ভূমিকা
“স্মরণ কর, মারইযাম তনয় ঈসা বলেছিল হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর প্রেরিত রাসূল এবং আমার আগমনের পূর্বে হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী এবং আমি ‘আহমাদ’ নামের এমন একজন রাসূলের সু-সংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন।”
[সূরা আস-সাফ : ৬]
আলহামদুলিল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি তাঁর অনুগ্রহপ্রাপ্ত এক রাসূলের ভবিষ্যদ্বানীর বাস্তবায়ন করেছেন।
তামাম পৃথিবীর বিপন্ন মানবতাকে উদ্ধার করার জন্য, শোষণ জুলুমে নিষ্পোষিত ও অন্যায় অবিচারের আঘাতে জর্জরিত নিরাপত্তাহীন অসহায় মানুষদের বাঁচাতে জাহেল, পাপী, হেদায়েতকামী, অজ্ঞানতার অন্ধকারে ক্রমশঃ নিমজ্জ্বমান এবং নিমজ্জ্বিত বান্দাদের মুক্তির দূত স্বরূপ, পৃথিবীর সব কিছুর জন্য রহমত হিসেবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন চির আকাঙ্খিত সেই আহমাদ নামের রাসূলকে প্রেরণ করেছেন, যিনি হযরত মুহাম্মদ (সা.) নামেই উম্মতের নিকট অধিক পরিচিত। আল্লাহ বলেন “(হে মুহাম্মদ সা.) আমি তোমাকে সমগ্র মানব সমাজের জন্য সু-সংবাদদাতা ও সতর্ককারী রাসূল রূপে পাঠিয়েছি।” (৩৪ সাবা:২৮) পৃথিবীর মানুষের মুক্তির জন্য, উন্নতি ও সমৃদ্ধি জন্য একমাত্র গ্রহণযোগ্য আদর্শ রয়েছে আল্লাহর রাসূরের (সা.) জীবনে! “(হে লোক সকল!) তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ রয়েছে (৩৩ আহযাব: ২১)। মানুষের বিভ্রান্তির তমিস্রা ছিন্ন করার জন্য আল্লাহ পাক রাসূল (সা.) কে আবিভূর্ত করেন ধুধু বালুকাময় শুষ্ক মরুভূমি আরব জাহানের উম্মী জন গোষ্ঠীর মাঝে। কালামুল্লাহর ঘোষনা: “তিনিই উম্মীদের মধ্যহতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন; যিনি তাদের নিকট আবৃত্তি করেন তাঁর আয়াতসমূহ; তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হেকমত; ইতোপূর্বেতো তারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে।” [সুরা জুমু’আ : ২] অবিশ্বাসীরা যখন সন্দেহ পোষণ করল যে, আমাদের মুক্তির দূত রাসূল কিভাবে আমাদেরই মধ্য হতে আসবে? এটা কি অবাস্তব কিংবা অবান্তর নয়? জবাবে আল্লাহপাক দৃঢ়তার সাথেই ঘোষণা করলেন: ‘অবশ্যই তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের নিকট রাসূল আগমন করেছে” [সূরা আত-তাবওবা : ১২৮]
বিশ্ব নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (স.) ছিলেন সাইয়্যেদুল মুরসালীন। তিনি ছিলেন পৃথিবীতে আগমনকারী সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.) দের আনিত দ্বীনের পূর্ণতা বিধানকারী, তিনি ছিলেন নবুয়তী ধারার সর্বমেষ নবী ও রাসূল। কুরআনের স্বাক্ষ্য হচ্ছে: “মুহাম্মদ (স.) তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন, বরং সে আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ। [সূরা আল আহযাব : ৪০] মুহাম্মদ (সা.) খাতামুল আম্বিয়া হওয়ার কারণে কিয়ামত পর্যয়ন্ত নতুন কোন ওহী আসবেনা, নতুন কোন বিধান আসবেনা, নতুন কোন শরীয়তও হবে না। মানব জাতির মুক্তির সনদ আল কুরআন পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত অবিকল থাকবে। জগতের মানুষের জন্য বিকল্পহীন আদর্শ হিসেবে মহানবীর জীবন ও কর্ম কিয়ামত পর্যন্ত অটুট থাকবে। এজন্য কাতামুর আম্বিয়ার সীরাত বেশি বেশি অধ্যয়ন করা প্রয়োজন্
রাসূল (সা.) কে প্রেরণের উদ্দেশ্য :
