somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভোট কাক দিলু?*

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে মনে ভাবলাম, এমন দিন আমার জন্য এই প্রথম। সারা জীবনে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মুখে কি আর কম ফেনা তুলেছি? তাতে কোন লাভ হয়নি ঠিক-তবে আজকে যে ভোটটা দিতে যাব, কেবল সেটিই হবে দেশকে নিয়ে আমার সকল “রাজনৈতিক” ভাবনার ও সিদ্ধান্তের বহিঃপ্রকাশ।

তাই দুপুরের দিকে মাকে নিয়ে রওনা হলাম ভোট কেন্দ্রে। মনে পড়ল আজ থেকে প্রায় বার বছর আগে এভাবেই মায়ের আঁচল ধরে গিয়েছিলাম ভোট কেন্দ্রে, অবশ্য তখন বয়সের কারণে বৈষম্যহীনতায় পড়ে আর ভোট দেয়া হয় নি । কিন্তু এবারের কথা আলাদা। দিনে দিনে বয়স তো আর কম হল না!

আমাদের ভোট কেন্দ্রটা বাসা থেকে প্রায় ১০ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ। ইচ্ছে করলে রিকশাও নেয়া যেত, তবে প্রায় সবার মত আমরাও পদব্রজেই গমন করিলাম । সত্যি কথা বলতে চেনা রাস্তাগুলোও আমার কাছে পুরোপুরি অচেনা মনে হচ্ছিল। রাস্তার সব মানুষগুলোই হয় ভোট দিয়ে ফিরে আসছে নয়ত ভোট দিতে যাচ্ছে, কেবল নববর্ষের রমনা-শাহবাগের এলাকাকেই এর সাথে তুলনা করা যায়। আর আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ* ভোটার, অর্থাত্ নারীরাও অনেকে খুব করে সেজেগুঁজে এসেছেন। দেখতে খুবই ভাল লাগছিল

ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকেও খুশি না হয়ে পারা গেল না। সচরাচর ভোট কেন্দ্রে যে বিশাল লম্বা লাইন দেখা যায়, এখানে তেমনটা হয় নি। বরং অনেকগুলো কক্ষে আলাদা আলাদা করে ক্রমিং নম্বর অনুযায়ী ভোটারদের ভোটের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। কে কোন কক্ষে ভোট দেবেন তাও সুন্দর করে দেয়ালে বিভিন্ন জায়গায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আর সার্বক্ষণিক সহায়তার জন্য পুলিশ ভাইয়ারা তো আছেনই। ক্রমিং নম্বর ঠিক রেখে আবার মহিলাদের জন্য করা হয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। মা তাঁর জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলে আমিও চলে গেলাম আমার গন্তব্যস্থলে।

সব ভালর মাঝে বাঁধা এল ভোট দেয়ার সময়। ভোটারদেরকে জাতীয় আইডি ছাড়াও একটা ক্রমিক নম্বর দেয়া হয়েছে। আর ভোট দেবার জন্য এগিয়ে গেলে মহিলা অফিসারটি যখন হাসিমুখে আমার সেই নাম্বারটি জানতে চাইলেন,তখন দেখি আমার আইডি ৬৫৩ তে দিব্যি “নূর মোহাম্মদ” নামে এক ব্যক্তির নাম। আমার তো আক্কেল গুড়ুম, একটু আগেও ভোট দেব বলে যে উত্তেজনা মনে বাসা বেঁধেছিল, তা উবে গিয়ে সেখানে বাসা বাঁধল এক অনিশ্চয়তা। ভোট দিতে পারব তো? আমাকে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেয়া হল কেন্দ্রের অপর প্রান্তে। কিন্তু ওখানে আমার ক্রমিক নম্বরের ধারেকাছেও কেউ নেই। তাই সেখান থেকে আবার আগের জায়গাটিতে ফিরে আসলাম। গোলকধাঁধা যাকে বলে আর কি :(

এদিকে আমার মায়ের ভোট দেয়া শেষ। তখন আমাদের দুজনকে কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক পুলিশ ভাই হাসিমুখে এগিয়ে এসে জানতে চাইলেন আমি পূর্ব না পশ্চিম। ছোটবেলায় দেখতাম আমার বড়-ভাইকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা পূর্ব-পশ্চিম নামে একটা মোটা বই পড়তে। কিন্তু এ ছাড়া পূর্ব-পশ্চিমের কোন ধারণাই করতে পারছিলাম না (আমি আবার উত্তর-দক্ষিণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিনা )। এর মাঝেই পেয়ে গেলাম আমাদের এলাকার এক বড় ভাইয়াকে। তিনিই আমাকে নিয়ে গেলেন সঠিক স্থানে। আসলে এখানেও ক্রমিক নম্বর একই ছিল, তবে এলাকাটি ছিল আলাদা। যা হোক, ভোট দিতে লাগল মাত্র এক মিনিট। দ্বিগ্ধিজয়ীর হাসি নিয়ে ফিরে এলাম মার কাছে :)। এসে দেখি আমার দৈত্যকায় মেজ ভাইও হাজির কেন্দ্রে। তাঁকেও পাঠিয়ে দিলাম আমার জায়গায়।

এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন ভক্ত আমি শুরু থেকেই। অনেকের অনেক আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত একটি সুন্দর নির্বাচন হবে বলেই আমার আশা ছিল। আর নির্বাচনটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক (!) একটি সরকারের গণতান্ত্রিক দায়িত্বের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়েই থাকবে। আগামীকাল যখন একটি দল নির্বাচিত হবে তখন অনেক দুর্নীতিপরায়ণ নেতাই হয়ত আবার ফিরে আসবেন বিপুল বিক্রমে। পরাজিত দল অভিযোগ তুলবেন রেকর্ডভাঙা ব্যাপক কারচুপির। সকল প্রতিশ্রুতি সিঁকেয় তুলে, ক্ষমা চাওয়ার মধুর স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলতে আবারো আগের মতই অপরাধে লিপ্ত হবেন আমাদের মহান নেতারা। কিন্তু গত দু'বছরে আশা ও আশাভঙ্গের ব্যাপক দোলাচলে পড়তে পড়তে আমার একটি বদ্ধমূল বিশ্বাস জন্মেছে মনে। আর তা হল কোন কিছুই বৃথা যায় না। মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক সচেতন, যত দিন যাবে এই সচেতনতা ক্রমেই বাড়তে থাকবে। সকল কালোর বিরুদ্ধে সুনিশ্চিত জয়ের পথে এভাবেই এগিয়ে চলছি আমরা, আবারো।

দিন বদলের যে স্বপ্ন আমরা দেখি, সেই স্বপ্নকে সত্যি করার একটি স্বপ্নময় ক্ষণ হয়ে থাক আজকের দিনটি। শুভেচ্ছা।

*”ভোট কাক দিলু” রংপুরের স্থানীয় ভাষা। এর অর্থ “ভোট কাকে দিলে”।
*এবারে মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৪,১২,৩৬,১৪৯ জন। আর পুরুষ ভোটার ৩,৯৮,২২,৫৪৯ জন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৫৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×