আমার এক বন্ধুকে নিয়ে আসার জন্য স্থানীয় বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলাম। সেখানে এমন এক অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম, যা কেবল লোকমুখেই শোনা যায়। জীবনকে বদলে দেয়, এমন ঘটনাটি ঘটল আমার ঠিক দু’হাত দূরেই।
যাত্রীরা যখন বের হয়ে আসছিল, আমি যথাসম্ভব লম্বা হয়ে ভীড়ের মধ্যে আমার বন্ধুকে খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। দেখলাম, এক লোক দু’হাতে দুটি ব্যাগ নিয়ে আমার দিকেই আসছে। আমার ঠিক পাশে এসেই সে তার পরিবারের সাথে মিলিত হলো।
প্রথমে সে তার সবচাইতে ছোট ছেলের (সম্ভভত ছয় বছর বয়স) কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল, অনেকক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখার পর তাকে ছেড়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমাকে আবার দেখে আমার খুব ভালো লাগছে, তোমাকে আমি অনেক মিস করেছি’। ছেলেটি লজ্জ্বায় চোখ নিচু করে জবাব দিল, ‘আমিও তোমাকে অনেক মিস করেছি’।
লোকটি উঠে দাঁড়িয়ে তার বড় ছেলের (সম্ভভত দশ বছর বয়স) চোখের দিকে তাকাল। সে ছেলেটির মুখখানি দু’হাতে ধরে বলল, ‘তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ, তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা’- একথা বলে সে তার ছেলেকে আলিঙ্গন করল।
যখন এসব ঘটছিল, একটি মেয়েশিশু (এক-দেড় বছর বয়স হবে) তার মায়ের কোল থেকে কেবল হাত পা ঝাপ্টাচ্ছিল, তার ছোট্ট চোখ দু’টি শুরু থেকে একবারের জন্যেও বাবার দিক থেকে সরায়নি। লোকটি ‘ছোট্ট মামণি’ বলে মেয়েকে কোলে টেনে নিল আর তার পুরো মুখে চুমু খেল। তারপর যখন মেয়েটিকে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখল, মেয়েটি বাবার বুকে মাথা দিয়ে নিশ্চুপ, শান্ত ভঙ্গিতে শুয়ে থাকল বাবার বুকে।
একমূহুর্ত পরে, মেয়েকে বড় ছেলের কাছে দিয়ে লোকটি বলল, ‘আমি সবচাইতে ভালোটা জমিয়ে রেখেছি শেষের জন্যে’ এবং তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল, অনেকক্ষণ ধরে রাখল। তারপর তার চোখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি’। তারা দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে থাকল অনেকক্ষণ, মুগ্ধ দৃষ্টিতে। হাত দু’টি ধরে।
আমার একটুক্ষণের জন্যে মনে হয়েছিল, তারা নতুন বিবাহিত, কিন্তু তাদের বড় ছেলের বয়স বলে দেয় যে তা অসম্ভব। একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আমি অনুভব করলাম, আমি তন্ময় হয়ে তাদের এ নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বিনিময় দেখছিলাম বেশ খানিকটা সময় ধরে। অন্যের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয় এভাবে কাছ থেকে দেখায় আমি একটু বিব্রতবোধ করলাম, কিন্তু অবাক হলাম নিজের কথা শুনেই, আমি নিজের অজান্তেই বললাম, ‘ওয়াও! আপনারা কতদিন ধরে বিবাহিত?’
লোকটি তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়েই বলল, ‘আমরা একসাথে আছি চৌদ্দ বছর, আর বিয়ের বার বছর হল’।
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাহলে আপনি কতদিন পর ফিরলেন?’
লোকটি এবার আমার দিকে তাকিয়ে হেসে জবাব দিল, ‘দীর্ঘ দুই দিন!’
দুই দিন?! আমার বিষ্ময়ের সীমা থাকলনা। যেভাবে লোকটি এসে তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরল, কয়েক মাস না হোক, অন্তত কয়েক সপ্তাহ পর তাদের দেখা হচ্ছে বলেই আমি ধারণা করেছিলাম।
আমার অভিব্যক্তি লুকোতে চেয়েও পারছিলাম না। বন্ধুকে খোঁজার জন্য এখান থেকে বিদায় নেয়ার সময় বললাম, ‘আশা করছি, আমার বিয়ের বার বছর পরেও আমাদের ভালোবাসা এমন গভীর থাকবে’।
লোকটির হাসি মুখ হঠাত করেই গম্ভীর হয়ে গেল। সোজা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বন্ধু, আশা করো না, স্বিদ্ধান্ত নাও’। তার সে কথা আমার জীবনের ভাবনাকে বদলে দিয়েছিল। তারপর হেসে আমার সাথে হ্যান্ডশেক করে চলে যাওয়ার সময় বলল, ‘আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন’
**গল্পটি সংগৃহীত, পড়ে ভালো লাগায় অনুবাদ করার চেষ্টা করলাম।