বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। বিপদে পড়লে আগে বন্ধুদের কথাই মনে পড়বে সাহায্যের জন্য। কিন্তু অনেকদিন ধরেই তো বন্ধুর সাথে যোগাযোগ নেই। তাহলে হঠাত করে বন্ধুকে সাহায্যের জন্য বলি কী করে?!
দু’টি প্রাসঙ্গিক ঘটনা দিয়ে শুরু করি।
ফারুক (ছদ্মনাম) আমার ইউনিভার্সিটির বন্ধু, একসময় সারাটা দিন একসাথেই কাটাতাম। চাকুরীতে ঢুকে দু’জন চাকরি আর সংসার নিয়ে ব্যস্ত, যোগাযোগ হয়না অনেকদিন হলো, অন্তত বছরখানেক তো হবেই। হঠাত সেদিন রাত দুইটার সময় ফারুকের মেসেজ। ঘুম গেল ভেঙ্গে। মেসেজের বিষয়বস্তু এরকম – আমার এক নিকটাত্নীয় আছেন পুলিশে, ফারুকের এক কলিগের মোবাইল হারানো গেছে, আমার নিকটাত্নীয় আগের পদেই বহাল আছেন কিনা এবং মোবাইল উদ্ধারে সাহায্য করতে পারবেন কিনা। দেখে হাসব না কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একে গভীর রাতে ঘুম ভাঙ্গানো, তার উপর এতদিন পর যোগাযোগ করেই এহেন আবদার!
তারও কিছুদিন আগে, নতুন এক দেশে গিয়েছি কেবল মাস্টার্স করতে। প্রথমবার দেশের বাইরে যাওয়া। জানতে পারলাম, শহরের আরেক পাশেই থাকেন আমাদের বিভাগের এক বড় ভাই। যোগাযোগ করে একদিন দেখা করে আসলাম। কিন্তু বড় ভাইয়ের কাছ থেকে আর কোন সাড়াশব্দ নেই। চলে গেল মাস ছয়েক। হঠাত একদিন সে বড় ভাইয়ের মেসেজ। দু’লাইনের মেসেজ ‘আমার হাজার বিশেক টাকা লাগবে আজকের মধ্য, ধার দিতে পারবা?’ হয়ত পারতাম দিতে, কিন্তু বলে দিলাম নাই ভাই, স্যরি।
এরকম আরো আছে ছোটখাটো ঘটনা। আমাদের সবার সাথেই হয়ত কমবেশি ঘটে এমনটা। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি জীবনে অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব হয়। পেশাগত জীবনে গেলে সেখানেও হয়ত হয় কিছু বন্ধু নতুন করে। পেশাগত ব্যস্ততা, সংসার সব মিলিয়ে হয়ত পুরোনো সব বন্ধুর সাথে, পরিচিত সবার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা বেশিরভাগের পক্ষেই সম্ভব হয়ে উঠেনা। তার মানে এই না যে সবাইকে ভূলে গিয়েছি, কিংবা অবহেলা করছি, কিংবা পুরোনো সবাই পর হয়ে গেছে।
প্রাত্যাহিক জীবনে আমাদের নানান ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। কখনো কখনো হয়ত হঠাত মনে হয়, এই সমস্যায় অমুক বন্ধু সাহায্য করতে পারবে (পুলিশ, ডাক্তারদের সাধারনত বেশি কাজে লাগে এক্ষেত্রে )। অর্থাৎ, বিপদে পড়লেই বন্ধুর কথা মনে পড়ে। আর যেহেতু একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু/পরিচিতজন, আবদার করতেই পারি। কিন্তু সেক্ষেত্রেও মানা উচিত কিছু সাধারণ সৌজন্যবোধ।
যেহেতু অনেকদিন পর যোগাযোগ হচ্ছে, প্রথমেই জানা দরকার সে কেমন আছে, কি করছে বা তার পেশাগত ব্যস্ততা/দায়িত্ব কেমন যাচ্ছে। কথা বলে বোঝার চেষ্টা করুন তিনি এখন সাহায্য করার মত অবস্থায় আছেন কিনা। যদি খুব কাছের কেউ হয়ে থাকে, আর এতদিন পর কথা বলেও গলায় আগের সে উষ্ণতা টের পান, তাহলে হয়ত একথা-ওকথার পর পাড়তে পারেন আসল কথা। কিন্তু যদি কথা শুনে বোঝেন, সুরটা আর আগের মত নেই, তাহলে খুব ইমার্জেন্সী না হলে প্রথম দিনেই আপনার আবদার পেশ না করে কুশলাদী বিনিময় করেই রেখে দিন। আরো দু-একদিন যোগাযোগ করে, কথা বলে, তারপর সময় বুঝে পাড়তে পারেন সমস্যার কথা। তাতে করে, বন্ধুর কাছ থেকে সাহায্য পাবার সম্ভাবনা নিশ্চিতভাবেই বাড়বে।
খেয়াল রাখতে হবে, সমস্যা মেটানোটা বন্ধুর কাছে যেন উটকো ঝামেলা, অনুরোধে ঢেকি গেলা কিংবা তার ব্যাক্তিগত/পারিবারিক/পেশাগত জীবনে বিরক্তির কারণ না হয়।