এক লোকের দুটো কলসি ছিল, যেগুলো দিয়ে প্রতিদিন সে তার মনিবের জন্য কূপ থেকে পানি নিয়ে আসত। দুটো কলসির মধ্য একটি পুরোপুরি ভালো থাকলেও আরেকটা ছিল ফুটো। যার ফলে ভালো কলসি দিয়ে কলসিভর্তি পানি আনতে পারলেও ফুটোর কারনে বাকীটা দিয়ে মাত্র অর্ধেক পানি আনতে পারত।
পুরো দুই বছর ধরে লোকটি তার মনিবের জন্য দুই কলসি দিয়ে দেড় কলসি পানি বয়ে আনল। ভালো কলসিটা তাকে নিয়ে সবসময় গর্ববোধ করত। অন্যদিকে বাকীটি তার ফুটোর জন্য সবসময় লজ্জ্বিত থাকত,। দুঃখ পেত এই ভেবে যে, সে কেবল তার সামর্থের অর্ধেক করতে পারছে।
একদিন ফুটো-কলসিটি তার মালিককে বলল, ‘আমি আমাকে নিয়ে লজ্জ্বিত। আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি’।
‘কেন?’ মালিক জানতে চাইল। ‘তুমি কিসের জন্য লজ্জ্বিত?’
‘আমি গত দুই বছর ধরে কেবল অর্ধেক পানি বহন করতে পারছি, ফুটোর কারনে পুরো পথ ধরে পানি পড়তে থাকে কূপের গোড়া থেকে মনিবের বাড়ি পর্যন্ত। আমার খুঁতের জন্য আপনাকে পরিশ্রমের বেশ খানিকটা বিফলে যায়’ কলসিটি বলল।
ফুটো-কলসির কথা শুনে মালিকের খারাপ লাগল। সে বলল, ‘তুমি কি কখনো খেয়াল করেছ, আমার মবিবের বাড়ির পথ জুড়ে ফুলের গাছগুলো?’ কলসিটি দেখেছে, পথের ধারের ফুলগুলো সূর্যের আলোতে কেমন উজ্জ্বল হয়ে উঠত, তার ভালো লাগত দেখে। কিন্তু পথ শেষে আবার মন খারাপ হয়ে যেত তার অর্ধেক পানি দেখে।
লোকটি ফুটো-কলসিকে বলল, ‘তুমি কি দেখেছ ফুলগুলো কেবল পথের একপাশেই আছে যে পাশে আমি তোমাকে বহন করতাম, কিন্তু বাকি পাশে নেই? সেটা কেবল তোমার খুঁতের জন্যেই সম্ভব হয়েছে, যেটা আমার কাছে ছিল সুবিধা। তোমার পাশটাতেই আমি ফুলের বীজ লাগিয়েছিলাম, প্রতিদিন ফেরার পথে তুমি তাতে পানি দিতে। গত দু’বছর ধরে আমি সেসব সুন্দর ফুল নিয়ে আমার মনিবের টেবিল সাজাতাম। তুমি যেমন আছ, তেমনটা না থাকলে মনিবের বাড়ি এমন সুন্দর হতো না।‘
শিক্ষাঃ আমাদের প্রত্যেকেরই খুঁত আছে, একেকজনের একেকরকম। কেউই নিখুঁত নই। আমরা সবাই ফুটো-কলসি। অনেক সময় মনে হতে পারে, আমার খুঁতের জন্য আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা, আমি অমুক কিংবা তমুক কাজের অযোগ্য। কিন্তু সেই খুঁতের মধ্যেই হয়ত লুকিয়ে থাকে বড় কোন আশির্বাদ।
(সংগৃহীত এবং অনূদিত)