপ...
তিন-
আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ দিন কে দিন অধোগতির হচ্ছে।অথচ উলটাটা হবার কথা!শিক্ষার হার বাড়ছে,কিন্তু শিক্ষিত লোক কই বাড়ছে?
 আমরা কোন মেয়ে ধর্ষিত হলে তার দোষ-ই আগে খুঁজতে লাগি।মেয়ে কেমন?তার চরিত্র কেমন?কাপড় কেমন পরে?রাত-বিরাতে কেন বেরুবে?এইসব হয়ে যায় আমাদের আসল জানার বিষয়।আরে আজিব!মেয়ে যদি পতিতাও হয় আর রাত ৩টায়ও বেরোয় ঘর থেকে তবু সেটা তাকে ধর্ষণ করার অধিকার কাউকে দেয়না বাওয়া।এই সহজ সত্য কবে আমরা স্বীকার করে নিব?যেন আমরা ধর্ষকদের পক্ষে সাফাই খুঁজতে থাকি আর মেয়েটার খুঁত পেলে বড় শান্তি পাই!ভাবি,’যাক,ছেলেটা একলা দায়ী না,তা কেমনে হবে,ছেলেরা কোন কারণ ছাড়া এমন করতেই পারেনা!!’এ বিষয়ে একটা ঘটনা বলি।২০০৪-এর ঘটনা বোধহয়।আমাদের সাস্ট-এ এরকম একটা ঘটনা ঘটল,এক আপু ধর্ষিত হলেন।তার-ই এক ক্লাসমেট কুকাজটা করেছিল।ক্যাম্পাস উত্তাল,আমরা মিছিল,মানব বন্ধন করছি,অবস্থান ধর্মঘট করছি।এর মাঝে যে রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল ওই অমানুষটা সেই দল প্রচার করে দিল,এই মেয়ে একটি প্রস্টিটিউট,এর ব্যাংক ব্যালান্স দেখলেই বোঝা যাবে।এতো টাকা সে কোথায় পায়??দুঃখজনক ব্যাপার হল,আমাদের মধ্যে কিছু মেয়েই এ নিয়ে আলোচনায় লেগে গেল যে কে কবে এই আপুরে কোথায় কখন দেখেছে।হায় আমরা!হায় বাঙ্গাল!
 আবার আরেক অমানবিকতার পরিচয় আমরা দেই আদালতে।উকিলদের বাজে জেরা পদ্ধতি এই দুর্ভাগ্য পীড়িত নারীদের অপমান আর কষ্টের তীব্রতা অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যায়।উকিলরা বলবেন,জেরা তো করতে হবে। অবশ্যই করতে হবে,কিন্তু এদের প্রতি মমত্ববোধ রেখেই তা করতে হবে,সম্মানবোধ বজায় রেখে করতে হবে।মনে রাখতে হবে আজ এর জায়গায় আমার নিজের স্ত্রী-মেয়ে-বোন যে কোন আত্মীয় থাকতে পারতো।
চার-
শেষ পয়েন্ট পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে।
 বাবা-মা যতদিন বাচ্চাদের কাছে যৌনতা ব্যাপারটিকে গোপন হাওয়াই মিঠাই বানিয়ে রাখবেন ততদিন ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে এই টপিক একটি রহস্যই থেকে যাবে আর ছেলেদের মনে এ নিয়ে বাজে ধারনা,বাজে চিন্তার উদ্রেক হতেই থাকবে।তাদের সবচে ভালো বন্ধু হবার চেষ্টা করতে হবে,বুঝাতে হবে আমাকে তুমি সব-ই বলতে পার,কখন,কি পরিস্থিতির শিকার তুমি হচ্ছ তা নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পার।তাদের সব সমস্যার সমাধান বাবা-মা(অথবা যে কোন একজন) দিতে পারে,এই আস্থা অর্জন সবচে বড় কথা।তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে,লুকিয়ে রেখে,এড়িয়ে গিয়ে তাদের জন্যে একে নিষিদ্ধ কিছু বানিয়ে দেবার ফল কখনই শুভ হবেনা।একটু বুদ্ধি খাটিয়ে,চিন্তা করে এ কাজটি বাবা-মায়ের চেয়ে ভালো আর কারো করতে পারার কথা না,কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের বাবা-মা সেটা পারেন তো না-ই,বরং বাচ্চাদের সাথে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে ওরা বড় হবার সাথে সাথে,যৌনতা বিকৃত আনন্দের বিষয় হয়ে ধরা দেয় তাদের কাছে।
 মেয়েদের মানসিকতা ছোটবেলা থেকেই যেন বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করার জন্যে তৈরি হয়,সেটা নিশ্চিত করা দরকার। বড় হবার সাথে সাথে নানা শিক্ষার মাঝে ওদের এও জানানো প্রয়োজন যে তোমার শারীরিক পবিত্রতা আসবে তোমার মন থেকে।একটি মেয়ে রেপ হওয়া মানে,তার সাথে কোন ছেলে বাজে ব্যবহার করার মানে এই না যে তার সব শেষ হয়ে গেছে।দোষ তার নয়।রেপ যে হয় লজ্জা তার না,লজ্জা সমাজের বাকিদের,এই শিক্ষা ছেলে-মেয়ে দুজনকেই দিতে হবে। এইটুক জ্ঞান-এর অভাবে কত মেয়ে ইভ-টিজিং এর শিকার হয়ে দেখা যায় গলায় দড়ি দেয় লজ্জায়,অপমানে।অথচ তার বাবা-মা যদি তাকে শিখাতেন,লজ্জা/অপমান তোমার হয়নি,হয়েছে ওই জানোয়ারের যে তোমাকে টিজ করেছে,তবে সে এভাবে নিজের মূল্যবান জীবন শেষ করতোনা।
