somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সীতাকুণ্ড,মিরসরাই ট্রেক,ভবঘুরে জীবনের গল্প...(তৃতীয় পর্ব)

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরদিন ভোর ৫টায় উঠে পড়লাম আমরা।কালকের সারাদিনের ট্রেকিংএর কথা মনে পড়ল আবার।কাল রাত থেকেই টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে।আজ সকালেও আছেন তিনি আমার জন্য।তার মানে সবার মন খারাপ।বৃষ্টিতে ট্র্যাকিং করা খুব কষ্টকর।আর পাহাড়ে হলেতো রীতিমতো অসম্ভব।যদিও বৃষ্টি দেখে আমার মনে রোদের ঝিলিক(সেই গল্প আগেই করেছি)।হালকা কিছু নাস্তা করে প্রস্তুত হয়ে গেলাম নতুন দিনের নতুন প্রত্যাশায়।

নাপিত্তাছরা



আমরা প্রথমেই যাবো নাপিত্তাছরার খোঁজে।এ চঞ্চলা হরিণীর সাক্ষাত এখনও খুব বেশি পাগলের ভাগ্যে জোটেনি।তাই একটা স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন অপূর্ব মনুমুগ্ধকর ট্রেইল আশা করছি।আমরা নয়দুয়ারি(স্থানিও ভাষায় নয়দুয়াইরা) পর্যন্ত সিএনজি নিয়ে আসলাম।হালকা নাশতা করে পুব দিকে হাঁটা শুরু করলাম।আমাদের গাইড মিজান ভাই আগে আগে তার পিছনে আমরা হেমিলিওনের বাঁশিওয়ালার মতো চলছি এক অদ্ভুত বাঁশির তানে।ঘন সবুজের পাহাড় কে সাথে নিয়ে এগুচ্ছি আমরা।এরই মধ্যে আমরা পেড়িয়ে আসছি উজাইন্যা পাড়া গ্রাম।আর একটা গ্রাম যার নাম নাপিত্তাপারা,একটা আদিবাসি পল্লী,স্থানীয় বাঙ্গালীরা যাদেরকে টিপরা বলে।ইতিমধ্যে আমরা ঝিরিপথের দেখা পেয়ে গেলাম।পাথুরে নদী,সুদূর ঝরনা থেকে নেমে আসা সেই ট্রেইল টা যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি খুব রিস্কি।পাথর বিছানো পথের ফাঁকে ফাঁকে গভীর কুম যা এড়িয়ে সাবধানে এগুতে লাগলাম।সামনেই পেয়ে গেলাম আজকের দিনের প্রথম ঝরনা টিপরাখুম।কিছুক্ষন ঝাপাঝাপি করলাম ওখানে তারপর আবার বেড়িয়ে পড়লাম চাঙ্গা হয়ে।









এবার উঠতে হবে পাহাড় বেয়ে।বেশ কঠিন একটা ট্রেইল সামনে।টিপরাখুমের একদম নাকের ডগা দিয়ে বেড়িয়ে পাহাড় বেয়ে উঠা শুরু করলাম।মিজান ভাই সবার আগে তার পিছনে আমরা উঠতে থাকলাম,সম্বল বলতে গাছ থেকে নেমে আসা দড়ির মতো লতা গুল্ম যেগুলোকে দড়ির মতো ধরে ধরে উপরে বেয়ে উঠে গেলাম।সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো আরেক বিস্ময়।চারপাশে ঘন সবুজ পাহাড়ের সারি আর তার মাঝখান দিয়ে নেমে এসেছে স্বচ্ছ ঠাণ্ডা জলধারা।চমৎকার এই ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে চললাম।মাঝে মাঝেই সাক্ষাত পাচ্ছি ছোট বড় বেশ কিছু কুমের।২ফিট,৪ফিট থেকে শুরু করে ৮ফিট পর্যন্ত গভীর এসব কুম।ভাজ্ঞিস সাঁতার জানতাম তাই কোনটাই আমার প্রেমময় স্পর্শ থেকে বঞ্ছিত হয়নি।কখনও কখনও বড় বড় পাথড় আমাদের রাস্তা আগলে দাড়ায়।তাদের সাথে সমঝোতা করে তবেই আমাদের এগুতে হয়েছে পাথর বেয়ে অথবা ঘুর পথে পাহাড় ঘুরে।ইতিমধ্যে ছোট বড় বেশ কিছু ক্যাসকেড পেড়িয়ে আসলাম আমরা।রূপসী এই ট্রেইল ধরে আজীবন হাঁটা যায়,মনে হচ্ছিল যেন এক স্বর্গোদ্যানের পুষ্পদ্বার আমাদের জন্য অপেক্ষমান,আমরা সেই পথে এগুচ্ছি।দুই পাশের নির্জন পাহাড় ঘেরা জঙ্গল,অদ্ভুত রকম নির্জনতা,শিহরণ খেলে যাচ্ছিলো সমগ্র শিরা উপশিরায়।পানির উপর আমাদের পায়ের ছলাত ছলাত শব্দের অনুরনন চলছে যেন অনন্য ছন্দময়তায়।যে কোন কম্পোজার এই শব্দ পেলে পাগলের মতো লুফে নিত।প্রকৃতি থেকে পাওয়া এর চেয়ে ভালো আবহসঙ্গীত আর কি হতে পারে!এতক্ষনে আমরা পৌঁছে গেছি স্বর্গোদ্যানের সম্মুখ দরজায়।সামনেই সুউচ্চ পাহাড় বেষ্টিত অপরুপ সুন্দরী নাপিত্তাখুম ঝর্ণা।আমাদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাসের সামনে নিরব প্রকৃতি যেন হঠাৎ প্রান পেল।অনেকক্ষণ ধরে চলল দাপাদাপি ঝাপাঝাপি।উচ্ছাসের ফোয়ারা যেন সবার চোখে মুখে।সেই সাথে চলছে ফটো তোলার বিরামহীন প্রতিযুগীতা।







