এক গ্রামে রহিম আর করিম দুই ভাই পাশাপাশি বাড়িতে থাকত। তাদের দুই জনেরই ছিল বিশাল দুই খামার। দুই ভাইয়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকায় তারা খামারের কাজে তাদের যন্ত্রপাতি, শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক সবকিছুই মিলেমিশে ব্যবহার করত কোন হিসাব-নিকাশ ছাড়া।
দীর্ঘ চল্লিশ বছর এভাবে চলার পর হঠাত করেই লাগল দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া। একটি ছোট্ট ভূল বুঝাবুঝি থেকে প্রথমে কথা কাটাকাটি, গালাগালি এবং পরে যথারীতি তাদের মধ্যে কথা, যোগাযোগ বন্ধ। মিলমিশের সম্পর্ক শেষ।
একদিন সকালে, রহিমের দরজায় নক। রহিম দরজা খুলে দেখল, এক কাঠমিস্ত্রি দাঁড়িয়ে, যে কিনা কাজ খুজতে এসেছে। বলল, ‘আমার কাজের দরকার, আপনার খুটিনাটি কাজ থাকলে আমি করে দিতে পারি’।
রহিম বলল, ‘হ্যা, তোমাকে আমি কাজ দিতে পারি। ঐ যে পাশের খালটা দেখছ, ওটা আমার ভাইয়ের। গত সপ্তায় আমার সাথে তার ঝগড়া হওয়ার পর সে লোক লাগিয়ে আমাদের দু’জনের খামারের মাঝে খাল কেটে দিয়েছে। আমার সাথে ক্রোধ দেখিয়েই হয়ত ও এটা করেছে, কিন্তু আমিও কম যাইনা। ঐ যে দেখছ গোলাঘরের পাশে তক্তার স্তুপ, ওগুলো আমার আর দরকার নেই। খালের এপাশে একটা উঁচু বেড়া বানিয়ে দাও ওগুলো দিয়ে যাতে ওর কোন কিছু আমাকে আর দেখতে না হয়’।
মিস্ত্রি বলল, ‘আমি বুঝতে পারছি আপনি কী চাচ্ছেন, আশা করি আমার কাজ আপনার পছন্দই হবে’।
রহিম মিস্ত্রিকে সব জিনিসপত্র বুঝিয়ে দিয়ে তার মাল সাপ্লাইয়ের কাজে বাইরে চলে গেল। মিস্ত্রি সারাদিন ব্যস্ত থাকল মাপামাপি, প্যারেক মারা এসব নিয়ে।
বিকেলে রহিম যখন মাল সাপ্লাই শেষে ফিরে আসল, ততক্ষণে মিস্ত্রির কাজ শেষ। কিন্তু কাজ দেখে তো তার চক্ষু চড়কগাছ! বেড়া বানানোর বদলে মিস্ত্রি বানালো একটা কাঠের সেতু, খালের এপার-ওপার। চমৎকার দৃষ্টিনন্দন সেতুর দু’পাশে রেলিং দেওয়া। সেতুর ওপাশে দেখল, তার ছোটভাই করিম হাত নাড়াতে নাড়াতে আসছে। দুই ভাই সেতুর দুই প্রান্ত দিয়ে উঠে মাঝখানে এসে দু’জনের হাত ধরে মিলে গেল।
মিস্ত্রি ততক্ষণে তার জিনিসপত্র ব্যাগে নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। রহিম তাড়াতাড়ি এসে বলল, ‘তুমি থাকো, যেওনা। আমার আরো অনেক কাজ আছে। কয়েকদিন থেকে ওগুলো করে দিয়ে যাও’।
মিস্ত্রি বলল, ‘থাকতে পারলে আমার ভালোই লাগত, কিন্তু আমার এখনো অনেক সেতু বানানো বাকি’।
(সংগৃহীত এবং অনূদিত)
শিক্ষাঃ আমাদের সমাজে বেড়া/দেয়াল বানানোর মিস্ত্রি অনেক, এর কথা তার কাছে আবার তার কথা রঙ মাখিয়ে এর কাছে লাগাই, যেটা খুবই সহজ। কিন্তু সেতু বানানোর মিস্ত্রির বড়ই অভাব। আসুন, দেয়াল না বানিয়ে বেশি বেশি সেতু বানাই।