নয়নে উদাস দৃষ্টি, অবয়বে হতাশা,
ভেবে ভেবে ক্লান্ত, পায়নি তবু একটু আশা ।
আমার মায়ের ভবিষ্যত কেমন যেন কুয়াশা,
দুর্দশাগ্রস্থ মা আমার, পায় না কোন দিশা ।
মা যে আজ বড় শ্রান্ত, পথচলায় ক্লান্ত,
রুগ্ন মায়ের মনে অশান্তির নেই অন্ত ।
প্রশান্ত হত চিত্ত, যে বদনখানি একবার দর্শনে,
নয়ন জলে ভেসে যেতাম মায়ের বদন মলিনে ।
কেন এমন মলিন দেখায়, সদা হাস্যময় মাকে
এখন ভাবায় না আর, মায়ের হাহাকার -তার সন্তানকে ।
তাই তো মা আমার আজ রুপ-লাবন্যহীন
সন্তানের অবহেলায় পীড়িত মা, -আজ বৈচিত্রহীন ।
যে সন্তানদের আগলালেন সূচনালগ্ন হতে
সেই আদরের সন্তানরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মা হতে ।
সূর্যোদয়ে মা আমার সাজত এক ঢঙ্গে
সূর্যাস্তে অপরুপ হত কাঁচা সোনা রঙ্গে ।
তারা ভরা রাতে সাজত মা স্নিগ্ধতা নিয়ে,
পূর্নিমায় বরণ করত চাঁদের স্বচ্ছ আলো জমিয়ে ।
ছয় ঋতুতে মায়ের রুপ ঝরত অনর্গল ;
সারাবছর মায়ের রুপের চলত এমন বদল ।
মুক্তহস্তে সন্তানদের জন্য বিলিয়েছেন নিজেকে
সঁপেছেন তার যত রুপ-সজ্জা আপন সন্তানকে ।
তাদের সুখে খুঁজেছে মা আপন প্রশান্তি,
সন্তানদের মুখে ফোটাতে হাসি, সয়েছেন সব ভোগান্তি ।
ও মা, মাগো তুমি কেন এত স্বার্থহীন,
কেন তাদের ঠায় দাও, যারা হৃদয়হীন ?
যারা তোমার পবিত্র মাটিকে নোংরা করে
তোমার দিকে ফিরেও চায় না, থাক অনাদরে ।
তবুও তাদের প্রতি তোমার এত ভালবাসা
তোমার ভবিষ্যতের সামনে যারা এনেছে অমানিশা !
মাগো, তোমার নীরব ক্রন্দন বাতাসে ভাসে,
তোমার অব্যক্ত ব্যাথা ছড়ায় আশে-পাশে ।
তোমার নিস্কলুষ মাটিকে কলংকিত করেছে তারা,
বেদনাহত ডাক উপেক্ষা করেছে, দেয়নি সাড়া ।
আজ তোমার এই মাটি বিষাক্ততায় ভরা,
যে মাটির ঘ্রানই ছিল পাগলপারা ।
যে মাটির বুকে জন্ম নিয়েছে হাজারো রতন,
যার নীচে লুকিয়ে আছে কত না গুপ্তধন ।
সে মাটিকে অপবিত্র করেছে ঐ নরপিশাচের দল
তোমার আকাশ তোমার মাটিই তাদের সম্বল ।
কেমন করে পারে মাগো, শেষ করতে তোমায় ?
প্রয়োজনে হয়ত বেঁচে দিতে পারে তোমার জীবনটাই !
মিথ্যা বলে অহরহ, নেই কোন জড়তা
চোর-বাটপারে ভরা দেশ, নেই কারো সাধুতা ।
অনিয়ম-অনাচার দূর্নীতির বাহার, এখন এই দেশে
নিত্যাদিনই হচ্ছে মানুষ হত্যা, খুনীরা আছে আয়েশে ।
মায়ের এই অবস্থায়, মা যে বড় অসহায়
সকল অত্যাচার সইছে, হয়ে নিরুপায় ।
মাকে দেখলে মনে হয়, গোধুলী বেলায়-
অস্তমিত যাওয়া সূর্য, সমস্ত ঔজ্জল্য হারায় ।
আজ নিরাপরাধ ব্যক্তিরা শাস্তি পায়,
অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়ায় ।
কি আর করবে মাগো, কুলাংগারদের জন্য
তাদের সুবিধার্থে, তোমায় বানিয়েছে তার পন্য ।
এই হায়েনার দল, অহংকারী যত লক্ষীছাড়া
কথা দিলাম তোমায়, -করব তাদের দেশছাড়া ।
এই দাম্ভিকতায় ভরা সমাজের বোঝা,
তোমার বহন করতে হবে না ; -আমাদের লজ্জা ।
মাগো, তোমার মৃত্তিকা থেকে দূর করব
পাপী-নষ্ট-অত্যাচারীদের বিপক্ষে লড়বই লড়ব ।
তুমি শুধু তোমার সেই রুপে ফিরে এসো
তোমার সেই অপরুপ সজ্জা নিয়ে বসো ।
তুমি তো জানো, তোমার বদন মলিন হলে
নয়ন জলে ভাসি মোরা, -ডুবি দুখের অতলে ।
মাগো, ফিরে আসো নিয়ে তোমার বিভিন্ন রুপরাশি
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি ।
বিরহ-ব্যাথা, রুগ্ন অবস্থা ভুলে যাও, -ও দেশ মা
সেই চোখধাধানো রূপে ফিরে আসো, নাই যার উপমা ।
দিন বদলের গল্প শোনায়, তোমার এই সন্তানরা ;
কুলাংগাররা নয়, -আমরা বলছি, দেবে না তবু ধরা !
মা, মাগো ! আর যে সহ্য হয় না,
কিভাবে এই দূরাবস্থা যাবে বল না !
সেভাবেই তোমায় গড়বো মোরা, -দিলাম কথা শেষ
চোখের জলে ভাসিয়ে দেব, যত দুঃখ-কষ্ট ক্লেশ ;
জীবন দিয়ে গড়ে দিব নতুন, -সোনার বাংলাদেশ ।।
__________________#########__________________