somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোন দিন না আবার আমাকেও বাউল না বলে বাল ডাকা শুরু করেন।

০২ রা জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেলা সাড়ে এগারোটা।
ডান চোখের কয়েকটি টেস্ট করানোর পর মা কে নিয়ে ফার্মগেইট এর ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের ১ নং কাউন্টারে অপেক্ষা করছি ফাইল সংগ্রহ করার জন্য। প্রায় দশ মাস আগে উনার বাম চোখে লেন্স লাগানোর পর এবার ডান চোখে লেন্স ফিট করানোর জন্য সকাল সকাল গিয়ে হাজির হলাম।
কর্তব্যরত কয়েকজন নার্স কিছুক্ষণ পর পর ভেতর থেকে এসে রোগীদের নাম ধরে হাক ডাক দিচ্ছেন। যাদের নাম ডাকা হচ্ছে তাদের অনেককেই দেখলাম প্রাইমারি স্কুলের ম্যাডাম এর রোল কলের সময় "ইয়েস ম্যাডাম" বলে হাত তোলার মতো ভঙ্গি করছেন। নার্সগণ রোগীকে ফাইল দিয়ে পরবর্তী ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছেন।

রোগীদের নানান চেহারা, আচার আচরণ, সেই সাথে তাদের সঙ্গে আসা আত্মীয় পরিজনদের বৈচিত্রময় কার্যকলাপ বসে বসে দেখছি আর মজা পাচ্ছি। পিংক কালারের এ্যাপ্রোণ পরিহিতা একজন নার্স এসে গলার আওয়াজ স্বাভাবিক এর চাইতে একটু বেশী চড়া করে ডাকলেন- "এ্যাই... মজুর আলম আছেন.....মজুর আলম.........।" কেউ এবার হাত তুলে ইয়েস ম্যাডাম বললো না। নার্স আবারো নির্দিষ্ট সুরে ডাক দিলেন- "এ্যাই... মজুর আলম আছেন.....মজুর আলম.........।" এবারো কারো কোন সাড়া নেই। অবচেতনে আমার মনের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিল মজুর আলম আবার কি ধরণের নাম। তার আগে অবশ্য 'মানিকজান' নামে এক বয়স্ক মহিলা ভেতরে ঢুকেছেন। ষাটোর্ধ একজন মহিলার নাম মানিকজান শুনে আমি ভাবতে লাগলাম আচ্ছা, যৌবনকালে উনার স্বামী উনাকে কি নামে ডাকতেন মানিক বলে, নাকি জান বলে। আমার সিক্সথ সেন্স বললো- উনার স্বামী উনাকে 'জান' বলেই ডাকতেন। মাঝে মধ্যে আদর করে মানিক বলেও ডাকতেন বোধহয়। তবে শুধু মানিকের ভেতর একটা পুরুষ পুরুষ ভাব আছে।

হঠাৎ চিৎকার চেচামেচি শুনে তাকিয়ে দেখি বয়্ষ্ক একজন লোক লাঠিভর দিয়ে দাড়িয়ে নার্সের সঙ্গে ঝগড়া করছেন। মনোযোগ দিয়ে তাকাতেই বুঝলাম এতক্ষণ নার্স "এ্যাই... মজুর আলম আছেন.....মজুর আলম.........।" বলে যাকে খুজছিলেন ইনিই তিনি। কিন্তু সমস্যা হলো উনি ক্ষেপেছেন উনার নাম মজুর আলম কেন ডাকা হলো। উনার নাম হচ্ছে মঞ্জুর আলম। নার্স বারবার বুঝানোর চেষ্টা করছেন- চাচা এখানে ফাইলে লেখা আছে 'এম-ও-যেড-ইউ-আর' মানে মজুর আলম, তাই আমি মজুর আলম ডেকেছি। উত্তেজিত চাচার এক কথা মজুর আলম কারো নাম হতে পারে নাকি? যে ডাক্তার কিংবা নার্স উনার নাম লিখতেই ভুল করেছেন তিনি তো চিকিতসা করতে গিয়েও ভুল করবেন। নিজের নাম এ ভুল বানান এবং পরবর্তীতে সেই ভুল বানানে মজুর আলম ডাকাতে চাচা এতই ক্ষেপছেন যে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন এই হসপিটালে আর চিকিতসা করাবেন না। চলে যেতে যেতে বললেন- আরে আমার নাম কি এতই সস্তা? আমার জন্মের পর আমার বাবা মা অনেক কষ্ট করে অনেক খুজে এই নাম বের করেছেন।
তাকিয়ে দেখি আশপাশের লোকজন চাচার কর্মকান্ডে মিটিমিটি হাসছেন।