এবার ফেরার পালা।আজকের মধ্যে আরো অনেকগুলা ঝর্ণা দেখতে হবে।সময় খুব কম।আবার আসব কথা দিয়ে আগের রাস্তায় নেমে আসলাম।কিছুদুর আসার পর আমাদের কাঙ্ক্ষিত ঝর্ণার রাস্তাটি বামে চলে গেছে।বেশ দুর্গম কিন্তু চমৎকার এই ট্রেইল।কারন এখনও খুব বেশি মানুষের পা পরেনি এই রাস্তায়।অল্প কিছু দুরন্ত অভিযাত্রী কেবল এই ঝর্ণার সন্ধান পেয়ে দেখা করে গেছেন।আমার জানা মতে ২টি গ্রুপ আসছে আমাদের আগে এখানে।এই ট্রেইলের পাথরগুলোও বেশ বড় বড়।পুরো রাস্তা আগলিয়ে যেন দাঁড়িয়ে আছে।তাকে টপকে কাউকে যেতে দেবেনা সে।এক অহংকারী পাহারাদারের মতো বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মাঝে মাঝে ঝিরিপথ এতোটাই দুর্গম আর ভয়ঙ্কর যে আমাদের পাহাড় বেয়ে তারপর আবার নামতে হয়েছে আগের রাস্তায়।আমরা অবশ্য খুব বেশি কিছু মনে করিনি তাতে।সমুদ্রে যে পেতেছে শয্যা শিশিরে তার কিসের ভয়।নতুন কিছু পাওয়ার আশায় আমরা তখন বেশ উত্তেজিত রাখাল বালকের মতো পাহাড়ের গন্ধ শুঁকে শুঁকে চলেছি।চলার পথে আমরা এমন কিছুর দেখা পেয়েছি যা সত্যি ভয় ধরানোর মতো।কিছু গাছে আমরা দেখেছি বিভিন্ন ধরনের খাবার বেঁধে রাখা।মনে হয় কাউকে খেতে আমন্ত্রন জানিয়ে এভাবে বেঁধে রেখে চলে গেছে।এই জনমানবশূন্য নিরব গহিন বনমাঝে কে কাকে এভাবে নিমন্ত্রন করতে পারে ভেবেই গা শিউরে ওঠে।যেখানে গাছ থেকে পাতা ঝরে পরলেও তার শব্দ পাওয়া যায় সেখানে অপ্রত্যাশিত কিছু দেখা মানেই অজানা কিছুর শুভাগমনের বিপুল সম্ভাবনা।আমরা অবশ্য ভেতরে ভেতরে কিছুটা ভয় পেলেও কেউ কাউকে বুজতে দিচ্ছিনা।এমন ভাব করছি যেন নতুন কিছু দেখার আশায় ,নতুন কিছুর অভিজ্ঞতার নেশায় আমরা প্রতিক্ষমান।





এভাবে ৩৫ মিনিটের মতো হাঁটার পর পেয়ে গেলাম আমাদের অতি আকাংক্ষিত সেই ঝর্ণার খোঁজ।বাঘবিয়ানি,হুম তখনও পর্যন্ত আমরা তার নাম জানতাম না।ভাবছিলাম আমরাই একটা নাম দিয়ে দেই।আমরা বেশ কিছু নাম প্রস্তাবও করে ফেললাম নিজেদের মধ্যে।আমাদের গাইড জানালো স্থানীয় মানুষজন একে বান্দইরা ঝর্ণা বলেই ডাকে।পরে জানলাম এর নাম বাঘবিয়ানি ঝর্ণা।এক লাফে নেমে পড়লাম বাঘবিয়ানির নিচের কুমে।বেশ গভীর সে কুম।এখনও খুব বেশি মানুষের স্পর্শ পায়নি সে তাই খুব লাজুক ভঙ্গিতে আমাদের অভ্যর্থনা জানালো।আমরাও ঠাণ্ডা কোমল সেই আদুরে ছোঁয়ায় এতোটাই মজে গেলাম যে কারও ওঠার নাম নেই।ভুলেই গেছি এর পরে আরও অনেক সুন্দরীতমা অপেক্ষমান আমাদের জন্য।তাই লোভের সমুদ্রে লোভী আমরা বাধ্য হয়েই বিদায় জানালাম তাঁকে।



চলবে...

প্রথম পর্ব এখানে:
Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব এখানে:
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২২
২৯টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×