বাংলাদেশে যতগুলি ধর্মীয় সহিংসতা হয়েছে তাঁর পেছনে ধর্মীয় সংকীর্ণতার থেকেও বেশি যা কাজ করে তা হল একটি সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠির কায়েমি স্বার্থ এবং ভারতীয় আভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রতিঘাত। এই বিষয়টি মাথা রেখে পর্যালোচনা করুন দেখবেন সবটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে। একদিকে যেমন দিনশেষে হিন্দুদের বাড়ীটা-জমিটা ঐ এলাকার মুসলিম নামধারী কারো না কারো হস্তগত হয়। অন্যদিকে প্রতিহিংসা চরিতার্থ হয়।
যদি এমন আইন থাকত যে, এক ধর্মাবলম্বীর সম্পদ অন্য ধর্মাবলম্বী কারো কাছে বিক্রি করা যাবে না। তাতে হয়ত কিছুটা হলেও এই সহিংসতার মাত্রা কমত। কেননা যাদের উদ্দেশ্য হাতিয়ে নেয়া তারা যদি দেখত হিন্দুদের উচ্ছেদ করা গেলেও সম্পত্তি হস্তগত হবে না তাহলে তাঁরা নিরস্ত্র হত। আর যত সহিংসতার ঘটনা ঘটে সেখানে আড়াল থেকে মুল ভুমিকাটা ঐ গোষ্ঠিটিই নেয় সামনে এগিয়ে দেয় সাধারন মানুষগুলোকে। যারা ব্যক্তিগত ভাবে খুব একটা ধার্মিক তাও নয়। এরা নিজেদের ধর্ম(ইসলাম) সম্পর্কে অনেকটাই উদাসীন জানেও খুব কম। ফলে সামান্য উস্কানীতেই মাঠে নেমে পরে। এ দেশেও সুযোগ সন্ধানী একটি গোষ্ঠী রয়েছে। আর তারাই সময়ে অসময়ে কায়েমি স্বার্থে সহিংসতা ঘটায় কিন্তু এটা ঠিক সেই সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠীটি সমাজে একটি নীরব সমর্থন পায়। যার জন্য দায়ী ভারতীয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতি।
এমনিতে এ দেশে হিন্দু মুসলিমের সম্পর্কটা দু'রকম। যাদের সাথে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নেই তাঁরা অনেকটাই বন্ধু ভাবাপন্ন আর যাদের সাথে স্বার্থের দ্বন্দ্ব আছে তাঁরা শত্রুভাবাপান্ন। এই শত্রুরাতা কিছুটা ধর্মভিত্তিক সন্দেহ নেই নয়ত সুযোগ সন্ধানীরা সামাজিক প্রশ্রয় কি করে পায়। তবে অনেকটাই পার্থিব সম্পদ -সম্পত্তি সংক্রান্ত। এটাও ঠিক যে, এ দেশের সাধারণ মুসলমানরাও কখনো কখনো হিন্দুদের শত্রু ভাবতে শুরু করে যেটা একেবারেই ধর্ম কেন্দ্রিক আরা সেটা তখনই ঘটে যখন ভারতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমানরা অত্যাচারের স্বীকার হন। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ভারতকে হিন্দু প্রধান রাষ্ট্র হিসেবে সে দেশের মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে হবে। মানিনীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতকেও সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, "সেখানেও (ভারতে) এমন কিছু যেন না করা হয় যার প্রভাব আমাদের দেশে এসে পড়ে, আর আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত আসে।'' https://www.bbc.com/bengali/news-58934642
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ কথা বলার পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যেমন- ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর এ দেশের মুসলমানরা স্বাভাবিক ভাবেই বিক্ষুব্ধ হয়েছিল আর সে জন্য এ দেশে অবস্থানরত হিন্দুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ফসিলটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে। এর পর থেকেই সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় - বিশেষ করে মুসলিমরা - দিনে দিনে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছে।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে আগে ভারতের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীর প্রসঙ্গ টেনে তাদেরকে উইপোকার সাথে তুলনা করেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে ভারতে শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে পিটিয়ে হত্যার মত বেশ কিছু ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি উগ্র হিন্দুত্ব-বাদীদের উদ্ধত আচরণকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া নিয়ে ভারতের ভেতরেই অনেক অভিযোগ উঠছে। প্রতিবাদ হয়েছে। অদ্ভুত বিষয় হল সে সব নিয়ে এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কখনোই প্রতিবাদ করেনি। যদি করত তাহলে আমাদের দেশে হিন্দু মুসলিমের সম্প্রীতি জোরদার হত। যা শেষ পর্যন্ত তাদের রক্ষাকবচ হিসেবেই কাজ করত।
এসবের একটা প্রতিঘাত তো রয়েছে। সরকারীভাবে এ সবের বিরুদ্ধে কখনো প্রতিবাদ করা হয় নি তাঁর মানে তো এই নয় যে এ দেশের সাধারণ মুসলমান বিক্ষুব্ধ নয়। এ দেশে যেটুকু সাম্প্রদায়িকতা আছে তাতে হিন্দুরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো না ভারত যদি প্রতিনিয়ত উস্কে না দিত। কাজেই বাংলাদেশের হিন্দুদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে ভারত সরকারকেও তাঁর অভ্যন্তরের সংখ্যালঘু মুসলিমদের দিকে নজর দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:৩৮