আল কুরআন অধ্যয়ন করলে, নবী (সা.) এর সীরাত অধ্যয়ন করলে রাসূর (সা.) কে প্রেরণের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায়। চিরন্তন সত্যের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, মানব জাতির চরম ও পরম বন্ধু, মানবতার সু-মহান শিক্ষক, নবীকুল শিরোমনী, মানব সভ্যতার শ্রেষ্ঠতম সমর নায়ম ও রাষ্ট্র নায়ক, সাইয়্যেদুল কাওনাইন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনী বা সীরাতের অতীত, বর্তমান ভবিষ্যত, স্থান, কাল পাত্র ভেদে সকলের জন্য আদর্শ রয়েছে। দুগ্ধপোষ্য শিশু, বাড়ন্ত কিশোর, দুরন্ত তরুণ, উদ্যমী যুবক, সংগাত মূখর সমাজের চিন্তাশীল বাসিন্দা, অভাবে নিষ্পোষিত মানুষ, আনুগত্যশীল শ্রমিক দায়িত্ববান গৃহস্বামী, পরিশ্রমী ব্যবসায়ী, প্রতিবাদী মানুষ, ধৈর্যশীল মানুষ, সমাজ গবেষক, অর্থনীতিবিদ, বিপ্লবী, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, বিচারপতি, রাষ্ট্র প্রধান, সেনাপতি, ইত্যাদি শত উদাহরণ দেয়া যাবে আল্লাহর রাসূলের আদর্শ যাদের জীবনকে শুধু আলোকিতই নয় সফল ও সার্থকও করবে, যে সফলতা কোনদিন কেড়ে নেয়া হবে না। খাতামুল আম্বিয়ার সীরাত এত বিশাল ও বিস্তৃত যে একটি প্রবন্ধ কিংবা গ্রন্থে তার সূচী আলোচনা করাও সম্ভব নয়। আজকের প্রবন্ধে রাসূলে আরাবীর আগমনের উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে কিছু সীরাত আলোচনা করা হবে। প্রধানত ৩টি উদ্দেশ্যে রসূল (সা.) কে প্রেরণ করা হয়েছে ঃ
এক. মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা, সু-সংবাদদান ও সতর্ক করা। উদ্দেশ্য, এর মধ্য দিয়ে আল্লাহর বান্দাদেরকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে দেয়া কারণ স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক হলেই সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য অজর্ন হবে। কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে “আমি তোমাকে সত্যসহ শুভ সংসবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।” [সূরা আল বাকারা-১১৯৮] “হে নবী! আমিতো তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে এবং সু-সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ রূপে।
[সূরা আল আহ্যাব : ৪৫-৪৬]
আল্লাহ রাসূল (সা.) কে উম্মতের মাঝে নিজ বিবেক বুদ্ধি দ্বারা হিদায়াত ও সতর্ক করতে পাঠান নি, বরং এ গুরু দায়িত্ব সু-চারুরূপে পালন করার জন্য তাঁর প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন এবং ওহী প্রেরন করেছেন, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন- “কত মহান তিনি, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছেন যাতে যে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে।” [সূরা আল ফুরকান-১]
“তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট কিতাব নাযিল করেন তোমাদেরকে অন্ধকার হতে আলোতে আনার জন্য।” [সূরা আল হাদীস-৯] আজকের সময়ে নবীজীর এই কাজ চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি আমরা উম্মতে মোহাম্মদী। তাই আমাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সার্থে পালন করা দরকার।
দুই. মানুষকে আল্লাহর আয়াত শোনানো, তাদেরকে পবিত্র ও সংশোধন করা, আল্লাহর কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান। ইরশাদ হচ্ছে: “আমি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি, যে আমার আয়াতসমূহ তোমাদের নিকট তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পরিশোধিত করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় আর তোমরা যা জানতেনা তাও শিক্ষা দেয়।” [সূরা আল বাকারা : ১৫১] জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিস্তৃত রহস্যময় জগতের দ্বার উম্মোচিত হয়েছে কুরআন হাদীসের অফুরন্ত ভান্ডার হতে। মানুষের তাবৎ বিভ্রান্তি অপনোদনের শিক্ষা দিয়ে গেছেন আল্লাহর রসূল তাঁর কর্মময় সংক্ষিপ্ত জীবনে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আবির্ভাবের পর তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মু’মিনদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক বলেন : “আল্লাহপাক মু’মিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য হতে তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন; যিনি তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট তিলাওয়াত করেন, তাদের পরিশোধন করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন; যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে ছিল।” [সূরা আলে ইমরান : ১৬৪] অতএব, ব্যক্তিগতভাবে একটি সংশোধিত সংশোধিত জীবন গড়ার জন্য এবং সামষ্টিকভাবে সংশোধিত সমাজ গড়ার জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। জ্ঞান আমাদের কাজ করে যেতে হবে। জ্ঞান মু’মিনের হারানো সম্পত্তি। জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং তথ্য প্রযুক্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য আমাদের প্রর্চেষ্টা চালাতে হবে। এতে করে নবী জীবনের মিশনের সাথে একাত্মতা হবে।
তিন. তাগুতকে অস্বীকার করা, তাগুতের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং আল্লাহর দ্বীনকে গালেব করা। কুরআন পাকে ইরশাদ হয়েছে “তিনিই তাঁর রাসূলকে পথ-নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন অপর সমস্ত দ্বীনের উপর তাকে বিজয়ী করার জন্য।” [সূরা আল ফাত্হ : ২৮]
“তিনিই তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ অন্য সকল দ্বীনের উপর তাকে জয়যুক্ত করার জন্য; যদিও মুশরিকগণ তা অপছন্দ করে।” [সূরা আস্ সাফ : ৯]
রাসূলে আকরাম (সা.) আনীত সত্য দ্বীন ইসলামের বাইরে সকল মতাদর্শ, নির্দেশনা, উপাস্য সবই তাগুত। যারা তাগুত থেকে দূরে থাকবে তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলছেন : “যারা তাগুতের দাসত্ব করা থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহর অভিমুখী হয় তাদের জন্য রয়েছে সু-সংবাদ।” [সূরা আল-যুমার : ১৭] অন্যদিকে মুখে ঈমানদার দাবীদার কিন্তু বাস্তবে তাগুতের অনুসারীদের লক্ষ্য করে আল্লাহ বলছেন : “আপনি কি তাদের দেখননি যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি নাযিল হয়েছে তারা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতিও বিশ্বাস করে। তারা বিচার-ফায়সালাকে তাগুতের কাছে নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে যাতে তারা তাগুতকে অস্বীকার করে।” [সূরা নিসা : ৬০]
অতএব তাগুত হল আল্লাহ বিমূখী শক্তি যার ইবাদত করা হয়, যাকে মান্য করা হয় এবং যার একনিষ্ঠ অনুসরণ করা হয়, যার নিকট বিচার-ফয়সালা চাওয়া হয়। তাগুত হলে সেই শক্তি যে বা যারা আল্লাহর বিদানকে বাদ দিয়ে অন্য বিদান বানায়, অত:পর অন্যকে তা পালন করতে উদ্বুদ্ধ করে কিংবা বাধ্য করে।
আভিধানিক অর্থে “যে বা যারা আনুগত্যের ক্ষেত্রে সীমালংঘন করে তারাই তাগুত।” আর মানুষের ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন ছারা অন্য আইনের প্রণয়ন ও অনুসরণ তাগুত হওয়ার সীমানা। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন- “যারা কাফির তাদের বন্ধু হলো তাগুত এবং ঐ তাগুত তাদেরকে হেদায়েতের আলো থেকে সরিয়ে গোমরাহীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়”। [সূরা বাকারা-২৫৭]
