একদা এক মেয়ে তার বাবার কাছে অভিযোগ করল, যে সে তার জীবন নিয়ে অতিষ্ঠ এবং সে জানেনা কী করবে। জীবনের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করতে করতে সে ক্লান্ত। কোন একটা সমস্যা থেকে রেহাই পেতে না পেতেই দেখা দেয় নতুন নতুন সমস্যা।
তার বাবা, যে কিনা একজন বাবুর্চি, তাকে রান্নাঘরে নিয়ে গেল। তারপর তিনটা ভিন্ন ভিন্ন পাতিলে পানি নিয়ে গরম দিল। পানি ফুটতে শুরু করার পর সে এক পাতিলে একটি আলু, আরেকটিতে একটি ডিম আর অন্য পাতিলে কয়েকটি কফি বীজের গুড়ো ছেড়ে দিল।
তারপর সে সেগুলোকে স্বিদ্ধ হতে দিল, তার মেয়ের সাথে কোন কথা না বলেই। মেয়েতি ততক্ষণে বিরক্তি আর অধৈর্য্য নিয়ে দেখছে তার বাবা কী করে।
বিশ মিনিট পর সে চুলা বন্ধ করে দিল। পাতিল থেকে আলু আর ডিম তুলে প্লেটে নিল আর কফিটা নিল একটা কাপে। তারপর মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি কী দেখতে পাচ্ছ?’
‘আলু, ডিম আর কফি’ সে উত্তর দিল।
‘ভালো করে তাকিয়ে দেখো’ সে বলল, ‘আলুটা ধরে দেখো’। মেয়েটি আলু ধরে দেখল যে সেটা নরম হয়ে গেছে। তারপর সে মেয়েকে বলল, ডিমটা নিয়ে ভেঙ্গে দেখতে। খোসা ছাড়িয়ে মেয়েটি দেখল, একটি সুন্দর স্বিদ্ধ ডিম। তারপর সে মেয়েকে বলল এক চুমুক কফি খেয়ে দেখতে। চুমুক দিয়ে কফির মিস্টি গন্ধে মেয়েটির মুখে হাসি ফুটল।
‘কিন্তু এগুলোর মানে কী?’ মেয়েটি জিজ্ঞেস করল।
সে তখন মেয়ের কাছে ব্যাখ্যা করল। আলু, ডিম এবং কফি একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেল – তাদের প্রত্যেককেই গরম পানিতে স্বিদ্ধ করা হলো। কিন্তু প্রত্যেকেই প্রতিক্রিয়া দেখাল ভিন্ন ভিন্ন ভাবে।
আলুটি ছিল শক্ত, অনমনীয়। কিন্তু স্বিদ্ধ করার পর হয়ে গেল নরম, নমনীয়।
ডিমটি ছিল ভঙ্গুর, একটি পাতলা শক্ত আবরন ভিতরের তরলকে ঢেকে রাখছিল গরম পানিতে দেওয়ার আগ পর্যন্ত। স্বিদ্ধ করার পর সেটা শক্ত হয়ে গেল।
কফি বীজের গুড়ো ছিল অন্যদের চাইতে আলাদা। গরম পানিতে দেওয়ার পর সেটা পানিকেই বদলে দিল, আর তৈরী করল নতুন কিছু।
‘এর মধ্যে কোনটা তুমি?’ সে তার মেয়েকে জিজ্ঞেস করল। ‘জীবনে প্রতিকূলতা আসলে তুমি কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাও? আলু, ডিম নাকি কফির মত?’
শিক্ষাঃ জীবনে চলার পথে আমাদের চারপাশে অনেক কিছু ঘটে, আমার সাথে অনেক কিছু ঘটে। কিন্তু সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের ভিতর যা ঘটে সেটা।
(সংগৃহীত এবং অনূদিত, হয়ত অনেকেরই পড়া, তারপরও ভালো লাগা থেকে শেয়ার করা)
ছবিঃ ইন্টেরনেট