একদিন, এক লোক শীতের সন্ধ্যার মৃদু আলোয় দেখল, এক বৃদ্ধা রাস্তার পাশে আটকা পড়ে আছে। সে বুঝতে পারছিল, বৃদ্ধার সাহায্য দরকার। লোকটি তার গাড়ি থামিয়ে বৃদ্ধার দিকে এগিয়ে গেল।
লোকটির মুখে হাসি থাকা সত্ত্বেও, বৃদ্ধা ভয় পাচ্ছিল। গত এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে কেউ সাহায্যের জন্য থামেনি। লোকটি কি তার ক্ষতি করবে? খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছিলনা তাকে দেখে। দরিদ্র আর ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছিল। লোকটি বুঝতে পারছিল, বৃদ্ধা শীতের মধ্যে ভয়ে কুকড়ে আছে। এই নির্জন শীতের রাতে ভয় পাওয়ারই কথা। লোকটি বৃদ্ধাকে বলল, ‘আমি আপনাকে সাহায্য করতে এসেছি, আপনি বরং গাড়িতে বসে অপেক্ষা করুন, ভিতরে ঠান্ডা কম। আর হ্যাঁ, আমি ব্রায়ান’।
যদিও শুধু গাড়ির চাকা পাংচার হওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি, কিন্তু বৃদ্ধাকে এখানে আটকে রাখার জন্য তাই যথেষ্ট ছিল। লোকটি খুব দ্রুতই চাকা বদলে ফেলল। ততক্ষণে তার হাত আর জামা কাপড় অনেক ময়লা হয়ে একাকার।
যখন সে চাকার বল্টুগুলো টাইট দিচ্ছিল, বৃদ্ধা জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে তার সাথে কথা শুরু করল। বৃদ্ধা বলল, সে অনেক দূরের এলাকা থেকে অন্য এক জায়গায় যাচ্ছে, আর যাওয়ার পথেই এখানে এই বিপত্তি।
কাজ শেষ হয়ে গেলে, বৃদ্ধা লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, তাকে কত পারশ্রমিক দিতে হবে। যা চাইবে বৃদ্ধা তাই দিতে প্রস্তুত। সে যদি সাহায্য না করত, তাহলে এই শীতের রাতে কত কী ভোগান্তিই না হতো। লোকটি তার পারশ্রমিকের ব্যাপারে দ্বিতীয়বার ভাবল না। এটা তার চাকরি ছিল না। এটা নিতান্তই একটু সাহায্য করা, আর সৃষ্টিকর্তা জানেন, সে আগে এমন কতজনের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছে।
সে বৃদ্ধাকে বলল, যদি একান্তই পারশ্রমিক দিতে চাও, তবে এরপর যখন কেউ বিপদে পড়ে তখন তার প্রয়োজনে সাহায্য করো আর ভেবো যে আমাকেই সাহায্য করছ।
লোকটি বৃদ্ধার চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করল। শীতের এই দিনটি তার জন্য একটু হতাশার ছিল, কিন্তু দিন শেষে কিছু করতে পেরে ভালো বোধ করল, আর চাঁদের আলোয় বাড়ির পথ ধরল।
কিছুদূর পর, বৃদ্ধা একটি কফিশপ দেখে থামল। বাকি পথ যাওয়ার আগে সে কিছু খেয়ে শরীরটা একটু গরম করে নিতে চাইল। দোকনটি ছিল খুব ছোট, অনেকটা ডিঙ্গি নৌকার মত। বাইরে দুটো গ্যাস পাম্প। পুরো দৃশ্যই তার কাছে অপরিচিত ঠেকল। দোকানে ঢুকতেই ওয়েট্রেস একটি পরিস্কার তোয়ালে নিয়ে এসে মৃদু হেসে তার ভিজে চুল মুছে দিল। সারাদিন খাটাখাটনি করেও তার মুখের হাসি মুছে যায়নি। বৃদ্ধা দেখল, মেয়েটি কমপক্ষে আট মাসের গর্ভবতী, কিন্তু তার শারীরিক স্বীমাবদ্ধতা তার সেবায়, আন্তরিকতায় এতটুকু বিঘ্ন ঘটাচ্ছেনা। বৃদ্ধা ভেবে অবাক হলো, কিভাবে একজন মানুষ অপরিচিতের জন্য এভাবে করতে পারে। তার ব্রায়ানের কথা মনে পড়ল।
বৃদ্ধার খাওয়া শেষ হলে, সে একশত ডলারের একটি নোট দিল বিল পরিশোধ করার জন্য। ওয়েট্রেস বাকি টাকা নিয়ে আসার জন্য ক্যাশে গেল, ফিরে এসে দেখে বৃদ্ধা সেখানে নেই। সে ভাবল, কোথায় যেতে পারে বৃদ্ধা? তখনি তার চোখে পড়ল, টেবিলে ন্যাপকিনের মধ্যে কিছু লিখা।
বৃদ্ধার লিখা পড়ে তার চোখে পানি চলে আসল, বৃদ্ধা লিখেছে, ‘তুমি আমার কাছে কিছুই পাওনা। আমিও বিপদে ছিলাম। একজন আমাকে সাহায্য করেছে, যেভাবে আমি এখন তোমাকে সাহায্য করছি। যদি তুমি আমাকে সত্যিই ফেরত দিতে চাও, তবে ভালোবাসার এই শিকলটা তোমাতেই শেষ হতে দিওনা’। ন্যাপকিনের নিচে সে একশত ডলারের আরো চারটি নোট দেখতে পেল।
টেবিল পরিস্কার করা বাকি ছিল, লবনের বাটিতে লবন দেওয়া বাকি ছিল, আরো লোকজনকে খাবার সার্ভ করা বাকি ছিল, কিন্তু মেয়েটি সব কাজ রেখে আজ একটু আগেই বাড়িতে চলে গেল। তার কেবলি মনে পড়ছিল টাকাগুলোর কথা আর বৃদ্ধার লিখাগুলো। ভেবে অবাক হলো, বৃদ্ধা কিভাবে জানল, যে তার আর তার স্বামীর জন্য এই কটা টাকা কী ভীষণ দরকার ছিল! সে জানে, তার স্বামী কতটা উদ্বিগ্ন ছিল পরের মাসে তাদের অনাগত সন্তানের আগমণের কথা চিন্তা করে। সে স্বামীর পাশে শুয়ে আলতো করে চুমু খেল। আর কানে কানে ফিসফিস করে বলল, ‘সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে দেখো, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি ব্রায়ান’।
(সংগৃহীত এবং অনূদিত)