বিশ্বখ্যাত কবি এলেন গিনসবার্গ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পশ্চিমবংগে এসেছিলেন। উঠেছিলেন সুনীল গংগীপাধায়ের বাড়িতে। তিনি গিয়েছিলেন যশোর রোড ধরে অধিকৃত বাংলাদেশের সীমান্তে, দেখেছিলেন বাপদাদার ভিটে একবস্ত্রে ফেলে আসা একটুকরো নিরাপদ ঠাঁইয়ের সন্ধানে হত্যভাগ্য আবালবৃদ্ধবনিতার সীমাহীন যাতনা। সেই অবর্ননীয় দৃশ্যাবলী নিয়েই তার কালজয়ী কবিতা September in Jessore Road লেখা।
প্রাচীন এই রোডটি হল যশোর শহরে শুরু হয়ে বেলাপোল হয়ে কোলকাতা পর্যন্ত মহাসড়কটি। বিজয়ের পর থেকেই এই মহাসড়কের ওপর চাপ বাড়তে থাকে, দুদেশের মধ্যে বানিজ্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার জন্যে। সড়কটির প্রস্থ দ্বিগুণ করা অতি প্রয়োজনীয় হয়ে পরে।
পশ্চিমবংগ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় মহাসড়কটির দু'পাশের প্রাচীন বৃক্ষগুলো কেটে রাস্তা সম্প্রসারণ করার।
পশ্চিম বংগে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। জনরোষকে সম্মান জানিয়ে পশ্চিমবংগ সরকার তাদের সিদ্ধান্ত পালটে সব গাছগুলো রেখেই মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ সমাধা করে।
যশোর রোডের বাংলাদেশ অংশে রেইনট্রি (স্থানীয় নাম রেন্টি এবং রেন্টিকড়ই) আছে ২,৩১২টি, যেগুলোর বয়স ১৭০ বছর। এই মহাসড়কে যারা ভ্রমণ করেন নি তাদেরকে বোঝাবার মত শব্দ সম্ভার সৃষ্টিকর্তা আমাকে দেননি যে কী অপরূপ, অতীন্দ্রিয়, অপ্রাকৃত, অতিপ্রাকৃত পরিবেশ এই প্রাচীন জীবন্ত পুরাকীর্তিগুলো সৃষ্টি করে রেখেছে সেখানে।
সম্প্রতি একটি সরকারী সিদ্ধান্ত এসেছে যে যশোর রোডের বাংলাদেশের অংশ সম্প্রসারণ করে এটাকে চারলেনের মহাসড়কে উন্নত করা হবে,
এবং,
সে জন্যে একশো সত্তুর বছর বয়সী দুই হাজার তিনশো বারোটি গাছ কেটে ফেলা হবে।
যশোর রোডের ভারতীয় অংশের গাছগুলো সেখানকার আম-জনতাই প্রতিবাদী হয়ে বাঁচিয়েছিল। আমরাও কি পারিনা গাছগুলো বাঁচাতে?
যারা যারা ভাবছেন যশোর রোডের ১৭০ বছর বয়সী ২,৩১২ টি রেইনট্রি আমরা বাঁচাতে এগিয়ে আসবোনা বা পারবোনা, তাদেরকে আমাদের এ ধরনের এবং এর চাইতে কঠিন কয়েকটি অর্জন মনে করিয়ে দিচ্ছিঃ
১। সেনা সমর্থিত সরকারের সময় উপদেষ্টা সফি সামী সাভারের সি আর পি আত্মসাৎ করে ফেলেছিল প্রায়। কলম যোদ্ধাদের নিরলস, নির্ভয়, দুঃসাহসিক প্রচেষ্টায় দি এয়া পি বেঁচে যায়। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল Arif Jebtik.
2. চট্টগ্রামের সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন মেয়র মহিউদ্দিন ঐতিহ্যবাহী, বিপ্লবী প্রীতিলতার স্মৃতিবিজড়িত অপর্ণা চরণ স্কুল গ্রাস করার চেষ্টা করেছিলেন। তখন পুরো দেশ সোচ্চার হয়ে ওঠে। ব্লগগুলো গর্জে
ওঠে। ১০৩ বছর বয়সী বিপ্লবী বিনোদ বিহারী রাস্তায় নেমে আসেন, বক্তব্য দেন।
দেশের বাইরের বাংগালী ব্লগার এবং অনলাইন একটিভিসটরা সোচ্চার হয়ে ওঠে। অস্ট্রেলিয় বাংগালীরা অস্ট্রেলিয় সরকারকে অনুরোধ করে এব্যাপারে কিছু করতে।
কূটনৈতিক চ্যানেলে বাংলাদেশ সরকারের সাথে তারা যোগাযোগ করে অনুরোধ করেস্কুলটিকে বাঁচাতে। তার সাথে যোগ হয় আভ্যন্তরীণ দাবী।
স্কুলটি বেঁচে যায়।
৩। ধর্ষক পরিমল জয়ধরের প্রচন্ড শক্তিশালী যোগাযোগ থাকা স্তত্বেও সে এখন ১৪ শিকের ভেতরে। এটা সম্ভব হয় শুধুমাত্র ভিকিদের একটি ফেইসবুক পেইজ খোলার কারনে, যে পেইজে প্রথম দিনই লাইক পরে ১০ হাজার।
৪। বি আর টি এ একবার ব্যান্ড উইডথের দাম বাড়াতে চেয়েছিল। ফেইসবুক এবং ব্লগে প্রতিবাদের বন্যা বয়ে যাবার কারনে বি আর টি এ তাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি।
যশোরের গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা পর্যায়ের ক্ষমতাশালীরা।
এই ফেইসবুকে আমরা সোচ্চার হলে:
১। জনমত গঠনে সহায়ক হবে তা।
২। কেন্দ্রিয় সরকারের গোচরীভূত হবে তা এবং সরকার এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে।
৩। জনমত গঠন হলে মানুষরা এগিয়ে আসবে, প্রতিবাদ করবে।
৪। যশোর রোডে বৃক্ষগুলোকে ঘিরেও প্রতিবাদ হবে যা পরিবেশবাদী লবিংয়ের পথ প্রশস্ত হবে।
১৭০ বছর বয়সী ২ হাজার ৩শো ১২ টি গাছ আপনি সোচ্চার হলে রক্ষা পেতে পারে। কারো মানসিক বৈকল্য বা সীমাহীন লোভকে যেকোন মূল্যে প্রতিহত করুন!