বলা হচ্ছে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অথচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে মোটর সাইকেল এবং তিন চাকার যান অর্থাৎ সিএনজি। সাধারণ মানুষ যে গন পরিবহনে চড়ে সেই গাড়ির টোলের হার ১৬০ টাকা। স্বাভাবিকভাবেই চালকরা এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এড়িয়ে চলবেন। প্রথমত টোলের বিষয় আছে দ্বিতীয়ত দুই মিনিট পর পর যাত্রী ওঠানামা করানো যাবে না। আবার এই রুটে চলাচলের জন্য ঢাকার চাকা জাতীয় কোন বাস রুটের ব্যবস্থাও করা হয় নি। তার মানে দাঁড়ালো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি এক কথায় সাধারণ মানুষের জন্য নয়। সরকার কেবলমাত্র নিজস্ব গাড়ীর মালিক এবং যারা চার চাকার গাড়ী ব্যবহারের ক্ষমতা রাখেন তাদের জন্যই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করেছেন। তা তারা করতেই পারেন। বাংলাদেশের মানুষ এখন দুই দলে বিভক্ত এক রাজা দুই প্রজা। এখানে কিছু সংখ্যক(কয়েক লক্ষ) রাজা আছেন, বাকি বিশ কোটি প্রজা।
এই রাজাদের সুযোগ সুবিধা সকল সরকার সর্বদাই বেশ আন্তরিকতার সাথেই দেখে থাকেন। কারণটা হল আজকের ক্ষমতাধরদের তো কাল ক্ষমতাহীন রাজায় পরিণত হতেই হবে। কাজেই রাজাদের সকল বন্দবস্ত সুচারুরূপে হওয়া চাই। বুদ্ধিমানেরাই আগামীকালের কথা ভাবে। আর সে ভাবনা থেকেই তারা বলেন, "বাজার সিন্ডিকেটে হাত দেয়া যাবে না"। ঠিকই তো বলেন, কেন হাত দিবেন তারা তারাই তো! তাই না?
বাংলাদেশের উন্নয়নের রোড ম্যাপের দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন। সে রোড ম্যাপে রাজার স্থান কতটা আর প্রজার স্থানই বা কতটা। এখানে রাজাদের কাতারে নিত্য নতুন নাম যোগ হচ্ছে। তাদের সুযোগ সুবিধা তো সরকারকেই দেখতে হবে। তাই না? এ দেশে রাজার যে বাম্পার ফলন ঘটছে তা সরকারীভাবেই স্বীকৃত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী,
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিল ৫ জন
১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়।
১৯৮০ সালে ছিল ৯৮
১৯৯০ সালে ৯৪৩
১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪
২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২
২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭
২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩
২০২০ সালে ৯৩ হাজার ৮৯০।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে এর সংখ্যা দাড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬ । সুত্র-যুগান্তর
১৯৭২ থেকে ২০২২ পঞ্চাশ বছরে পাঁচ জন থেকে এক লাখ উনিশ শত ছিয়াত্তর! অর্থাৎ এ দেশে রাজার বাম্পার ফলন অব্যাহত আছে! তবে এ হার বুঝতে বিআরটিএ'র এই তথ্যটি আরেকটু বেশি সহায়ক। বিআরটিএ'র তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় মোট গাড়ির ১৮ শতাংশই প্রাইভেট কার। যার পরিমাণ তিন লাখ ৮ হাজার ৮৬০টি। পক্ষান্তরে গন পরিবহনের সংখ্যা মাত্র- ৩৬ হাজার ৯৭৮টি, যা মোট গাড়ির ২ শতাংশ। সূত্র-সারাবাংলা
দেশে রাজার সংখ্যা বাড়ছে তাতে কি প্রজাদের জ্বলুনি হচ্ছে? এ প্রশ্নটা তো আসবেই। আর সেটা যে সবেগে আমাদের দিকেই আসবে তা বলাই বাহুল্য। তাই আগে থেকেই উত্তরটা দিচ্ছি। রাজার সংখ্যা বাড়ুক, কোন সমস্যা নেই। সরকার রাজাদের আরও বেশি সুযোগ সুবিধা করে দিন তাতেও সমস্যা নেই। এমনকি দেশটাকে তাদের জন্য স্বর্গ বানিয়ে দিন তাতেও প্রজাদের কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হল এই রাজা হওয়ার প্রক্রিয়াটা যে একেবারেই প্রজা শোষিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা তো ব্রিটিশদের অধীনে নেই! পাকিস্তানের অধীনেও নেই। আপনাদের ভাষায় স্বাধীন। যদি তাই হয় তাহলে কেন এত বেশি অসহায় সাধারণ মানুষ। হাসপাতালে জায়গা নেই, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেই, ওষুধের দাম ক্রমাগত বাড়ছে, খাদ্য দ্রব্যের দাম বাড়ছে, জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। উৎপাদক যোগান হারাচ্ছে। সব যে মধ্য স্বত্বভোগীর পকেটে চলে যাচ্ছে। রাজার ছত্রছায়ায় নতুন রাজা তৈরি হচ্ছে, দ্রুতই রাজারা মহারাজা হয়ে উঠছে। সমস্যাটা সেখানে। সাধারণ মানুষের জীবনমান ক্রমান্বয়ে নিচে মানছে। সমস্যাটা সেখানে।
আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে যখন দেখছি সাধারণের অর্থে অসাধারনদের জন্য করা উন্নয়ন প্রকল্পগুলিকে জন স্বার্থে বলে চালান হচ্ছে। অথচ সেটা জনস্বার্থেই হওয়া উচিত ছিল। এই প্রতারণাটা কেন? এটা বন্ধ হোক। অথবা এবার জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজানো হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৩