এ আয়াতে তাগুত এবং জুলমাত শব্দক বহুবচনে উল্লেখ করার রহস্য হচ্ছে- গোমরাহীর পথ অসংখ্য। অর্থাৎ তাগুত যেমন অসংখ্য তার পথ এবং পদ্ধতিও অসংখ্য। অন্যদিকে আল্লাহ এক তাঁর পথও এক। মানুষের নফস, পরিবারের পরিবেশ, বাপ-দাদা থেকে চলে আসা নিয়ম কানুন, মুর্তি-কবর, জীন-শয়তান কিংবা কাল্পনিক শক্তি, ক্ষেত্র বিশেষে সমাজের জীবিত কিংবা মৃত আলেম পন্ডিত, নেতা) নেত্রী, পীর-ফকির, মানুষের মনগড়া আইন ও বিচার পদ্ধতি ইত্যাদি বহুবিদ বিষয় তাগুতের অনুষঙ্গ হিসেবে সমাজে বিদ্যমান। উপরোক্ত সবগুলো বিষয়কে তাগুতের আলোচনায় নিয়ে আসলেও শোষোক্ত বিষয়টি পূর্বের মুসলিম গবেষক ও আইনজ্ঞরা বিস্তারিত আলোচনায় আনেন নি। এর কারণ হচ্ছে মদীনায় নবী (সা.) নেতৃত্বাধীন ইসলামী খিলাফাহ, তৎপরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীন এবং পরবর্তীতে উমাইয়া আব্বাসীয়া থেকে ১৯২৪ সন পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের কোথাও আল্লাহর আইনের বাইরে কোন বিছার ব্যবস্থা বা অর্থ ব্যবস্থা ছিল না। তাই এসব বিষয় যে তাগুত হয়ে দঁড়াতে পারে এ আশঙ্কা মুসলিম বিশ্বে ছিলোনা বললেই চলে। মুসলিম রাজা-মাদশাহগণ ক্ষমতার দ্বন্ধ নিয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই করেছেন। কেউ কেউ শোষণ-জুলুম করেছেন, নিজেরা অন্যায় ও পাপের সাথে জড়িয়েছেন, কেউ কেউ ভোগ-বিলাসিতায় হাবুডুবু খেয়েছেন কিন্তু কখনোই আল্লাহর বিধানে হাত দেয়নি বা দেয়ার সাহস করেনি। কাজ, কারবারে, বিচারলয়ে কিংবা বাজারে কুরআন-সুন্নাহর দেয়া সীমাকে তারা অতিক্রম করেননি। ফলে ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে মুসলিম বিশ্বের কোথাও মুদ্রাস্ফীতি কিংবা অর্থনৈতিক সংকট তৈরী হয়নি তেমনি চুরি-ডাকাতি, হত্যা-খুন, ধর্ষন, মাদক-নেশা ইত্যাদি সামাজিক ব্যধিসমূহ কখনোই মহামারি আকারে দেখা দেয়নি। তাতারিরা র্যখন মুসলিম বিশ্বের প্রায় সর্বাংশ দখল করেছিল, তারা ইয়াহুদী-খ্রীস্টান-মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থের সংমিশ্রনে ‘ইয়াসার আইন’ নামে আইন প্রনয়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। মুসলিম বিশ্বের জনগণ ও আলেমদের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে এ উদ্যোগ বাতিল হয়ে যায়। তাতারদের নিজস্ব কোন আইন-কানুন-সভ্যতা ছিলনা। বাধ্য হয়ে ক্ষমতা বৃত্তের সাথে জড়িত তাতাররা দেশ পরিচালনার জন্য ইসলামী আইনের উৎস কুরআন সুন্নাহ অধ্যয়ন করে। ইসলামকে অধ্যয়ন করতে গিয়ে পরবর্তীতে নিজেরা মুসলমান হয়ে যায়। ভারতবর্ষের মোঘল সম্রাজ্য এরাই পরিচালনা করে।
শেষ কথা
বস্তুত : ১৯২৪ সালে তুর্কি খিলাফতের বিলোপের পর মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র প্রকৃত তাগুত তার আইন ও বিধানদাতা অর্থে সমাজ ও রাষ্ট্রে আসন গেড়ে বসল। অব্যাহতভাবে আজকের জীবন সমাজ ও রাষ্ট্র সে তাগুতের অনুসরণ করে চলছে।
আজকের বিশ্বের মুসলমানদের মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে, হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে হলে গোটা পৃথিবীতে শান্তি নিশ্চিত করতে হলে তাগুতের উৎখাত করতে হবে। রাসূল (সা.) পূর্ণাঙ্গ অর্তে তাগুতের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন এবং আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করে রেখে গিয়েছিলেন। তাঁর কালজয়ী অনুপম আদর্শ-আখলাক ও চরিত্রের চুম্বকার্ষণ বিশ্ব সভ্যতাকে অমানিশার ঘোর অন্ধকার হতে সাফ্যলের আলোতে নিয়ে এসেছিল। তাঁর এই আদর্শ আগামী দিনের মতই আধুনিক হয়ে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। আল্লাহর রসূল (সা.) বলে গিয়েছেন “আমি তোমাদের নিকট দুটি জিনিষ রেখে যাচ্ছি আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ। যতদিন তোমরা এ দুটি জিনিষ আঁকড়ে রাখবে ততদিন পথভ্রষ্ট তহবেনা। অতএব, আসুন আমাদের ইহজীবন এবং চিরস্থায়ী জিন্দগীর সফলতা নিশ্চিত করার জন্য তাগুতের আনুগত্য পরিহার করে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করি। জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রে আল্লাহর বিধান এবং তাঁর রাসূলের আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেদের নিয়োজিত করি।