এই যে আটজন এস এস সি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আত্মহত্যা করলো তাদের ওপর কি পরিমান মানসিক চাপ যে ছিল তা কল্পনা করতেও আমার আতংক হয়।
আপনি কি আপনার মটর গাড়ি দিয়ে হাল চাষ করতে পারবেন?
বা ট্রাক্টর চালিয়ে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া যাবেন?
তা যদি না পারেন , না যান তাইলে আপনি কেন চাইবেন আপনার সন্তান এস এস সিতে খুব ভাল করুক?
প্রত্যেকটি মানুষ অনন্য। একেক জনের প্রতিভা একেক রকমের, একেক ধরনের, একেক মাত্রার। সবাই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয় না। অনেকেই উরুগুয়ের রাজধানী মুখস্ত করে বিসিয়েস হতে পারেনা। কেউ কেউ আইয়ুব বাচ্চু হয়, মুস্তাফা মনোয়ার হয়, কেউ কোনমতে এইচ এস সি পাস করে জেনারেল হয়, কেউ হয় তারেক মাসুদ বা লাকি আখান্দ।
এই এক জীবনেই দেখা।
আপনার সন্তান কারখানায় উৎপাদিত পন্য নয়। সে জীব জগতের সবচেয়ে জটিল সৃষ্টি। তাকে মানুষ জ্ঞান করুন।
পরীক্ষার ফলই সব নয়।
ক্লাস টেনে আমার যে সতীর্থ শৃংখলা জনিত কারনে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ থেকে বহিষ্কৃত হয়ছিল সে এখন বিশালতম চাকুরী করে, অবিশ্বাস্য অংকের বেতনে। যে এস এস সি তে সম্মিলিত মেধা তালিকায় এক থেকে পাঁচের মধ্যে ছিল, সে গত তিরিশ বছর ধরে কিছুই করেনা (ফৌজদারহাটের ১৭ তম ব্যাচ, আমাদের ব্যাচ একটি রেকর্ড করেছিল, ১৯৭৪ এ, যা এখন পর্যন্ত কোন ব্যাচ ভাংতে পারেনি- সম্মিলিত মেধা তালিকায় তারা প্রথম থেকে ৫ ম স্থান অধিকার করেছিল। আমি অবশ্য দ্বিতীয় বিভাগে সবার পেছনে ছিলাম)।
আপনারা মা বাবা। একটু বোঝার চেষ্টা করুন। আজ যে চারজন তাদের ওপর প্রচন্ড মানসিক চাপের কারনে আত্মহননের পথ বেছে নিলো, তাদের কাছে আপনাদের চাহিদা ছিল শুধু অবিবেচকের মত নয়, জালিমের মত। এরা বেঁচে থাকলে অতি জনপ্রিয় শিল্পী হতে পারতো, প্রতিভাবান অভিনেত্রী হতে পারতো, বা হতে পারতো ভিন্সেন্ট ভ্যান গগ কিম্বা টমাস আলভা এডিসন।
কিম্বা আমার মতন কিছুই না হতে পারতো।
আমি কি কোন অসম্ভব কষ্টকর, দূঃখ ভারাক্রান্ত জীবন যাপন করেছি?
প্রশ্নই ওঠেনা। আজ যদি আমাকে বলা হয় -তোমাকে যদি এখন নয় বছর বয়সে ফেরত নেয়া হয় তাইলে তুমি তোমার জীবনে কি কি বদলাবে?
আমি সংগে সংগে বলবো কিচ্ছু না, আমার যাপিত জীবনই আমি আবার যাপন করতে চাই।
বাচ্চাদের আরেকটু স্বাধীনতা দিন। তাদের উৎকর্ষতা কোন ক্ষেত্রে হবে তা বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের অগ্রগণ্যতাকে সম্মান করুন। তা না হলে পিতামাতা হবার কোন যোগ্যতাই নেই আপনাদের।
শুধু শারীরবৃত্তীয় ভাবে আপনা আপনি কিছু মনুষ্য শিশুর জন্ম দিয়েছেন আপনারা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০২০ দুপুর ২:২৯