শুরুতেই কিছু কথা বলে নেয়া প্রয়োজন।
একঃ অনেকেই মেয়েদের পোশাককে দায়ী করেন ধর্ষণের কারণ হিসেবে, যেটা পুরোই অযৌক্তিক। না হলে ৫-৭ বছরের বাচ্চা মেয়ে শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা নয়।
দুইঃ ধর্ষণের পরেই কেউ কেউ পুরুষ জাতিকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা শুরু করেন, সব পুরুষকেই অনিরাপদ হিসেবে দেখেন, সেটাও অযৌক্তিক। যে ধর্ষক, সেও কোন মায়ের ছেলে, কোন বোনের ভাই। সেক্ষেত্রে, তাকে সঠিক যৌন শিক্ষা, মূল্যবোধের শিক্ষা না দেয়ার দায় আপনার উপরও বর্তায়।
তিনঃ কে দায়ী, আর কার দোষ বেশি – এর কোনটাই ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধের স্বীকৃতি দেয়না। সমাজ থেকে ধর্ষণ বন্ধ করার জন্য ধর্ষক-নামক কীটদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরী।
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে।
ধরুণ, আগারগাঁও থেকে শ্যামলী যাওয়ার রাস্তায় খুব ঘনঘন ছিনতাই হয়। কারণ, এরাস্তায় মানুষের যাতায়াত একটু কম। আপনি একা রিকশায় করে যাচ্ছেন। হয়ত একটু অন্যমনস্ক, কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখবেন আপনার হাতের ব্যাগটি নেই। রিকশার পাশ দিয়ে দ্রুতগামী মোটরসাইকেল থেকে টান দিয়ে নিয়ে গেল চোখের পলকে। হয়ত আপনার দামী ল্যাপ্টপ ছিল ব্যাগে, তা তো গেলই, সাথে খুব দরকারী সব ফাইলপত্রগুলোও। যদি শুধু এটুকু যায়, তবে আপনি সৌভাগ্যবান। যদি আপনার হাতে প্যাঁচানো থাকত সখের ব্যাগখানি, তবে হয়ত ব্যাগের সাথে আপনার জান নিয়েও লাগত টানাটানি। এমন ঘটনা হরহামেশাই শোনা যায়, ‘ছিনতাইকারী রিকশা থেকে টান দেওয়ার ফলে রাস্তায় পড়ে হাত ভেঙ্গেছে, কিংবা মাথা ফেটেছে’ – আরো কত কী।
ঘটনা মুখে মুখে, কিংবা পত্রিকা মারফত খুব দ্রুতই অনেকেই জেনে যায়। প্রচার হয়ে যায়, অমুক রাস্তায় ছিনতাইকারীর উপদ্রব বেশি। প্রতিকার হিসেবে হয়ত আমরা ঐ রাস্তায় চলাচল করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকি, চারদিকে চোখ-কান খোলা রাখি। ঐ রাস্তায় না গিয়ে অন্য রাস্তায় যাই, কিংবা একান্তই দরকার হলে হয়ত সাথে একজন বন্ধুকে নিয়ে যাই। কেউ কেউ হয়ত বলি, দামী জিনিস/ ক্যাশ টাকা নিয়ে রাস্তায় চলাচল করা ঠিক না। কিংবা সাথে থাকলেও সামলে রাখা উচিত।
এমন প্রশ্ন কখনোই করা হয়না – ‘ আমার ল্যাপটপ আমি যেভাবে ইচ্ছে এভাবে রাখব/ কিংবা আমার টাকা আমি অর্ধেক পকেটে আর বাকী অর্ধেক বাইরে রাখব, তাতে কার কী? ছিনতাইকারী কেন সেটা ধরবে?’ কারণ, এ প্রশ্ন অমূলক। ছিনতাই বন্ধের দায়িত্ব পুলিশের, শাস্তির ব্যাবস্থা করবে পুলিশ/প্রসাশন। মূল্যবোধ শিক্ষা দিবে পরিবার, সমাজ, স্কুল-কলেজ। আর আপনার আমার দায়িত্ব, সতর্কতামূলক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা। নিজের দামী জিনিস সামলে রেখে, সাবধাণে চলাচল করা।
ঠিক তেমনি, যারা ধর্ষক, তাদের মূল্যবোধের শিক্ষা দিবে পরিবার, সমাজ। নিয়ন্ত্রনের ব্যাবস্থা করবে পুলিশ। বোনদের বলছি, জীবন আপনার, সম্মান আপনার। নিজের মূল্যবান জীবন, সম্মান রক্ষা করে চলার জন্য যেসব সতর্কতামূলক ব্যাবস্থা নেয়া দরকার, সেগুলো নিশ্চিত করার দায়িত্বও আপনার। যেমন ধরুণ, আপনার প্রেমিকের বিয়ে করার মিথ্যে প্রলোভনে পড়ে তার সাথে নির্জনে কোথাও যাবেন কি যাবেন না, সেটা সতর্কতার সাথেই স্বিদ্ধান্ত নিতে হবে। ধর্ষককে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে, লোকজন রাস্তায় মিছিল করবে, ফেসবুকে ঝড় উঠবে আপনার প্রতি সহমর্মীতা জানিয়ে, তাতে করে আপনার যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল, সেটা কি পূরণ হবে?
সবাই সচেতন হলে, ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ হয়তো রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাবেনা, তবে অনেকাংশেই কমে আসবে নিশ্চিত।