 ছেলেদের এবং মেয়েদের স্থান বাবা-মার কাছে সমান হওয়া আবশ্যক।আমাদের দেশে দেখা যায়, ছোটবেলা থেকে-ই ছেলেটি বেশী গুরুত্ব পেতে শিখে যায়,মেয়েদের নিজের সমান মর্যাদা না দিতে বাবা-মার হাতে ধরেই তারা শিখে।আশ্চর্য লাগে দেখতে যে মেয়েটি একটু বড় হলেই মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করা শুরু করে,আর ছেলেটি নিজের বিছানা গোছানো,খাবার পর নিজের প্লেট ধোয়া,মাকে কোন কাজে সাহায্য করা,কিছুই শিখেনা।বরং নিজের কাজ বোনের উপর চাপিয়ে দেয়া শিখে।অর্থাৎ সে জানতে শিখে,আমি সুপিরিওর,মেয়েটি ইনফেরিওর।এই ধারনা দেয়া বন্ধ করা দরকার,পরিবারে যে কোন কাজে মাকে সহায়তা মেয়েটি এবং ছেলেটি দুজন-ই করবে।
ছেলেরা এরপর বড় বোনদেরকেও মারধর করতে শিখে যায় বড় হবার সাথে সাথে,বাবা-মাও ভাইবোনের মারামারি ভেবে নাক গলান না।অথচ এসব ছোটখাটো ব্যাপার থেকেই ছেলেরা জানতে শিখে মেয়েরা দুর্বল, আমার অধস্তন,আমি যা বলবো তার তাই করার কথা,আমি বস্।বাবা-মায়ের মধ্যে এমপ্লয়ী-এমপ্লয়ার এমন সম্পর্ক দেখেও ছেলেরা এরকম ধারনা পায় যা অবশ্যই তাদেরকে মেয়েদের অসম্মান করতে শেখায়।লিঙ্গ ভেদ না করে বাচ্চাদের Equal treatment করা এজন্যেই জরুরী।বাবা-মায়ের নিজেদের সম্পর্ক নিয়েও ভাবা দরকার। সংসারে বাবা-মা ঊর্ধ্বতন-অধস্তন নন,দুজনের সেখানে সমান অধিকার থাকতে হবে।বাবা কর্তা হবার মানে এই না যে তিনি-ই সর্বেসর্বা।
 বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত যে মেয়েরা শারীরিক ভাবে ছেলেদের চেয়ে দুর্বল।এই ব্যাপারটি মাথায় রেখে তাদেরকে ছোটবেলা থেকে নাচের স্কুল/গানের স্কুল-এ ফালতু দৌড়াদৌড়ি না করিয়ে শারীরিক কসরতের স্কুলে দিতে হবে।আত্মরক্ষার জন্যে তাদের প্রস্তুতি থাকা আবশ্যক।
 পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমেই মেয়েদের অশ্লীল কাপড় পরা থেকে,নিজেকে ছেলেদের চোখে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা থেকে বিরত করা সম্ভব।মেয়েরা নিজেদের আইডেন্টিটি নিয়ে ছোটবেলা থেকেই confused থাকে,inferiority complex-এ ভুগে,তাই নিজেদের সুন্দর করার চেষ্টা,আকর্ষণীয় করার চেষ্টা তাদের ছেলেদের চেয়ে হাজার গুণে বেশী থাকে।একটি আধুনিক সমাজের জন্যে এটা চরম লজ্জাজনক।এই কমপ্লেক্সিটি থেকে তাদের বের করে আনতে হবে।ছেলেবেলা থেকেই জানাতে হবে তুমি পুরুষের দাস নও,স্রষ্টা তোমাকে সে জন্যে সৃষ্টি করেননি,তার মনোরঞ্জন করা তোমার আরাধ্য নয়। ধর্মীয় শিক্ষা,বিনা ধর্মীয় শিক্ষা যেভাবেই বাচ্চাকে বড় করুন না কেন,এইটুকু শেখানো বাবা-মায়ের অবশ্য কর্তব্য।
শেষ করছি ধর্ষণের বিরুদ্ধে সবার সম্মিলিত প্রয়াস আহবান করে; ধর্ম পরায়ণ, ধর্মহীন, যুক্তিবাদী,আবেগী,কবি,লেখক,চাকুরীজীবী,ব্যবসায়ী সবার কাছে অনুরোধ রেখে যেন তারা ঐক্যবদ্ধ হন সকল বিভেদ ভুলে।আপনাদের মতপার্থক্য সমাজকে সচেতন করবেনা, দ্বিধাগ্রস্ত করা ছাড়া।মনে রাখতে হবে,ধর্ষিতাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা তিন জায়গায়-
 সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে সমাজকে সহায়তা করা।
 সরকারের ঘুম ভাঙ্গানোর জন্যে পদক্ষেপ নেয়া।
 মেয়েদের ব্যাপারে পুরুষদের মানসিকতার এবং শিক্ষার আমূল পরিবর্তন করা।তাদের মনে ধর্ষিতার প্রতি আক্রোশ কিংবা করুণা নয়,বরং কবির সুমনের এই গানটির মত নতজানু হয়ে ক্ষমা চাওয়ার প্রবণতা আসতে হবে –
আমার শহর কুন্ঠিত বড়, ক্ষমা করো তুমি মেয়ে
পুরুষ বলেই গাইছি এ গান , শুধু মার্জনা চেয়ে ...
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৮
১৭টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×