somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আশা করো না, স্বিদ্ধান্ত নাও

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এক বন্ধুকে নিয়ে আসার জন্য স্থানীয় বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলাম। সেখানে এমন এক অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম, যা কেবল লোকমুখেই শোনা যায়। জীবনকে বদলে দেয়, এমন ঘটনাটি ঘটল আমার ঠিক দু’হাত দূরেই।

যাত্রীরা যখন বের হয়ে আসছিল, আমি যথাসম্ভব লম্বা হয়ে ভীড়ের মধ্যে আমার বন্ধুকে খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। দেখলাম, এক লোক দু’হাতে দুটি ব্যাগ নিয়ে আমার দিকেই আসছে। আমার ঠিক পাশে এসেই সে তার পরিবারের সাথে মিলিত হলো।

প্রথমে সে তার সবচাইতে ছোট ছেলের (সম্ভভত ছয় বছর বয়স) কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল, অনেকক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখার পর তাকে ছেড়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমাকে আবার দেখে আমার খুব ভালো লাগছে, তোমাকে আমি অনেক মিস করেছি’। ছেলেটি লজ্জ্বায় চোখ নিচু করে জবাব দিল, ‘আমিও তোমাকে অনেক মিস করেছি’।

লোকটি উঠে দাঁড়িয়ে তার বড় ছেলের (সম্ভভত দশ বছর বয়স) চোখের দিকে তাকাল। সে ছেলেটির মুখখানি দু’হাতে ধরে বলল, ‘তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ, তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা’- একথা বলে সে তার ছেলেকে আলিঙ্গন করল।

যখন এসব ঘটছিল, একটি মেয়েশিশু (এক-দেড় বছর বয়স হবে) তার মায়ের কোল থেকে কেবল হাত পা ঝাপ্টাচ্ছিল, তার ছোট্ট চোখ দু’টি শুরু থেকে একবারের জন্যেও বাবার দিক থেকে সরায়নি। লোকটি ‘ছোট্ট মামণি’ বলে মেয়েকে কোলে টেনে নিল আর তার পুরো মুখে চুমু খেল। তারপর যখন মেয়েটিকে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখল, মেয়েটি বাবার বুকে মাথা দিয়ে নিশ্চুপ, শান্ত ভঙ্গিতে শুয়ে থাকল বাবার বুকে।

একমূহুর্ত পরে, মেয়েকে বড় ছেলের কাছে দিয়ে লোকটি বলল, ‘আমি সবচাইতে ভালোটা জমিয়ে রেখেছি শেষের জন্যে’ এবং তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল, অনেকক্ষণ ধরে রাখল। তারপর তার চোখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি’। তারা দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে থাকল অনেকক্ষণ, মুগ্ধ দৃষ্টিতে। হাত দু’টি ধরে।

আমার একটুক্ষণের জন্যে মনে হয়েছিল, তারা নতুন বিবাহিত, কিন্তু তাদের বড় ছেলের বয়স বলে দেয় যে তা অসম্ভব। একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আমি অনুভব করলাম, আমি তন্ময় হয়ে তাদের এ নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বিনিময় দেখছিলাম বেশ খানিকটা সময় ধরে। অন্যের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয় এভাবে কাছ থেকে দেখায় আমি একটু বিব্রতবোধ করলাম, কিন্তু অবাক হলাম নিজের কথা শুনেই, আমি নিজের অজান্তেই বললাম, ‘ওয়াও! আপনারা কতদিন ধরে বিবাহিত?’

লোকটি তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়েই বলল, ‘আমরা একসাথে আছি চৌদ্দ বছর, আর বিয়ের বার বছর হল’।

আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাহলে আপনি কতদিন পর ফিরলেন?’

লোকটি এবার আমার দিকে তাকিয়ে হেসে জবাব দিল, ‘দীর্ঘ দুই দিন!’

দুই দিন?! আমার বিষ্ময়ের সীমা থাকলনা। যেভাবে লোকটি এসে তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে জড়িয়ে ধরল, কয়েক মাস না হোক, অন্তত কয়েক সপ্তাহ পর তাদের দেখা হচ্ছে বলেই আমি ধারণা করেছিলাম।

আমার অভিব্যক্তি লুকোতে চেয়েও পারছিলাম না। বন্ধুকে খোঁজার জন্য এখান থেকে বিদায় নেয়ার সময় বললাম, ‘আশা করছি, আমার বিয়ের বার বছর পরেও আমাদের ভালোবাসা এমন গভীর থাকবে’।

লোকটির হাসি মুখ হঠাত করেই গম্ভীর হয়ে গেল। সোজা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বন্ধু, আশা করো না, স্বিদ্ধান্ত নাও’। তার সে কথা আমার জীবনের ভাবনাকে বদলে দিয়েছিল। তারপর হেসে আমার সাথে হ্যান্ডশেক করে চলে যাওয়ার সময় বলল, ‘আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন’


**গল্পটি সংগৃহীত, পড়ে ভালো লাগায় অনুবাদ করার চেষ্টা করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৩২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×