তবে চাচার শেষের কথা টা আমার ভাল লেগেছে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি- নবজাতকের নাম রাখা আর বিয়ের উপযুক্ত ছেলের বিয়ে ঠিক করা অনেক কঠিন। প্রথমটা আমার আত্মীয়-স্বজনদের বাচ্চা কাচ্চার নাম রাখার বেলায় দেখেছি, আর দ্বিতীয়টা আমার নিজের জন্য মেয়ে খুজতে গিয়ে অনুধাবন করেছি। অথচ, বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনদের এত কষ্ট করে ঠিক করা নাম আমরা কি সহজেই না বিকৃত করে ডাকছি। যেমন কারো নাম যদি হয় দেলোয়ার, আমরা তাকে অবলীলায় দেইল্যা ডাকতেছি, সেলিম কে সেইল্যা, আবুল কে আবুইল্যা ইত্যাদি হরেক রকম বিকৃত নাম। অথচ এইসব নামগুলো কে সুন্দর করে ডাকতে আমাদের কোন পয়সা খরচ হয় না। তবু আমরা বিকৃত করে ডাকতেই পছন্দ করি বেশী।

অন্যদিকে বিকৃত হতে হতে একটা নাম কেমন হতে পারে তার বর্ণনা দিচ্ছি আমাদের পুরনো বাড়ির এক জেঠাতো ভাইয়ের নাম দিয়ে। বয়সে আমাদের অনেক বড় ওই জেঠাতো ভাইয়ের প্রকৃত নাম 'ফখরুল ইসলাম'। কিন্তু এই ফখরুল ইসলামকে বাড়ির সবাই ডাকেন 'হকের এসলাম' বলে। আমরা ছোটরা শ্রদ্ধা করে উনাকে ডাকি 'হকু ভাই'। আর এলাকায় উনার সমবয়সী কিংবা উনার শত্রু শ্রেণির লোকেরা ডাকেন 'হইক্কা' বলে। মজার ব্যাপার হলো উনাকে ফখরুল ইসলাম বলে ডাকতে আজ পর্যন্ত আমি কাউকে শুনি নাই।

কোন ভাল কাজ করতে না পারি, আসুন অন্তত সচেতন হয়ে কাউকে বিকৃত নামে না ডাকি। এবার নাম নিয়ে একটা গল্প বলে শেষ করতে চাই।

এক ভদ্রলোক গেছেন মুদি দোকানে। তিনি দোকানদারকে জিজ্ঞেশ করলেন
- দাদা, আপনার দোকানে কি চাউল আছে?
দোকানী বললো আছে।
- তিন কেজি চাউল দিন। ডাউল আছে?
- আছে।
- আধা কেজি ডাউল দিন।
দোকানী চাল আর ডাল মেপে প্যাকেট করে ভদ্রলোকের হাতে দেয়ার পর দাম মিটিয়ে ওই ভদ্রলোক চলে যাচ্ছিলেন। এমন সময় পেছন থেকে দোকানী ডাক দিলো-
- আচ্ছা ভাই একটা কথা জিজ্ঞেশ করার ছিল
- কি কথা?
- আপনি কি সংস্কৃত কিংবা বাংলার শিক্ষক? যেভাবে চাল-ডালকে চাউল, ডাউল উচ্চারণ করছিলেন
- না ভাই। আমি একজন 'বাউল'। আপনারা যেভাবে চাউল ডাউল থেকে 'উ' বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত করে চাল ডাল বলা শুরু করেছেন, কোন দিন না আবার আমাকেও বাউল না বলে বাল ডাকা শুরু করেন। সে জন্য সচেতন হয়ে চাউল ডাউল বলাটা জারি রেখেছি।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×